অনলাইন প্রতারণা, হুন্ডি ও জুয়ার মাধ্যমে ৩৪ কোটি টাকা পাচার
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:১০ পিএম
প্রতীকী ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ৩৪ কোটি টাকার মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে ৯ সাইবার প্রতারকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। সংঘবদ্ধভাবে অনলাইন প্রতারণা করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়া, হুন্ডি কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়।
বৃহস্পতিবার সিআইডির সদর দপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, প্রতারক চক্রটি প্রথমে টেলিগ্রামে বিভিন্ন মানুষের কাছে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের প্রস্তাব দিত। পরবর্তীতে কেউ সম্মত হলে তাকে এমন একটি টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত করা হতো যেখানে ওই টার্গেটকৃত ব্যক্তি ছাড়া বাকি সব আইডি ভুয়া। সেই গ্রুপে ভুয়া আইডির পজিটিভ রিভিউ দেখে ভিকটিমরা ফ্রিল্যান্সিং কাজে সম্মত হলে তাদেরকে প্রথমে সাধারণ কিছু কাজ দেওয়া হতো এবং প্রথমবার ৮-১০ হাজার টাকা দেওয়া হতো। এতে ভুক্তভোগীর আস্থা অর্জন করা হতো, যেন মনে হয় সব ঠিকঠাক চলছে। একবার আস্থা তৈরি হলে তারা বড় প্রজেক্টের প্রলোভন দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিত।
সিআইডি জানায়, চক্রটি শুধু অনলাইন প্রতারণাতেই সীমাবদ্ধ থাকত না। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দরিদ্র ও নিরক্ষর মানুষদের টার্গেট করত। তাদের সরকারি ভাতার প্রলোভন দেখিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংগ্রহ করা হতো। এই পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ভুয়া ব্যাংক ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (বিকাশ, নগদ) অ্যাকাউন্ট খোলা হতো। অনেক সময় মানুষ জানতও না যে তার নামে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। এরপর এই অ্যাকাউন্টগুলো ব্যবহার করা হতো টেলিগ্রামে প্রতারণা, অনলাইন জুয়া ও হুন্ডির লেনদেনে। ভুক্তভোগীর জমা অর্থ ধীরে ধীরে চক্রের মূল সদস্যদের কাছে স্থানান্তরিত হতো।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, চক্রটি দেশের অসাধু ব্যবসায়ী ও ঘুস-দুর্নীতির অর্থও হুন্ডি এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে বিদেশে পাঠাত। অর্থ স্থানান্তরের প্রক্রিয়াটি ছিল অত্যন্ত জটিল। চক্রটি একাধিক ভুয়া এবং পরিবারের সদস্যদের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ছোট ছোট লেনদেনের মাধ্যমে প্রকৃত উৎস লুকিয়ে রাখত। এতে বাইরের কেউ সহজে বুঝতে পারত না কতটা অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। পরিবারের সদস্য ও সহযোগীরা একে অপরের অ্যাকাউন্টে পরপর অর্থ পাঠাত, যাতে সবকিছু খুবই স্বাভাবিক দেখায়। সবশেষে চক্রটি অর্জিত অর্থ ডিজিটাল হুন্ডি ও ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করত। তারা বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ডলার বা ক্রিপ্টো ক্রয় করে- তা বিদেশি ঠিকানায় স্থানান্তর করত।
এজাহারনামীয় অভিযুক্তরা হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়াল আরিফুল ইসলাম রিফাত (২৩), শরিয়তপুরের মো. ইমরান হোসেন (৩০), নারায়ণগঞ্জের মো. নুরে আলম (৩৮), মোছা. লিলি আক্তার (৫৫), মোছা. রিমি আক্তার (৩৪), রুমি আক্তার (৩৬), ডেমরার আব্দুল কাদির জিলানি (৪০), নারায়ণগঞ্জের মুহা. নেয়ামতুল্লাহ (৩০), মো. রিয়াদ (২৫)। এই মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে প্রধান হোতাদের দায়িত্বে ছিলেন একই পরিবারের সদস্যরা। চক্রের মূল নায়ক আরিফুল ইসলাম রিফাত, তার মা লিলি আক্তার, দুই বোন রিমি আক্তার ও রুমি আক্তার এবং বোনের স্বামী আবদুল কাদির জিলানী সরাসরি প্রতারণার পুরো কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন।
