Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন দলের বৈঠক

হাদির ওপর হামলা নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

হাদির ওপর হামলা নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় শনিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির নেতাদের বৈঠক -পিআইডি

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলা আগামী নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র। এর পেছনে বিরাট শক্তি কাজ করছে। এই শক্তি জুলাই অভ্যুত্থান নস্যাৎ করে দিতে চায়। অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলোর মধ্যে বিরোধের সুযোগ নিচ্ছে ষড়যন্ত্রকারীরা। এ অবস্থায় দলগুলোর নিজেদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখার বিকল্প নেই।

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় শনিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তিন রাজনৈতিক দলের বৈঠকে এসব বিষয় উঠে আসে। দলগুলো হলো-বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

দলগুলোর নেতারা জানান, গণ-অভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করার সব প্রচেষ্টা রুখে দিতে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে রয়েছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, হাদির ওপর হামলার পরিপ্রেক্ষিতে সর্বদলীয় প্রতিবাদ সভা করবে দলগুলো। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল জাবের এবং আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। বৈঠক শেষে যমুনার সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ ও নাহিদ ইসলাম। এ সময় সালাহউদ্দিন বলেন, ফ্যাসিবাদ ও সন্ত্রাসবিরোধী জাতীয় ঐক্যই হবে আমাদের শক্তি। অন্যদিকে নাহিদ বলেন, হাদির ওপর হামলায় আওয়ামী লীগ ও ভারত জড়িত থাকতে পারে।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ওসমান হাদির ওপর হামলা পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। এর পেছনে বিরাট শক্তি কাজ করছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাচন বানচাল করা। তিনি বলেন, এই আক্রমণটি খুবই প্রতীকী (সিম্বলিক)। তারা শক্তি প্রদর্শন করতে চায়। ভেস্তে দিতে চায় নির্বাচনের সব আয়োজন। এগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে। এখন পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে মনে হচ্ছে ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছে। তারা প্রশিক্ষিত শুটার নিয়ে মাঠে নেমেছে।

ড. ইউনূস বলেন, আমাদের চিন্তা করতে হবে, ভবিষ্যতের জন্য আমরা কী করতে পারি। শুধু সরকার নয়, সবাইকে শক্ত থাকতে হবে। নিজেদের মধ্যে যেন দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে না পড়ে, খেয়াল রাখতে হবে সেদিকে। রাজনৈতিক বক্তব্য থাকবে, কিন্তু কাউকে শত্রু ভাবা বা আক্রমণ করার সংস্কৃতি থেকে সরে আসতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, তবে মাথায় রাখতে হবে এটি যেন একটি নির্দিষ্ট মাত্রার মধ্যে নিয়ন্ত্রণে থাকে।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে ওসমান হাদির ওপর ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনায় সর্বদলীয় প্রতিবাদ সভা করবে রাজনৈতিক দলগুলো। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে সভা অনুষ্ঠিত হবে। তিনটি রাজনৈতিক দলই মনে করে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক ঐক্যে যাতে ফাটল না ধরে সেজন্য দলগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানো প্রয়োজন। এ ব্যাপারে দলগুলো সুদৃঢ় অবস্থান নেবে বলে জানানো হয়। এছাড়া নির্বাচনের আগে কঠোরভাবে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান পরিচালনার ওপর জোর দিয়েছেন রাজনৈতিক নেতারা। বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এই পরিস্থিতিতে আমাদের অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। পরস্পরের দোষারোপ থেকে বিরত থাকতে হবে। ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়াজ তুলতে হবে। কোনো ধরনের অপশক্তিকে আমরা বরদাশত করব না। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে যতই রাজনৈতিক বক্তব্যের বিরোধিতা থাকুক না কেন, জাতির স্বার্থে এবং জুলাইয়ের স্বার্থে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতেই হবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করার পরামর্শ দেন তিনি।

জামায়াত নেতা গোলাম পরওয়ার বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের নানা বক্তব্য একে অন্যকে দোষারোপ করার প্রবণতা বাড়িয়েছে। এর ফলে আমাদের বিরোধীরা সুযোগ পেয়েছে। আমাদের পূর্বের ন্যায় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থে আমরা একে অন্যকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেছি। জাতিকে বিভক্ত করে-এমন কথা আমরা কেন বলব? সব দলকে তাদের প্রতিশ্রুতি (কমিটমেন্ট) ঠিক করতে হবে।

