এক হাজারের বেশি কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা
ইডিসিএলের ‘রোহিঙ্গা রুমে’ বসে থেকেই বেতন পেতেন অনেক কর্মী
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২৫, ০৯:৪৮ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাষ্ট্রীয় ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) জনবল কাঠামোয় বড় ধরনের সংস্কারে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে অদক্ষ ও অপ্রয়োজনীয় হিসেবে চিহ্নিত ৭২২ জন কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি আরও এক হাজারের বেশি কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করেছে।
বুধবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ইডিসিএলের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সামাদ মৃধা এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ইডিসিএলে উৎপাদন ক্ষমতার তুলনায় দুই হাজারের বেশি বাড়তি জনবল ছিল। এদের মধ্যে অনেকে জাল শিক্ষাগত সনদধারী ও অদক্ষ ছিলেন। দীর্ঘদিন কোনো কাজ না করেই তারা বেতন ভোগ করছিলেন।
এমডি জানান, বিগত সরকারের আমলে পছন্দমতো লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এমনকি একটি কক্ষে কর্মীদের বসিয়ে রেখে বেতন দেওয়া হতো, যার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘রোহিঙ্গা রুম’। এমন অপচয় আর চলতে দেওয়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম দূর করে ইডিসিএলকে একটি দক্ষ, সাশ্রয়ী ও জনমুখী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করার কাজ চলছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি শুধুমাত্র অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ উৎপাদনে গুরুত্ব দিচ্ছে। এর আগে উৎপাদনের বড় অংশজুড়ে ছিল অপ্রয়োজনীয় ওষুধ।
এমডি দাবি করেন, কাঁচামাল কেনার ক্ষেত্রে এখন টেন্ডারভিত্তিক, প্রতিযোগিতামূলক ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে। এতে উৎপাদনের মান বেড়েছে, ব্যয়ও কমেছে। ওভারটাইম কমিয়ে ওষুধ উৎপাদনে দক্ষতা বাড়ানো হয়েছে এবং কর্মীদের উৎসাহিত করতে ‘মোটিভেশনাল প্রোগ্রাম’ নেওয়া হয়েছে। শ্রমিক-ইউনিয়নের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা হয়েছে।
সরকারি হাসপাতালগুলোর জন্য নিরবচ্ছিন্ন ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরবরাহ চেইন ব্যবস্থাপনায় উন্নতি আনা হয়েছে। গত ৬০ বছরের ইতিহাসে কোনো একক ছয় মাসে এত অগ্রগতি হয়নি দাবি করে এমডি বলেন, এখন পর্যন্ত ৩৩টি ওষুধের দাম শতকরা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ছয় মাসে অধিকাংশ ওষুধের দাম কমানো সম্ভব হবে।
ইডিসিএলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় রয়েছে দুটি আধুনিক প্ল্যান্ট নির্মাণ—একটি বায়োটেক প্ল্যান্ট, যেখানে ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রস্তুতি চলছে; অপরটি ঢাকার অদূরে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে, যা এফডিএ’র গাইডলাইন অনুযায়ী আধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী ইনসুলিন ও ইরিথ্রোপোয়েটিনসহ বায়োলজিক্যাল পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। তাই ইডিসিএল শুধু সাধারণ ওষুধ নয়, বরং ভ্যাকসিন ও বায়োলজিক্যাল পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যেও কাজ শুরু করেছে। ইডিসিএল এখন একটি ঐতিহ্যবাহী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান থেকে ভবিষ্যতমুখী, আধুনিক, দক্ষ ও জনগণের স্বাস্থ্যসেবায় প্রতিশ্রুতিশীল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে।


