প্রতীকী ছবি।
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ইতোমধ্যে নির্বাচনের নানা দিক নিয়ে প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। অধিকাংশ রাজনৈতিক দলও ভোটের মাঠে নেমে পড়েছে। তবে নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বাড়ছে বিতর্ক ও চাপ।
নির্বাচনে অংশ নিতে যাওয়া প্রধান তিন রাজনৈতিক দল—বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি—সরকার ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) ও বুধবার (২২ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে পৃথক বৈঠকে তারা নির্বাচন কমিশন, মাঠ প্রশাসন এবং কয়েকজন উপদেষ্টার নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। পাশাপাশি ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়ন ও গণভোটের সময় নিয়েও দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বর্তমান পরিস্থিতি এক ধরনের রাজনৈতিক জটিলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে সরকারকে সব রাজনৈতিক দলের আস্থা ধরে রাখতে হবে এবং নিরপেক্ষতা প্রমাণে আরও দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সময় রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ নেওয়া হয়েছিল। তবে উপদেষ্টারা কেউ সরাসরি কোনো দলের অনুসারী নন। তারপরও যদি কোনো উপদেষ্টাকে নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, তাহলে সরকারকে সেটি বিবেচনায় নিতে হবে। বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য নিরপেক্ষতার জায়গাটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন নিয়ে হঠাৎ প্রশ্ন ওঠার বিষয়টি পর্যালোচনার দাবি রাখে। এটা দলীয় প্রতীকের কারণে কি না, তা দেখা দরকার। তবে অবাধ নির্বাচনের স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় আনা সরকারের মূল দায়িত্ব।
অধ্যাপক মোহাম্মদ আইনুল ইসলাম বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনাস্থা তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ নির্বাচন কমিশন ও সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে। ফলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় সবাইকে নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোই এখন মূল চ্যালেঞ্জ।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের বাকি আছে মাত্র কয়েক মাস। এখন সরকারের ওপর অনাস্থা প্রকাশ মানে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া। তাই সরকারকে দ্রুত উদ্যোগ নিয়ে সব দলকে আস্থায় আনতে হবে।
বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে দলটির পক্ষ থেকে দুই উপদেষ্টার বিরুদ্ধে আপত্তি জানানো হয়। দলটি প্রধান উপদেষ্টাকে ‘তত্ত্বাবধায়ক’ সরকারের মতো নিরপেক্ষ ভূমিকা গ্রহণের আহ্বান জানায়। পরদিন প্রেস ক্লাবে বিএনপি নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্বাচনে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে যাদের অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ, তাদের সরকারে রাখা ঠিক হবে না।
বুধবার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জামায়াতের সঙ্গে বৈঠকে নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আমাদের আস্থা আছে। তবে তার আশেপাশের কিছু মানুষ তাকে বিভ্রান্ত করছে এবং একটি বিশেষ দলের পক্ষে কাজ করছে।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, প্রশাসন ও আইন বিভাগে এখনো ৭০-৮০ শতাংশ কর্মকর্তা একটি দলের প্রভাবে কাজ করছেন।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য উপদেষ্টা পরিষদের নিরপেক্ষতা ও দক্ষতা নিশ্চিত করা জরুরি। তবে পুরো পরিষদ পরিবর্তনের সুযোগ নেই। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের বর্তমান আচরণও নিরপেক্ষ নয়; প্রতিষ্ঠানটি পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের প্রস্তুতি ও নির্বাচন আয়োজনের মনোভাব ইতিবাচক হলেও নিরপেক্ষতার প্রশ্নে আরও সতর্কতা জরুরি। অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে-বাইরে যাদের কারণে নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, তাদের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে জুলাই সনদ ও গণভোটের সময়সূচি নিয়ে ঐকমত্য গড়ে তোলা প্রয়োজন।
তাদের মতে, সব দলের আস্থা অর্জনের মাধ্যমেই কেবল একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথে দেশ এগিয়ে যেতে পারবে।


-68fa8047a5c59.jpg)