যমুনা ফিউচার পার্কে ক্রেতার আস্থা
দুর্গোৎসবে সর্বত্র কেনাকাটার ধুম
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৫৮ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
মহালয়ার মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। আর এই উৎসবে মেতে উঠতে শপিং মল থেকে শুরু করে ফুটপাত ও অন্যান্য বিপণিবিতানে চলছে কেনাকাটার ধুম। এর মধ্যে একই ছাদের নিচে দেশি-বিদেশি সব ব্র্যান্ডের শোরুম থাকায় ক্রেতার আস্থার শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ শপিং মল যমুনা ফিউচার পার্ক। কারণ এখানে বাঙালি ও পশ্চিমা সংস্কৃতির আধুনিক ও সর্বশেষ ডিজাইনসংবলিত সব পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। জুতা-গহনায় রয়েছে বৈচিত্র্য। শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন রাজধানীর হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ।
বিক্রেতারা জানান, এবার পূজা ঘিরে নারীদের জামদানি, কাতান, সিল্ক, সুতি ও তাঁতের শাড়ির চাহিদা বেশি। পাশাপাশি শিশুরা পোশাকের সঙ্গে কিনছে খেলনাও। শনিবার সরেজমিন যমুনা ফিউচার পার্ক ঘুরে দেখা যায়, এই শপিং মলে সকালে পূজার কেনাকাটা কম হলেও বিকালে ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে থাকে। অন্যদিকে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বিশেষ রং ও পূজার সংস্কৃতি তুলে ধরে দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো নিত্যনতুন পোশাক বাজারে এনেছে। বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোও পিছিয়ে নেই। আধুনিক ডিজাইনসংবলিত স্টোনের থ্রি-পিস, সারারা, গারারা, চিনন সিল্কের পোশাক এনেছে। সনাতনী ডিজাইনের পাশাপাশি আধুনিক ডিজাইনের শাড়ি, পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস, বাচ্চাদের পোশাকে রং ও ডিজাইনে পরিবর্তন এসেছে। গরমকে কেন্দ্র করে সব ফ্যাশন হাউসই সুতি কাপড়কে প্রাধান্য দিয়ে পোশাক ডিজাইন করেছে। অনেক ব্র্যান্ড পূজা উপলক্ষ্যে ১৫ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে।
মেরুল বাড্ডা থেকে পূজার কেনাকাটা করতে আসা অর্চিতা রায় বলেন, প্রধান ধর্মীয় উৎসব হওয়ায় দুর্গাপূজায় সাধ্যের মধ্যে পরিবারের সবার জন্য কেনাকাটা করতে হয়। বাজেটের সঙ্গে মিল রেখে পূজা বরণের প্রস্তুতি শেষ করেছি। এখন পূজার আনুষঙ্গিক কেনাকাটা বাকি রয়েছে।
তিনি জানান, যে কোনো কেনাকাটা করার ক্ষেত্রে তার পছন্দনীয় স্থান হচ্ছে যমুনা ফিউচার পার্ক। কারণ এখানে এক ছাদের নিচে সব দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের পোশাক পাওয়া যায়। আয়তনে বড় হওয়ায় কেনাকাটায় হুড়াহুড়ি নেই। স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরেফিরে পোশাক কিনতে পারেন। আর দামও অন্য মার্কেটের মতো। ক্ষেত্রবিশেষে এখানে পোশাকের দামে ছাড় পাওয়া যায়, যা অন্যান্য স্থানে দেওয়া হয় না।
শপিং মলে কেনাকাটা করতে আসা সরস্বতী রায় বলেন, লাল-সাদার সনাতনী সাজ ছাড়া দুর্গাপূজা পরিপূর্ণতা পায় না। তাই আমি লাল পাড়ে সাদা জামদানি শাড়ি কিনতে এখানে এসেছি। পরিবারের অন্যদের জন্যও ভরপুর কেনাকাটা করেছি। সব মিলে এখানে কেনাকাটা করতে কোনো ভোগান্তি নেই।
রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে পরিবারের সঙ্গে যমুনা ফিউচার পার্কে এসেছে ৯ বছরের স্বাক্ষর। সে বলে, বাবা-মায়ের মঙ্গে পূজা উপলক্ষ্যে কেনাকাটা করতে এসেছি। দুই সেট জামাকাপড়ের সঙ্গে জুতাও কিনেছি। আরও কিনেছি পছন্দের খেলনা। বাবা আমাকে এই খেলনা কিনে দিয়েছে। আমার অনেক আনন্দ লাগছে।
এদিকে এবারের পূজা ঘিরে তরুণী-কিশোরীরা ভারতীয় লেহেঙ্গা, থ্রি-পিস কেনায় বেশি আগ্রহী। নারীদের চাহিদায় রয়েছে জামদানি, কাতান, সিল্ক, সুতি ও তাঁতের শাড়ি। তাদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে রয়েছে ফ্যাশন হাউস মেট্রোর পোশাক। এখানকার সারারা, গারারা, লং গাউন, স্টোন থ্রি-পিস, চিনন সিল্ক কটনের পোশাক নারীদের নজর কেড়েছে। পুরুষদের জন্য নতুন ডিজাইনের পাঞ্জাবি রয়েছে। আর দেশীয় ব্র্যান্ডের মধ্যে আড়ং, অঞ্জন’স, দেশীদশ, নবরূপা, জেন্টলপার্ক, ইনফিনিটি, ক্যাটসআই নতুন পূজার কালেকশন বাজারে এনেছে। ক্রেতারাও তাদের পছন্দসই পোশাক কিনতে ভিড় করছেন সেখানে।
বিক্রেতারা বলছেন, এবার পূজার পোশাকে বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। সাধারণত পূজার শাড়ি বলতে লাল-সাদা ও সাদা-লাল ডিজাইনকে বোঝানো হলেও এবার অ্যাশ কালারের ওপর লাল, লালের ওপর সাদা-নীল, পেস্ট কালারের ওপর নতুন ডিজাইন করা হয়েছে। কটনের পাশাপাশি এন্ডি কটন, হাফ সিল্কের শাড়িগুলোতে প্রথাগত ডিজাইন না করে সর্বজনীন ডিজাইন করা হয়েছে। যা সব বয়সি নারীদের জন্য মানানসই।

রাজধানীর নিউ মার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, গাউছিয়া, এলিফ্যান্ট রোডসহ বেশ কয়েকটি শপিং মলে পূজার জমজমাট বেচাকেনা দেখা গেছে। নিউ মার্কেটে পূজার বাজার করতে আসা সূর্য সাহা বলেন, শাঁখারিবাজারে পূজার জন্য সবকিছু কেনা শেষ। এখন বাকি কেনাকাটা করতে নিউ মার্কেটে এসেছি। এখান থেকে দেখে শাড়ি আর থ্রি-পিস নেব।
নিউ মার্কেটে বিক্রেতা রেজাউল ইসলাম বলেন, পূজা উপলক্ষ্যে ধুতি, পাঞ্জাবি, শর্ট শার্ট ও ট্রেন্ডি পোশাকের চাহিদা বেশি। আর শিশুদের চাহিদা বাহারি ড্রেস, জুতা ও টুপি ভালো বিক্রি হচ্ছে। সব মিলে বিক্রি ভালো হচ্ছে। এই বিক্রি আগামীকালও বাড়বে।
অন্যদিকে শপিং মলের পাশাপাশি রাজধানীর ফুটপাতেও পূজার বেচাকেনার ধুম লেগেছে। ফুটপাতের জামাকাপড় বিক্রেতারা জানান, পূজা উপলক্ষ্যে ভালোই বিক্রি হচ্ছে। এখনও পূজার বেশ কয়েকদিন বাকি আছে। আগে দৈনিক দেড়-দুই হাজার টাকা বেচাকেনা হতো। এখন অনায়াসে ৫-৮ হাজার টাকা বেচাকেনা হয়।
