ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যাবে হাসিনার রায়ের কপি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০১:৫৭ পিএম
শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সহযোগী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তবে বিচার শুরুর আগে থেকেই এই দুই আসামি পলাতক। এখন প্রশ্ন উঠেছে, এই দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া কী? রায়ের কপি কোথায় যাবে? কে কে পাবেন রায়ের কপি?
তবে নিয়ম অনুযায়ী পাঁচ বছর দণ্ডপ্রাপ্ত মামুন ও তার আইনজীবী রায়ের কপি পাবেন। কিন্তু পলাতকরা পাবেন না।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রায়ের পর নিয়ম অনুযায়ী কপি যাবে ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের (ডিএম) কাছে। তবে সেটা কবে যাবে, কখন যাবে, সেটি সুনির্দিষ্টভাবে কেউ নিশ্চিত করেননি। এছাড়া রায়ের কপি পাবেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তথা প্রসিকিশন এবং গ্রেফতার হওয়া আসামি ও তার পক্ষের আইনজীবী।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ) মাহমুদুল হাসান বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় ট্রাইব্যুনাল রায় দিয়েছেন, রায়ের সার্টিফায়েড কপি এখনো প্রকাশ করা হয়নি। রায়ের কপি প্রকাশের পর ট্রাইব্যুনাল থেকে প্রসিকিউশন, গ্রেফতার আসামি মামুন ও ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠানো হবে।
এরপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যাকে যাকে প্রয়োজন, তার কাছে কপি পাঠাবে। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল থেকে রায়ের কপি পাবেন প্রসিকিউশন ও গ্রেফতার আসামি।
একই সঙ্গে এ সংক্রান্ত রায়ের কপি ঢাকা জেলার ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে (ডিএম) যাবে। তবে পলাতক থাকায় হাসিনা ও কামাল রায়ের কপি পাবেন না বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, সরকারি দপ্তরে রায়ের কপি পাঠানোর জন্য ট্রাইব্যুনাল প্রশাসন নির্দিষ্ট প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইজিপির মতো সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে পাঠিয়ে থাকে, যা মামলার ধরনের ওপর নির্ভর করে।
অন্যদিকে, বিচারপ্রার্থী বা আইনজীবীরা সার্টিফায়েড কপি পাওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেন এবং একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা সংগ্রহ করেন।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম জানান, আদালত সুনির্দিষ্ট করে যেসব দপ্তরে রায়ের কপি পাঠানোর কথা বলেছেন ওইসব দপ্তরে রায়ের কপি যাবে।
তিনি বলেন, আইনে বলা আছে রায় যাবে সরকারের সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের (ডিএম) কাছে। এরপর আদালত যদি সুনির্দিষ্ট করে কোনো মন্ত্রণালয় বাদ দপ্তরের কথা উল্লেখ করে থাকেন তখন ওই রায় সেখানে পাঠানো হবে।
সাধারণত মামলার রায়ের পর দুটি প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হয়। একটি সরকারি দপ্তরে পাঠানো এবং আরেকটি বিচারপ্রার্থীর জন্য (সার্টিফায়েড কপি) দেওয়ার প্রক্রিয়া।
সরকারি দপ্তরে রায়ের কপি পাঠানো
ট্রাইব্যুনাল রায়ের পর প্রশাসনিকভাবে এই কপিগুলো সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে (যেমন: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইজিপির দপ্তর) পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়াটি সাধারণত আদালতের নিজস্ব প্রশাসনিক ব্যবস্থার অধীনে হয়ে থাকে।
রায় কার্যকরের পদ্ধতি
এই মামলায় রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের জন্য আর কী আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, পাঁচ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন আপিল করার সুযোগ পাবেন। কিন্তু পলাতক থাকায় হাসিনা ও কামাল এ মামলায় আপিল করতে পারবেন না। তবে, তারা যদি আত্মসমর্পণ করেন বা গ্রেফতার হন, তাহলে আপিল করার সুযোগ পাবেন।
আইন সমিতির আহ্বায়ক, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনির হোসেন বলেন, হাসিনা ও কামালের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর এর কপি গ্রেফতার আসামি, প্রসিকিউশন ও সরকারের কাছে যাবে। পলাতক আসামিকে আপিল করতে হলে গ্রেফতার হতে হবে বা আত্মসমর্পণ করতে হবে। অন্যথায় তিনি আপিল করতে পারবেন না।
সেক্ষেত্রে আপিলের নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পর ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী আসামিকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করবে সরকার। তারপর যদি দেখা যায় যে, তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না, বা তিনি নিজে আসছেন না; সেক্ষেত্রে যখন তাকে পাওয়া যাবে, তখনই রায় কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে। রায় কার্যকরের জন্য রাষ্ট্র আইনিভাবে সেটি কার্যকরের ব্যবস্থা করবে। গ্রেফতার আসামি মামুন পাঁচ বছরের সাজার বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন। এক্ষেত্রে মামুনের সাজা বাড়াতে রাষ্ট্রপক্ষও আপিল করতে পারবে।
বিচারপ্রার্থীর জন্য নকল বা সার্টিফায়েড কপি পাওয়ার প্রক্রিয়া
যদি কোনো বিচারপ্রার্থী বা আইনজীবী রায়ের কপি পেতে চান, তাহলে তাদের আদালতে একটি নকলের আবেদন করতে হয়। এই আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পর একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আদালত থেকে রায়ের নকল বা সার্টিফায়েড কপি সরবরাহ করা হয়।
ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর আপিল বিভাগে আপিলের সুযোগ থাকে। আপিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রায় বহাল, সংশোধন বা বাতিল হতে পারে। আপিল বিভাগের রায়ের পরও আসামিপক্ষ রিভিউ আবেদন করতে পারে। রিভিউ নিষ্পত্তির পর রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থণার সুযোগ রয়েছে।



-6889059347807-68b6a6c1e6675-68b97a6858cf4-691d478dec168.png)
