Logo
Logo
×

শেষ পাতা

মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ আমলাতন্ত্রে করায়ত্ত: টিআইবি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ আমলাতন্ত্রে করায়ত্ত: টিআইবি

ফাইল ছবি।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশটির ওপর ‘চাপিয়ে দেওয়া’ বিধান, বিশেষ করে বাছাই কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত বাতিল করে অনতিবিলম্বে নতুন করে অধ্যাদেশটি ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মৌলিক পরিবর্তন ঘটিয়ে কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া আমলাতন্ত্রের করায়ত্ত করা হয়েছে। এর ফলে সরকারি প্রভাবের বাইরে থেকে কমিশন গঠনের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, তা সম্পূর্ণ ধূলিসাৎ হয়েছে। এতে টিআইবি গভীর উদ্বিগ্ন ও হতাশ। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বহুলপ্রত্যাশিত সংস্কার প্রক্রিয়াকে কীভাবে আমলাতান্ত্রিক অনমনীয়তা, এমনকি অন্তর্ঘাতের মাধ্যমে জিম্মি করা হচ্ছে, তার উদাহরণ হিসাবে অধ্যাদেশ প্রণয়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত অংশীজনকে অন্ধকারে রেখে বাছাই কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে শুধু এই প্রক্রিয়ায় সরকারি নিয়ন্ত্রণের কর্তৃত্ববাদী চর্চা অব্যাহত রাখার জন্য; যা সংস্কারবিরোধী আমলাতন্ত্রের স্বার্থান্বেষী মহলের কাছে সরকারের আত্মসমর্পণের বিব্রতকর দৃষ্টান্ত বলেও মন্তব্য করেছে সংস্থাটি। গত ৯ নভেম্বর জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করা হয়। বিষয়টি উল্লেখ করে বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ গেজেট আকারে প্রকাশের পর টিআইবিসহ সব অংশীজন এতে কিছু দুর্বলতা সত্ত্বেও আশান্বিত হয়েছিল, আমলাতন্ত্রের হাতে জিম্মিদশা কাটিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন জনপ্রত্যাশা ও আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গঠিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। কিন্তু ঠিক এক মাসের মধ্যে ৮ ডিসেম্বর যে বাছাই কমিটি এই সম্ভাবনা বাস্তবায়নের মূল ভিত্তি হতে পারত, সেই কমিটিকেই সরকারি নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ারে পরিণত করা হয়েছে।

বাছাই কমিটিতে এই পরিবর্তন বস্তুত ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মানবাধিকার কমিশনসহ বাংলাদেশের অন্য সব কমিশনের অকার্যকরতার পেছনে যেভাবে সরকারি প্রভাব দীর্ঘকাল ভূমিকা রেখেছে, সেই একই প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার ষড়যন্ত্রের একটি দৃষ্টান্তমাত্র, কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।’ বাছাই কমিটির ওপর আমলাতান্ত্রিক জবরদখল ও সরকারের তা মেনে নেওয়া চরম হতাশাজনক উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এই সংশোধনের মাধ্যমে নিষ্ঠুর, অমানবিক বা লাঞ্ছনাকর আচরণ প্রতিহত করার লক্ষ্যে জাতীয় প্রতিরোধব্যবস্থা বিভাগ প্রতিষ্ঠার যে প্রশংসনীয় বিধান সংযুক্ত করা হয়েছে, তার এবং সার্বিকভাবে এ আইনের ভিত্তিতে গঠিতব্য মানবাধিকার কমিশনের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা ও কার্যকরতার সম্ভাবনাকে ধূলিসাৎ করার জন্য শুধু বাছাই কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের অন্তর্ভুক্তিই যথেষ্ট।’

এছাড়া কমিশনের আদেশ প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে গৃহীত পদক্ষেপ কমিশনকে অবহিত করার বাধ্যবাধকতার পরিবর্তে ‘অবহিত করা যাইবে’ প্রতিস্থাপন করার মতো আরও কিছু বিধান সংযোজন করার ফলে অধ্যাদেশটির মাধ্যমে প্রত্যাশিত সব ইতিবাচক সম্ভাবনা পদদলিত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ইফতেখারুজ্জামান। অনতিবিলম্বে আমলাতন্ত্রের অন্তর্ঘাতমূলক সংস্কারবিরোধী চক্রের কাছে আত্মসমর্পণের বিব্রতকর অবস্থান থেকে সরে এসে নতুন করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশটি ঢেলে সাজানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে টিআইবি। টিআইবি বলেছে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গঠনের জন্য ৬২ নম্বর অধ্যাদেশ, যা ৯ নভেম্বর ২০২৫ গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়, তার ৭ নম্বর অনুচ্ছেদে বর্ণিত বাছাই কমিটিতে আমলাতন্ত্রের কোনো প্রতিনিধি ছিল না, যা মানবাধিকার কমিশনের অকার্যকরতার দীর্ঘদিনের তিক্ত অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সরকারসহ সব অংশীজনের স্বীকৃতির পরিচায়ক। অথচ ৮ ডিসেম্বরের গেজেটে প্রকাশিত সংশোধিত অধ্যাদেশ ৭৪-এ বাছাই কমিটিতে আমলাতান্ত্রিক আধিপত্য নিশ্চিতের উদ্দেশ্যে এ অধ্যাদেশ প্রণয়নে সম্পৃক্ত সব অংশীজনকে অন্ধকারে রেখে একতরফাভাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম