আলোচনা সভায় ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
বাজেটে নারীদের আরও গুরুত্ব দিতে হবে

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৫, ১০:২৯ পিএম

বাংলাদেশের বাজেটে নারীদের জন্য যে বাজেট দেওয়া হয় সেটা খুবই কম। যেটুকু দেওয়া হয় তার কাঠামোর মধ্যেও সমস্যা থাকে, বেশির ভাগ টাকা চলে যায় বিল্ডিং বানাতে। জাতীয় বাজেটে যা বরাদ্দ থাকে, সেটুকুও ঠিকমতো বছর শেষে খরচ হয় না। যেটুকু খরচ হয় তার আবার মূল্যায়ন হয় না, এটা প্রকৃতভাবে নারীদের পক্ষে গেছে কি না? ওই মূল্যায়ন করার জন্য আবার তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায় না। বাজেটে নারীদের আরও গুরুত্ব দিতে হবে।
সোমবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলের সম্মেলন
কক্ষে ‘লিঙ্গ-প্রতিক্রিয়াশীল
বাজেট প্রণয়ন এবং এফএফডি-ফোর ফলাফলের অগ্রগতির বিষয়ক’ শীর্ষক আলোচনা শেষে এসব কথা
বলেন সিপিডির এই সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে এসডিজিবিষয়ক নারী, প্ল্যাটফর্ম।
আয়োজনে সহযোগিতা করে জাতিসংঘের নারীবিষয়ক সংস্থা ‘ইউএন উইমেন’।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বর্তমানে যে অন্তর্বর্তীকালীন
সরকার সংস্কার কমিশন করার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের প্রত্যাশা জাগিয়েছেন। সরকার বিভিন্ন
সংস্কারের পদক্ষেপে কমিশন বানাচ্ছে। শুধু নারী কমিশনের কথা বলছি না। স্থানীয় সরকার,
দুর্নীতি, এমনকি সংবিধান ইত্যাদি বিষয়ে যে আলোচনা
চলছে, তার ভেতরেও নারীদের বিষয়কে একটি মূলধারার বিষয় হিসাবে সংযুক্ত করতে হবে। এটা
শুধু নারীর বিষয় নয়, এটা বাংলাদেশের জাতীয় বিষয়। এটা শুধু উন্নয়নের বিষয় নয়, এটা ন্যায্যতারও
বিষয়।
বাজেটকে আরও বেশি ব্যবহার উপযোগী করার প্রস্তাব
তুলে ধরে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, দেশে যে অর্ধেক জনসংখ্যা নারী
তাদের পরিবর্তনের কথা, তাদের উন্নয়নের কথা বিবেচনায় রেখে সুনির্দষ্টি,
স্বচ্ছ এবং ব্যবহারযোগ্যভাবে বাজেট দিতে হবে। বাজেট দেওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের ভেতরে
যারা বিশেষ করে পেছনে পড়ে আছেন, তাদের বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
এদিন সকালে অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তখন তিনি
বলেন, এখানে সমতার পাশাপাশি এটাও বুঝতে হবে যে লিঙ্গগত বৈষম্যের মাত্রা, লিঙ্গ সমতা,
যা নিয়ে আলোচনা করছি তা কেবল সম্পদ বরাদ্দ এবং সম্পদ ব্যবহারের দিক থেকে দেখা উচিত
নয়। এটি কেবল দেশ পর্যায়ের বাজেট কাঠামোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, যখন বৈষম্যের বিষয়ে কথা
বলি এবং ভোটের গণতানি্ত্রক অধিকার সম্পর্কে কথা বলি এবং যখন সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার
কথা বলি, তখন ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, সমস্যাটি অনেক বেশি স্থায়ী এবং শুধু একটি কমিশন
এবং সম্ভবত একজন ভুক্তভোগী এটির সমাধান করতে পারবেন না। তাই আরও অনেক বেশি দৃঢ় থাকতে
হবে এবং প্রচষ্টোয় অবিচল থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশে লিঙ্গ প্রতিক্রিয়াশীল বাজেট: সংক্ষপ্তি পরিসর’
তুলে ধরেন ইউএন উইমেনের লিঙ্গ পরিসংখ্যানবিষয়ক প্রোগ্রাম বিশে্লষক নুবায়রা জেহিন,
‘লিঙ্গীয় দৃষ্টিকোণ থেকে
অর্থনীতির অবস্থা সম্পর্ক' নিয়ে উপস্থাপনা তুলে ধরেন সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো
তেৌফিকুল ইসলাম খান।
এছাড়া ‘লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নের জন্য চাহিদা ও অর্থায়ন' নিয়ে
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সেক্রেটারি রেখা সাহা। বক্তব্যে তিনি
নারীদের জন্য কোটা সংরক্ষণ এবং বাজেটে নারীদের জন্য আরও বেশি প্রতিনিধিত্বের আহ্বান
জানান।
অনুষ্ঠানে সম্মাননীয় অতিথির বক্তব্য দেন ঢাকায় নিযুক্ত
সুইডেন দূতাবাসের ডেভেলপমেন্ট কো-অর্ডিনেশন প্রোগ্রাম পরিচালক মারিয়া স্ট্রিডসম্যান।
এছাড়া অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের যুগ্মসচিব মো.
আবুল কালাম আজাদ, মহিলাবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য ফেরদেৌসী সুলতানা, মহিলা ও শিশুবিষয়ক
মন্ত্রণালয়ের উপসচিব তাসনিম জেবিন বিনতে শেখ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (অভ্যন্তরীণ
নিরীক্ষা বিভাগ-২) নাজমুন নাহার হামিদ, ইউএন উইমেনের প্রতিনিধি গীতাঞ্জলি সিং প্রমুখ।