বৈঠকে এনসিপি প্রধান নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকেই কিছু লোক এই অভ্যুত্থানকে খাটো করার জন্য নানা অপতৎপরতা চালিয়ে আসছে। সুসংগঠিতভাবে জুলাইয়ের বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইন চলছে। মিডিয়া ও প্রশাসনের নানা স্তরে এই কাজ হচ্ছে। নির্বাচনের পর যারা ক্ষমতায় আসবে, তারাও এর ভুক্তভোগী হবে। কেউই একা সরকার চালাতে পারবে না। তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন ন্যারেটিভ তৈরি করা হচ্ছে, যাতে মনে হয় যারা অভ্যুত্থান করেছে তারা অপরাধ করেছে। নাহিদ ইসলাম বলেন, আমাদের বিশেষ কোনো নিরাপত্তার প্রয়োজন নেই। আমরা এটা নেব না। জুলাইকে সবাই মিলে ধারণ করতে হবে।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, নিজেরা ঐক্যবদ্ধ থাকতে না পারলে কোনো নিরাপত্তাই আমাদের কাজে আসবে না। রাজনৈতিক স্বার্থে দলগুলো আওয়ামী লীগকে নানা রকম সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে।

আসিফ নজরুল বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে হানাহানি শুরু হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগ শক্তিশালী হয়েছে। দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের শুধু দলীয় স্বার্থ নয়, জাতীয় স্বার্থের বিষয়েও সজাগ থাকতে হবে।

বৈঠক শেষে ব্রিফিং : যমুনার সামনে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা ঐক্যটা দেখাতে চাই। ফ্যাসিবাদ ও সন্ত্রাসবিরোধী জাতীয় ঐক্যটাই হবে আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। এর মাধ্যমেই আমরা এ ধরনের জাতীয় সংকট রুখতে পারব। তিনি বলেন, আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিটা অনেকটাই পরিবর্তিত হয়েছে। জনপ্রত্যাশা ও গণ-অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা অনুযায়ী, আকাক্সক্ষা অনুযায়ী সে রকম গণতান্ত্রিক-রাজনৈতিক সংস্কৃতি আমরা অব্যাহত রেখে, চর্চা করে আগামী দিনে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র করব। আমাদের এই গণতন্ত্র উত্তরণের পথটাকে যেন আমরা আরও সহজ করতে পারি, সে জন্য সবার সহযোগিতা আহ্বান করছি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সব রাজনৈতিক নেতা যাতে নিরাপদে থাকেন, সে ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের প্রতি আমরা আহ্বান জানিয়েছি। গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর মধ্যে ঐক্য থাকলে সব ধরনের সন্ত্রাস এবং ফ্যাসিবাদের দোসরদের যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে পারব।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ভারতের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। দিল্লিতে বসে বাংলাদেশবিরোধী সব ধরনের তৎপরতা চালাচ্ছে দলটি। ভারত সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ ছাড়া আওয়ামী লীগ এ ধরনের পরিকল্পনা করতে পারে না। তিনি বলেন, মূলত বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য আওয়ামী লীগকে নানা সহায়তা করছে ভারত।

এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, শুধু আমাদের নেতানেত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করলেই হবে না, নেতাদের নিরাপত্তা দিয়ে জুলাই টিকে থাকবে না। সামগ্রিকভাবে সমাজ থেকে, রাজনীতি থেকে আওয়ামী লীগের প্রশ্নের সুরাহা করতে না পারলে, আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই। তিনি বলেন, প্রশাসন, পুলিশ ও মিডিয়া থেকে শুরু করে সব জায়গায় নানা ছদ্মবেশে আওয়ামী লীগ ফিরে আসছে। সরকারকে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

নাহিদ আরও বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে তিনটি প্রধান ক্ষেত্রে কাজ করা জরুরি। আদালত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় থাকা সব ফ্যাসিবাদবিরোধী দলকে নিজ নিজ মতাদর্শী লোকজনকে একত্রিত করতে হবে। এই জায়গাগুলোতে আওয়ামী লীগকে অবশ্যই প্রতিরোধ করতে হবে। পাশাপাশি, তিনি প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করে এবং ভারতকে জবাবদিহির আওতায় আনার পদক্ষেপ নেয়।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম