Logo
Logo
×

জাতীয়

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা

রাজনৈতিক অঙ্গীকার ছাড়া মানসম্মত শিক্ষা অসম্ভব

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৫১ পিএম

রাজনৈতিক অঙ্গীকার ছাড়া মানসম্মত শিক্ষা অসম্ভব

বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) দপ্তরে আয়োজিত এক গোলটেবিলে বক্তারা এ কথা বলেন। সংগৃহীত ছবি

দেশে মানসম্মত শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক অঙ্গীকার প্রয়োজন বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ, গবেষক ও বিশেষজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা। তাদের মতে, শিক্ষা খাতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাব, রাজনৈতিক অঙ্গীকারের অনুপস্থিতি, জবাবদিহিতার ঘাটতি এবং সামাজিক সচেতনতার অভাবে দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় একটি মৌলিক রূপান্তর প্রয়োজন।

এ জন্য রাজনৈতিক অঙ্গীকারের পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষপে গ্রহণ করতে হবে। বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বিকাল ৪টায় রাজধানীর সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) দপ্তরে আয়োজিত এক গোলটেবিলে তারা এ সব কথা বলেন।

‘Education Matters: Championing the True Value of Investing in Education for a Stronger Bangladesh’ প্রকল্পের অংশ হিসেবে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম) এবং ইউনেস্কো যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। অনুষ্ঠানে ‘The Price of Inaction: The global private, fiscal and social costs of children and youth not learning’ প্রতিবেদনটির বাংলা অনুবাদ প্রকাশ ও এর কার্যকর বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা হয়। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন।

অনুষ্ঠানের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নুরজাহান খাতুন, জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির মহাপরিচালক জুলফিকার হায়দার, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যায়ন কর্তৃপক্ষ সদস্য এবাদুল হক, মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে মাধ্যমিকের পরিচালক খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহল,ইনস্কোর ও বিভিন্ন প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। 

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে শিক্ষার মান ও প্রবেশাধিকার উভয় দিক থেকেই পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। প্রাথমিক স্তরে ঝরে পড়ার হার ১৩.৯৫ শতাংশ আর মাধ্যমিকে ৩২.৮৫ শতাংশ। আবার কিছু প্রত্যন্ত অঞ্চলে ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী মাধ্যমিক শেষ করার আগেই স্কুল ত্যাগ করছে। ন্যাশনাল স্টুডেন্ট অ্যাসেসমেন্ট ২০২২ অনুযায়ী, পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ৫০ শতাংশ বাংলা সঠিকভাবে পড়তে পারে না এবং মাত্র ৩০% শিক্ষার্থী গণিতে প্রত্যাশিত মান অর্জন করে।

বক্তারা আরও বলেন, শিক্ষা খাতে বাংলাদেশে বরাদ্দ মাত্র ১.৮ শতাংশ জিডিপি, যেখানে ন্যূনতম ৫ শতাংশ হওয়া উচিত। তারা বলেন, ‘যেখানে বিনিয়োগ কম, সেখানেই মানের সংকট। শিক্ষা হলো ভবিষ্যতের বিনিয়োগ, ব্যয় নয়।’ 

তাদের মতে, রাজনৈতিক নেতৃত্বের অঙ্গীকারের অভাবই বড় ব্যর্থতা। ‘আমরা শিক্ষক, মিডিয়া, অভিভাবক সবাইকে দায়ী করি, কিন্তু আসলে রাজনৈতিক নেতৃত্বই দিকনির্দেশনা দেয় না। দেশের শিক্ষা খাতে ১৭ ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রয়েছে—এটি শুধু বৈষম্য নয়, শিক্ষার্থীদের জন্য বিভ্রান্তিকরও।’

আলোচনায় উঠে আসে, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, পারফরম্যান্স-ভিত্তিক মূল্যায়ন ও একাউন্টেবিলিটি না থাকায় শিক্ষার গুণগত মান কমছে। বক্তারা বলেন, শিক্ষকদের মধ্যে আত্মপ্রেরণা থাকলে তারা পড়ান, না থাকলে বেতন পেলেই দায়িত্ব শেষ।

বক্তারা শিক্ষা খাতে রূপান্তরের জন্য কিছু মূল দিক নির্দেশনা দেন—দেশে শিক্ষকদের জন্য আলাদা কমিশন থাকা উচিত, যাতে নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়ন মানসম্মত হয়। রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও সামাজিক চুক্তি গঠন। শিক্ষাকে বিকেন্দ্রীকরণ ও সমান মানের স্কুল প্রতিষ্ঠা। টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল শিক্ষা সম্প্রসারণ। শিক্ষকদের যোগ্যতা, সম্মান ও প্রণোদনা বৃদ্ধি। আসন্ন নির্বাচনের দলীয় ইশতেহারে শিক্ষা খাতের অগ্রাধিকার অন্তর্ভুক্তি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম