সোলার বসানোর বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহার
সহজ হলো বিদ্যুতের নতুন সংযোগ
শাহেদ সিদ্দিকী
প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বিদ্যুতের নতুন সংযোগ সহজ করেছে সরকার। এখন থেকে বিদ্যুতের সংযোগ নিতে হলে আবাসিক ও শিল্প-কারখানার ছাদে সোলার প্যানেল বসাতে হবে না। অর্থাৎ বাসাবাড়ি ও শিল্প-কারখানার ছাদে সৌর প্যানেল বসানোর বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়া হলো। এছাড়া বিদ্যুতের লোডের চাহিদার পরিমাণের কোনো বাধ্যবাধকতাও থাকবে না। ইচ্ছামতো লোড নেওয়া যাবে বাসাবাড়ি ও শিল্প-কারখানায়।
বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে এ নির্দেশনা দিয়ে দেশের সব বিতরণ কোম্পানিতে পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশ সাসটেইনেবল অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোয়েশন-বিএসআরইএ জানিয়েছে, গত ১৫ বছরে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে শুধু বাসাবাড়িতে সোলার প্যানেল বসাতে কমপক্ষে ৫ হাজার কোটি টাকা অপচয় হয়েছে। বিএসআরইএ’র সভাপতি মোস্তফা আল মাহমুদ যুগান্তরকে বলেছেন, ১৫ বছরে কমপক্ষে পাঁচ লাখের বেশি বাসাবাড়িতে সোলার প্যানেল বসানোর নামে নানা অপচয় হয়েছে। এতে করে কাজের কাজ কিছু হয়নি।
গ্রাহকদের সহজভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে সম্প্রতি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-পিডিবির সদস্য ওবায়দুল্লাহর নেতৃত্বে একটি কমিটি করা হয়েছে। সেই কমিটির সুপারিশে বিদ্যুৎ বিভাগের উপসচিব মামুন ভুঁইয়ার স্বাক্ষরে এক নির্দেশনা জারি করা হয়েছে বিতরণ কোম্পানির জন্য। এতে বলা হয়, আবাসিক গ্রাহক (এলটিএ) পাসপোর্ট সাইজের ছবি, এনআইডি ও জমির মালিকানার কাগজপত্র এবং ১০ তলা ভবনের বেশি হলে অগ্নিনির্বাপণ সনদসহ কিছু কাগজ দিলে নতুন সংযোগ মিলবে। আবাসিক গ্রাহকের লোডের চাহিদা এবং ছাদে সোলার সিস্টেম বসানোর বাধ্যবাধকতা থাকবে না। তবে গ্রাহক নিজ উদ্যোগে নেট মিটারিংয়ের মাধ্যমে রুফটপে সোলার সিস্টেম বসাতে পারবেন।
শিল্প গ্রাহকের ক্ষেত্রে আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের এক কপি ছবি, এনআইডি অথবা জন্মনিবন্ধন, জমির মালিকানা বা লিজের দলিল, ভাড়া জমি হলে জমির মালিকের সঙ্গে রেজিস্টার্ড চুক্তি, ১০ তলা ভবনের বেশি হলে অগ্নিনির্বাপণের সনদ থাকতে হবে। তবে একই হোল্ডিং বা আঙিনায় একাধিক শিল্প সংযোগ দেওয়া হবে না। শিল্প গ্রাহকদের জন্য লোডের পরিমাণ এবং সোলার প্যানেল বসানোর কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে গ্রাহক চাইলে নিজ উদ্যোগে নেট মিটারিং পদ্ধতিতে সোলার বসাতে পারেন। তবে শিল্প সংযোগের জন্য ট্রেড লাইসেন্স থাকতে হবে। এছাড়া সেচ বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য সেচ কমিটির অনুমতি ছাড়াও প্রয়োজনীয় কাগজ দিতে হবে। তবে লোডের চাহিদার বাধ্যবাধকতা নেই। বাণিজ্যিক ও ব্যাটারি চার্জিংয়ের জন্য (এলটিই/ডি৩ গ্রাহক) লোডের চাহিদা এবং সোলার প্যানেল বসানোর কোনো বাধ্যবাধকতা রাখা হয়নি। তবে ১০ তলা ভবনের বেশি হলে ফায়ার সার্ভিসের সনদ লাগবে।
নির্মাণকাজে (গ্রাহক এলটি সি-২) লোড চাহিদার পরিমাণ রাখা হয়নি। শিক্ষা, ধর্মীয় ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সংযোগে সোলার প্যানেল না থাকলেও চলবে। এমটি/এইচটি বা বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নতুন সংযোগের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ জমা দিলে চলবে। কোনো সোলার প্যানেল বসানোর দরকার নেই। তবে এ ধরনের গ্রাহককে প্রধান বৈদ্যুতিক পরিদর্শকের সার্টিফিকেট, ট্রান্সফরমারসহ বিভিন্ন ইকুইপমেন্টে ওয়্যারিং ডায়াগ্রাম, সাবস্টেশনের নকশা ও শিল্প নিবন্ধনের সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন কাগজ দিতে হবে। এ ধরনের গ্রাহকদের সোলার প্যানেলের বাধ্যবাধকতা নেই। ভূমিহীন গ্রাহকদের জন্য এক কপি ছবি ও নাগরিকত্বের সার্টিফিকেট (ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি করপোরেশন থেকে) জমা দিলে বিদ্যুৎ সংযোগ পাবেন। বিদ্যুৎ সচিব ফারজানা মমতাজ যুগান্তরকে বলেন, গ্রাহকদের সহজভাবে বিদ্যুৎ দিতে সরকার এ আদেশ জারি করেছে। বিএসআরইএ’র সভাপতি যুগান্তরকে বলেন, সবার জন্য এ আদেশ ভালো হয়েছে। এতদিন সরকারি আদেশের মাধ্যমে জনগণের অর্থ নষ্ট করা হয়েছে। ২০১০ সালে এক আদেশে আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুতের নতুন সংযোগ পেতে বাসাবাড়ি এবং শিল্প-কারখানায় সোলার প্যানেল বসানোর শর্ত জুড়ে দেয়। এতে গ্রাহকদের টাকা অপচয় হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর ফলে দেশের খুব বেশি লাভ হয়নি।
