Logo
Logo
×

অন্যান্য

নতুন করে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১০ জুন ২০২৫, ১০:৫০ পিএম

নতুন করে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে
বাংলাদেশসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে করোনাভাইরাস নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্টের (উপধরন) সংক্রমণ বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া দেশের বাইরে না যাওয়ার বিষয়ে সতর্ক করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। একই সঙ্গে সংক্রমণ ঝুঁকি মোকাবিলায় দেশের সব স্থল ও বিমানবন্দরে হেলথ স্ক্রিনিং ও নজরদারি বাড়াতেও বলা হয়েছে। পরামর্শ দেওয়া হয়েছে আবারও মাস্ক পরার এবং স্থলবন্দরে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. হালিমুর রশিদের স্বাক্ষরে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট, বিশেষ করে অমিক্রন এলএফ. ৭, এক্সএফজি, জেএন-১ এবং এনবি ১.৮.১-এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া সংক্রমণ প্রতিরোধে নির্দেশনাগুলো হলো : দিনে অন্তত সাতবার প্রয়োজনমতো সাবান দিয়ে হাত ধোয়া (অন্তত ২৩ সেকেন্ড)। নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করা। আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে কমপক্ষে ৩ ফুট দূরে থাকা। অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ না করা। হাঁচি-কাশির সময় বাহু/ টিসু/ কাপড় দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখা। দেশের বিভিন্ন স্থল/নৌ/ বিমানবন্দরে আইএইচআর (IHR-2005) স্বাস্থ্য ডেস্কগুলোয় সতর্ক থাকা, হেলথ স্ক্রিনিং এবং সার্ভেল্যান্স জোরদার করা। দেশের পয়েন্টস অব এন্ট্রিগুলোয় থার্মাল স্ক্যানার/ ডিজিটাল হেন্ড হেল্ড থার্মোমিটারের মাধ্যমে নন-টাচ টেকনিকে তাপমাত্রা নির্ণয় করা। চিকিৎসা কাজে স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ মাস্ক, গ্লাভস এবং রোগ প্রতিরোধী পোশাক (পিপিই) মজুত রাখা। এছাড়া ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য রোগ প্রতিরোধ নির্দেশনাগুলো প্রচার করা। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভারত ও অন্যান্য আক্রান্ত দেশ ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকা।

শনাক্তের হার ১৩ শতাংশ : এদিকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টার ১০১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ১২.৮৭ শতাংশ। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা এখন আর আগের মতো প্রাণঘাতী নেই। সাধারণ জ্বর, সর্দি বা মৌসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মতো। রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে না। তাই ভাইরাস বহনকারী ব্যক্তিরা এখন আর পরীক্ষা করছেন না। ধারণা করা হয়, প্রকৃত রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। 

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণাকেন্দ্র (আইইডিসিআর)-এর সায়েন্টিফিক অফিসার ডা. মো. আবদুল্লাহ ওমর নাসিফ যুগান্তরকে বলেন, আমাদের দেশে এখন XFG (এক্সএফজি) ভ্যারিয়েন্টটি সংক্রমণ শুরু করছে। আইসিডিডিআরবি চলতি বছরের জুন মাসে ১৪টি জিনোম সিকোয়েন্স করে ১২টিতেই এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করেছে।

তিনি বলেন, রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের সচেতন হওয়া জরুরি। বিশেষ করে বয়স্ক, গর্ভবতী ও দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত মানুষকে সতর্ক হতে হবে। যাদের শরীরে রোধ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের করোনা সব সময় ঝুঁকিপূর্ণ। 

আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন অবশ্য করোনার বৃদ্ধিকে বলছেন মৌসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জা। তিনি বলেন, কোভিড যে কোনো মৌসুমে বাড়তে পারে। এখন বাড়ছে তবে এটি এমন কোনো ভ্যারিয়েন্ট না যে প্রাণঘাতী। তবে আমাদের সাবধানতার কোনো বিকল্প নেই। কারণ যে কোনো ভাইরাস পুরোনো হোক বা নতুন নিউটেশনের মাধ্যমে প্রাণঘাতী হতে পারে। 

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. সায়েদুর রহমান জানিয়েছেন, ‘কোভিড মোকাবিলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। রেড ক্রিসেন্ট থেকে কিছু টেস্টিং কিট সংগ্রহ করেছি এবং আরও কিট সংগ্রহ করা হবে। তিনি বলেন, এখনো কোনো অঞ্চলে অ্যালার্মিং পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবে পার্শ্ববর্তী দেশে রোগী বাড়ায় দেশের জনগণকে সতর্ক করা হচ্ছে। নতুন ভ্যারিয়েন্টের জন্য আলাদা ভ্যাকসিন নেই। আমরা পুরোনো ভ্যাকসিনই পুনরায় দেওয়ার পরিকল্পনায় রয়েছি। 

আখাউড়া ইমিগ্রেশনে সতর্কতা : আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি জানান, প্রতিবেশী দেশগুলোতে করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ ও ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। 

ভারত থেকে আগত পাসপোর্টধারী যাত্রীদের ইমিগ্রেশনের প্রবেশপথে হেল্থ ডেস্কে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য থার্মাল স্ক্যানার বা ডিজিটাল হ্যান্ডহেল্ড থার্মোমিটার (নন-কন্টাক্ট পদ্ধতি) ব্যবহার করে শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করা হচ্ছে। বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে মাস্ক ব্যবহার। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় ইমিগ্রেশন হেল্থ ডেস্কে নজরদারি ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা বাড়ানো হয়েছে।

আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হিমেল খান বলেন, এ পথে আগত যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, মাস্ক পরা, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা এবং সর্দি, কাশি বা জ্বর থাকলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তাদের আতঙ্কিত না হয়ে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে পাসপোর্টধারীদের নাম ও পাসপোর্ট নম্বর লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে।

হিলি চেকপোস্টে মেডিকেল টিম : হাকিমপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, ভারতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় অবশেষে হিলি চেকপোস্টে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। ফলে মঙ্গলবার সকাল থেকে পাসপোর্ট যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় মেডিকেল টিম তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। 

হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ইলতুতমিশ আকন্দ বলেন, হিলি ইমিগ্রেশনের প্রবেশমুখে হেলথ স্ক্রিনিং যন্ত্র বসানো হয়েছে। সেখানে একজন মেডিকেল অ্যাসিসটেন্টের নেতৃত্বে থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে ভারত থেকে আগত যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। যাদের মধ্যে জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট উপসর্গ দেখা যাবে তাদের নিজ বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হবে। ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে যাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে ‘রোগ প্রতিরোধ’ নির্দেশনা প্রচার করা হচ্ছে।
Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম