বিআইডিএসের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে একাধিক উপদেষ্টা
স্বল্প সময়ে কোন সংস্কার পুরোপুরি সম্ভব নয়
তিন মন্ত্রণালয় থেকে ৪৫ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করেছি: মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:১৯ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
এত স্বল্প সময়ে কোন সংস্কারই পুরোপুরি শেষ করা সম্ভব নয়। আমরা শুরু করে দিয়ে যাব। কিন্তু পরবর্তী সরকার এসে সেটি এগিয়ে নিয়ে যাবে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্বচ্ছিচ্ছা জরুরী। আমরা একটা পদচিহ্ন রেখে যেতে চাই। বই্ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে একাধিক উপদেষ্টা এসব মন্তব্য করেন। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের লেখা ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থনীতি’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আয়োজন কওে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)। রোববার রাজধানীর আগারগাঁও এ সংস্থাটির সন্মেলন কক্ষে এ অনুষ্ঠিান অনুষ্ঠিত হয়।
বিআইডিএসের মহাপরিচালক এ.কে এনামুল হকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন, অর্থ উপদেষ্টা ড.সালেহ উদ্দিন আহমেদ, পরিবেশ-বন ও জণবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওায়ানা হাসান, সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী, বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড.জাহিদ হোসেন, পিপিআরসি’র নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান এবং প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ।
অতিথির বক্তব্যে ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা খুব সুখকর সময় দায়িত্ব নেইনি। একেবারেই কিছু হচ্ছে না এ কথা ঠিক নয়। আমরা পদচিহ্ন রেখে যেতে চাই। াকিছু ভুল হলেও অনেক ভালো কাজ করছি। মূল কথা হলো রাজনৈতিক ইচ্ছা ও সহযোগীতা। রাজনৈতিক সাপোর্ট ছাড়া কিছুই হবে না। আমরা চেষ্টা করছি। কিন্তু রাজনীতি মাসে যা খুশি করলাম সেটা নয়। রাজনীতি মানে হচ্ছে দেশের প্রতি মমত্ববোধ এবং পরার্থতা। এত দিন যা হয়েছে সেখানে অনেক ভালোও হয়েছে যদি দুর্নীতি, সুশাসন এবং রাজনৈতিক সুস্বাস্থ্য ঠিক থাকতো তাহলে দেশটা অনেক দূর এগিয়ে যেত। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা শুরু করে দিয়ে যাচ্ছি। যমেন এনবিআরে যে আইন করতে, তারাই বাস্তবায়ন করবে আবার তারাই ফাইন করবে এটাতো হতে পারে না। সেই সংস্কার করতে গিয়েও কত সমস্যা। আমরা বদ উদ্দেশ্যে কিছু করছি না। গ্লাসের অর্ধেক খালি থাকলে যদি বলেন অর্ধেক ফাাঁকা তাহলেতো হবে না। বলতে হবে অর্ধেক ভড়া আছে।
বইটির লেখক মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, সরকারের মধ্যে অর্থনীতির চর্চা বেড়েছে। দেড় বছর উন্নয়নের জন্য খুব বেশি সময় নয়। আমি আজ যদি একটি রেল ইঞ্জিনের অর্ডার করি সেটি পেতে ৩ বছর লাগবে। এছাড়া গ্যাস পাইপলাইন বসাতে ২ বছর রাগবে। তাহলে দেড় বছরে কি হয়। গত সরকারের সময় দুর্নীতি হয়েছে। সেটি চেয়ারের দোষ ছিল না। সেটি ছিল সিস্টেম এবং ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গীর দোষ। আমরা সরকারি কেনাকাটায় প্রতিযোগীতা বাড়িয়েছি। এবং অনেক প্রকল্পের অপ্রয়োজনীয় কাজ বাদ দিয়েছি। ফলে আমার দায়িত্বে থাকা ৩ মন্ত্রণালয় থেকে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করেছি। আমরা এখন পথ দেখাচ্ছি। ফেব্রুয়ারি মাসে নতুন সরকার এসে সেগুলো অনুসরণে করতে পারবে। উন্নয়ন প্রকল্প তাজমহল নয়। বাংলাদেশে যে খরচে মেট্রোরেল তৈরি হয়েছে ভারতে ও থাইল্যান্ডে তার অর্ধেক খরচে তৈরি হয়।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সংস্কারের জন্য দেড় বছর বেশি সময় নয়। এই সময়ে শুরু করা যেতে পারে। কিন্তু পুরো সংস্কার সম্ভব নয়। আমরা অনেক কিছুই সংস্কার করতে পারি, কিন্তু সেগুলো টেকসই হবে না। তাই আমরা সবাইকে সঙ্গে নিয়েই সংস্কারগুলো করতে চাচ্ছি। ১/১১ এর পর অনেক সংস্কার হয়েছে কিন্তু কিছুইতো টেকেনি। তবে কারও হাতে পরশকাঠি নেই যে, তা বুলিয়ে দিলে সংস্কার হয়ে যাবে। আমাদের দেশে সমস্যা অনেক গভীরে। ফলে কেবল আইনের ধারা বদলে দিয়ে সংস্কার করা সম্ভব নয়।
মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী বলেন, অর্থনীতি সংস্কতিতে অনেক প্রভাব বিস্তার করে। আমরা অর্থনীতির চেয়ে বেশি অনর্থনীতি চর্চাই বেশি করেছি। এ অবস্থা বেরিয়ে আসতে হবে।
ড. জাহিদ হোসেন বলেন, দেশের অর্থনীতি সম্প্রসারণের বড় বাঁদা হচ্ছে ব্যবসার উচ্চ খরচ। এর পেছনের কারণ প্রধান কারণ হলো, ব্যাংক খাতের দুর্দশা এবং জ্বালানি খাতের সংকট। আমাদের কাঠামোগত সংস্কার দরকার। শুধু নীতি সহায়তা নামে প্রণোদনা দিয়ে স্থায়ী কিছ‚ হবে না। এটা যেখানে সমস্যা সেখানে মলক লাগানোর মতো। নীতি সহায়তার নামে অনেক অনর্থনৈতিক ঘটনা ঘটে। এজন্য প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোগত সংস্কার জরুরী। এই সরকার কি সংস্কার করছে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, আমাদের দেশে স্বাস্থ্যের অবকাঠামো আছে, কিন্তু সেবা নেই। একটা বৈপরীত্য আছে। এজন্য বাংলাদেশে বৈধ দুর্নীতির সিনড্রোম অতিক্রম করাটা জরুরী। একটা নির্বাচনের মাধ্যমে এই সরকারকে বর্তমান সমস্যা অতিক্রম করতে হবে। সেটি করতে পারলে একটি বড় কাজ হবে।
মতিউর রহমান বলেন, বাতিঘর প্রকাশনী থেকে মুহাম্মদ ফাওজুল কবিরের বইটি প্রকাশ হয়েছে। এই বইয়ে প্রবন্ধগুলো প্রথম আলোতে বিভিন্ন সময় প্রকাশ হয়েছে। তবে বই আকারে করার আরো বেশি পাঠকের জন্য উপকার হবে। আগামীতে উপদেষ্টার দায়িত্ব শেষে তিনি একটা বই লিখবেন এবং সেটি প্রকাশ করবো আমরা। সামনে একটা নির্বাচনের মাধ্যমে ওনাদের দায়িত্ব শেষ হবে বলে আশা করছি। সামনে নির্বাচন হত্ইে হবে। এ বিষয়ে কোন জটিলতা দেখা দিলে দেশের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।

