খেলাধুলা করতে না পারায় শিশুরা হয়ে উঠছে আত্মকেন্দ্রিক: আবদুল হাই শিকদার
শাহবাগ (ঢাকা) সংবাদদাতা
প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৫৮ পিএম
‘শিশু অধিকার সপ্তাহ ২০২৫’-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিচ্ছেন যুগান্তর সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদার। ছবি: যুগান্তর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
যুগান্তর সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদার বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন স্বপ্ন ছিল শোষণমুক্ত সমাজ, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার। কিন্তু দুঃখের বিষয়, মুক্তিযুদ্ধের সাড়ে তিন বছরের মধ্যেই সেই স্বপ্ন উধাও হয়ে গেল। গত ৫৫ বছরে ঢাকা শহরের খেলার মাঠগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। এতে শিশু বাধ্য হয়ে রাস্তায় খেলাধুলা করে। একদিকে আমরা খেলার মাঠ ধ্বংস করছি, আরেকদিকে বাচ্চাদের হাতে মোবাইল ফোন তুলে দিচ্ছি। শিশু এখন আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থপর হয়ে উঠছে। তাদের এই আসক্তি থেকে মুক্ত করতে হবে।
শিশু একাডেমি মিলনায়তনে মঙ্গলবার ‘শিশু অধিকার সপ্তাহ ২০২৫’-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিশু একাডেমির মহাপরিচালক দিলারা বেগম। প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নওশীন জাফরিন ও সুনিপুন বড়ুয়া চৌধুরী। শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন শরিফ ইফতিহাজ আহমেদ ও তাহরিন আহমেদ তানিশা। যারা উভয়েই শিশু একাডেমির প্রশিক্ষণার্থী। আলোচনা শেষে শিশু সপ্তাহ উপলক্ষ্যে আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। পরে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির শিশুদের আয়োজনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
কবি আবদুল হাই শিকদার দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার আমার সৌভাগ্য হয়েছিল। যুদ্ধে দেশ স্বাধীন করার পর আমাদের স্বপ্ন ছিল, এমন একটা দেশ হবে যেখানে শিশুরা হাসবে খেলবে, সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন হবে। শোষণমুক্ত সমাজ হবে। যেখানে ন্যায়বিচার থাকবে। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। থাকবে গণতন্ত্র। কিন্তু দুঃখের বিষয়, মুক্তিযুদ্ধের সাড়ে তিন বছরের মধ্যেই সব উধাও হয়ে গেল।
তিনি আরও বলেন, ইসলামাবাদের মতো ছোট্ট শহরে আমি নিজেই দেখেছি ৯০টিরও বেশি খেলার মাঠ রয়েছে। আমাদের শিশু যাবে কোথায়? শিশুর হাতে মায়েরা বাধ্য হয়ে মোবাইল ফোন তুলে দিচ্ছেন। মোবাইল ফোন এখন মহামারি আকার ধারণ করেছে। এখান থেকে আমাদের শিশুদের মুক্ত করতেই হবে। বাংলাদেশে এখনো ফুটপাতে শিশু খাবারের জন্য হাত পাতে। তাদের অর্থনৈতিক সমস্যা, খাদ্য সমস্যা, চিকিৎসার সমস্যা সবই বিদ্যমান। এর জন্য তো আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি।
তবে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, এত কিছুর মধ্যেও শিশু একাডেমি ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও শিশুদের জন্য কিছু করছে। আমার বিশ্বাস, এই শিশুরা একদিন অনেক বড় হয়ে উঠবে। এখান থেকেই একদিন আমরা অধ্যাপক ইউনূসের মতো বড় বড় মানুষ খুঁজে পাব।
সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ বলেন, আমাদের রাস্তার আইল্যান্ডে শিশু তার মায়ের সঙ্গে বসে থাকে একমুঠো খাবারের অপেক্ষায়। আমাদের সরকারিভাবে শিশু নিবাস কেন্দ্র মাত্র ছয়টি। তার মধ্যে দুইটি কন্যাশিশুদের। আমাদের শিশু নিবাস কেন্দ্র আরও বাড়াতে হবে। দেশের ৮০ ভাগ প্রান্তিক শিশুই মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। এর থেকে শিশুকে রক্ষা করতে হবে।
দিলারা বেগম বলেন, সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানমালায় শিশুদের জন্য বেশকিছু সুপারিশ গৃহীত হয়। সুপারিশগুলোর মধ্যে অন্যতম শিশুদের রাজনৈতিক বা নির্বাচনি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া যাবে না। বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সিএসআর তহবিল থেকে পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক শিশুদের জন্য ব্যয় নিশ্চিত করতে হবে।
