Logo
Logo
×

জাতীয় বাজেট ২০২৫-২৬

মার্কিন শুল্কনীতি বড় ঝুঁকি

রপ্তানি বাজারে নেতিবাচক প্রভাবের শঙ্কা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ দেশের সার্বিক অর্থনীতির জন্য প্রধান তিনটি ঝুঁকি শনাক্ত করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে-দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসা, মার্কিন প্রশাসন কর্তৃক আরোপিত অতিরিক্ত শুল্কের নেতিবাচক প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে পড়ার আশঙ্কা এবং ডলারের বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালুর কোনো নেতিবাচক প্রভাব আপাতত বাজারের ওপর না পড়া। এসব ঝুঁকি মোকাবিলা করে দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বৈষম্যহীন ও টেকসই ভিত্তি নিশ্চিত করা এখন সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।

এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা, কর্মসংস্থান বাড়িয়ে মানুষের আয় বাড়ানো এবং মূল্যস্ফীতির হার কমানোর নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়, সাম্প্রতিক মাসগুলোয় মূল্যস্ফীতি হ্রাস পাওয়ার প্রবণতা দেখা গেলেও তা এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বাজেটে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়, চলতি জুনের মধ্যে এ হার ৮ শতাংশের মধ্যে নেমে আসবে। এখন এ হার ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে। আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে ৬ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

এ লক্ষ্যে প্রস্তাবিত বাজেটে নিত্যপণ্য, শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে কর হ্রাস করা হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের দাম কমার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এছাড়া বাজারে টাকার প্রবাহ বৃদ্ধিজনিত কারণে যাতে মূল্যস্ফীতি না বাড়ে, সেদিকে নজর রাখা হয়েছে। এ কারণে আগামী অর্থবছরের বাজেট সংকোচনমুখী করা হয়েছে। জুলাইয়ে নতুন অর্থবছরের মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে। সেটিও হবে সংকোচনমুখী। ফলে বাজারে টাকার প্রবাহ কমবে। জ্বালানি তেল আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব উৎপাদন, পরিবহণ ও অন্যান্য খাতেও পড়বে। এতে মূল্যস্ফীতির হার কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে বৈশ্বিক, জলবায়ু ও পণ্যের দাম পরিস্থিতিতে এ খাতে ঝুঁকি আসতেও পারে। গত এপ্রিলে মার্কিন প্রশাসন কর্তৃক আরোপিত অতিরিক্ত শুল্কের নেতিবাচক প্রভাবও দেশের অর্থনীতির ওপর পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদিও বাড়তি শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে এখন আলোচনা চলছে।

এছাড়া সম্প্রতি আইএমএফ-এর চাপে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার চালু করেছে। বাজারে ডলারের প্রবাহ বেশি থাকায় এখন এর কোনো নেতিবাচক প্রভাব আপাতত বাজারের ওপর পড়েনি। শিগ্গিরই পড়ার সম্ভাবনা না থাকলেও এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হচ্ছে।

বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালুর আগে ডলারের সর্বোচ্চ দাম ছিল ১২২ টাকা। এখন তা বেড়ে ১২৩ টাকায় উঠেছে। এতে আমদানিতে খরচ বেড়ে যাওয়ার আশাপাশি আমদানি ব্যয়ও বেড়ে যাবে। ফলে আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যাবে।

এসব ঝুঁকি মোকাবিলা করে দেশের অর্থনীতি সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এর মাধ্যমে অর্থনীতিতে একটি বৈষম্যহীন ও টেকসই ভিত্তি নিশ্চিত করা এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।

এতে বলা হয়, আপাতত প্রবৃদ্ধির গতি বৃদ্ধির পরিবর্তে অর্থনীতির ভিত মজবুত করার দিকে সরকার অধিকতর মনোযোগ দিয়েছে। এই শক্তিশালী ভিতই হবে আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণের সোপান। আগামীর সেই বাংলাদেশে সবার জন্য মানসম্মত জীবন এবং সব স্তরে বৈষম্যহীন ব্যবস্থার নিশ্চয়তা প্রদান করাই হবে মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্য পূরণে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা।

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, সবার সম্মিলিত প্রয়াসে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের জন্য এক অনুকরণীয় আলোকবর্তিকা। এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে কর্মসংস্থান বাড়ানোর বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ফলে মানুষের আয় বাড়বে। এর ফলে চড়া মূল্যস্ফীতির হারকে মোকাবিলা করা ভোক্তার জন্য সহায়ক হবে। এদিকে সরকারের গৃহীত নানামুখী পদক্ষেপের ফলে মজুরির হার ৫ থেকে ৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। প্রায় সব খাতেই মজুরির হার বাড়ছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম