Logo
Logo
×

জাতীয়

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ: যানজটে যাত্রীদের ভোগান্তি

Icon

যাত্রাবাড়ী (ঢাকা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৪৪ পিএম

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ: যানজটে যাত্রীদের ভোগান্তি

গ্যাসের দাবিতে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের শনিরআখড়ায় সড়ক অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধ গ্রাহকরা।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর শনিরআখড়ায় গ্যাসের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টা থেকে বিকাল সোয়া ৩টা পর্যন্ত ব্যানার প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে— গ্যাস চাই গ্যাস চাই, সিন্ডিকেটের কালো হাত ভেঙে দাও, জ্বালিয়ে দাও- বলে বিক্ষোভ করেন।

বিকাল সোয়া ৩টার দিকে ডিএমপির ওয়ারী জোনের এডিসি আকরাম তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে গ্যাস সরবরাহের আশ্বাস দেওয়ার পর আন্দোলনকারীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে।

এদিকে ৩ ঘণ্টা সড়ক অবরোধের ফলে মহাসড়কের দুইপাশের কাঁচপুর-মদনপুর  ও মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার, গুলিস্তান, ঢাকা মেডিকেলসহ আশপাশের ৮-৯ কিলোমিটারজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ঢাকা অভিমুখী ও ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া দুরপাল্লার যাত্রীসহ রাজধানীর শহর সার্ভিসের বাসের যাত্রী এবং প্রাইভেটকারের যাত্রীদের চরম ভোগান্তি হয়। বিশেষ করে ঢাকা মেডিকেলসহ রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অ্যাম্বুলেন্সের রোগীরা চরম ভোগান্তির শিকার হন। নোয়াখালী থেকে অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে আসার পথে এক রোগীর মৃত্যু হয়।

আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, দীর্ঘ ৩ মাস যাবৎ এলাকায় গ্যাস নেই। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৬২ নম্বর ওয়ার্ডের শেখদী, মৃধাবাড়ি, ভাঙ্গাপ্রেস, ৬১ নম্বর ওয়ার্ডের দনিয়া পুরাতন, দক্ষিণ দনিয়া ২, দক্ষিণ দনিয়া ১, ইটালি মার্কেট, রসুলপুর, কুতুবখালী, আদর্শ বালিকা, দনিয়া কবরস্থান রোড, মধ্য রসুলপুর, ৬০ নম্বর ওয়ার্ডের পলাশপুর, স্মৃতিধারা, মুক্তধারা, জনতাবাগ, পাটেরবাগ, নুরপুর, রসুলবাগ, ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের নামা শ্যামপুর, মাদবর বাজার, শ্যামপুর বড় মসজিদ এলাকা, ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেরাজনগর, মোহাম্মদবাগ, কদমতলী, ঢাকা ম্যাচ এবং ৫২ ও ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় গ্যাসের তীব্র সংকট বিরাজ করছে।

এই এলাকায় ২ থেকে ৪ শতাধিক একতলা থেকে বহুতল আবাসিক ভবন রয়েছে। শিশু, বৃদ্ধ, শিক্ষার্থী এবং নারীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রায় ৩ লক্ষাধিক লোকের বসবাস এই এলাকায়। গ্যাস না থাকায় বাসায় রান্না করা যাচ্ছে না। এতে বাসাবাড়িতে খাবারের চরম সমস্যা হচ্ছে। শুকনো খাবার ও হোটেল থেকে খাবার কিনে খেতে হচ্ছে। অনিয়মিত ও হোটেলের খাবার খেয়ে অসুস্থ হচ্ছে বাসিন্দারা। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক লোক, শিক্ষার্থী এবং অফিসগামীদের চরম সমস্যা হচ্ছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৬২ নম্বর এলাকার বাসিন্দা ও ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক ফারুক খান রিপন বলেন, আমাদের এই ভোগান্তির বিষয়ে তিতাস গ্যাসের বিভিন্ন দপ্তরে এবং প্রধান কার্যালয়ে লিখিত বহু অভিযোগ করেও কোনো ফলাফল পাইনি।

তিনি আরও বলেন, গত ৩ মাস ধরে হঠাৎ করে গ্যাস সরবরাহ একেবারেই নেই বললে চলে। আমরা আশংকা করছি এটা কোন সিন্ডিকেটের কারসাজিতে এ সংকট চলছে। সরকারের কাছে আমাদের দাবি যাতে দ্রুত গ্যাস সংকট নিরসন করা হয়।

৬০ নম্বর ওয়ার্ডের গ্যাস রোডের বাসিন্দা নাছির উদ্দিন বলেন, আজ থেকে ৩ মাস যাবৎ বাসার চুলায় গ্যাস নেই। বাধ্য হয়ে অনেকেই বাসাবাড়ির ভিতরে, বারান্দায়, ছাদে  লাকরির চুলায় রান্না করে জীবন ধারন করছেন। তিনি আরও বলেন, আমরা প্রতি মাসে নিয়মিত গ্যাস বিল পরিশোধ করেও গ্যাস পাচ্ছিনা। এই ব্যাপারে আমরা তিতাস গ্যাস অফিসে অভিযোগ করেও কোনো কাজ হচ্ছে  না।

৫৮ নম্বর বড় মসজিদ এলাকার বাসিন্দা শামীম আহমেদ শামু যুগান্তরকে বলেন, আমাদের পরিবারে ৪ জন শিশু বাচ্চা রয়েছে। টানা ২মাস যাবৎ চুলায় বিন্দু পরিমাণ গ্যাস না থাকায় খাওয়া দাওয়ায় চরম কষ্ট হচ্ছে। এভাবে তিন বেলা হোটেলের খাবার খেয়ে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

কদমতলী এলাকার বাসিন্দা ৫৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. খোরশেদ আলম খোকন বলেন, আমাদের ৫৯ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় প্রায় ১০/১২ বছর গ্যাসের সংকট চলছে। বহুবার গ্যাস অফিসে আবেদন করেছি কোন সুরাহা হয়নি। আজ ৩ মাস যাবৎ চুলায় মোটেই গ্যাস নেই। 

জনতাবাগ এলাকার বাসিন্দা বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম নুরু বলেন, বাসাবাড়িতে হঠাৎ গ্যাস না থাকায় হাহাকার চলছে। ভাড়াটিয়ারা বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।

সাবেক কাউন্সিলর ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ মহিলা দলের সহ-সভাপতি খালেদা আলম বলেন, গ্যাস না থাকার কারণে বাসাবাড়িতে রান্না করতে পারছি না। শহরের ভিতর বাসাবাড়িতে লাকড়ি দিয়ে রান্না করা সম্ভব না।

দনিয়া ইউপির সাবেক মেম্বার ৬০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. ইউসুফ আলী ভুইয়া বলেন, গ্যাস কর্তৃপক্ষ বিল নিচ্ছে অথচ গ্যাস দিচ্ছে না।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৬১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জুম্মন মিয়া বলেন, ৬১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় আজ ৩ মাস ধরে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। যার ফলে মানুষের বিশেষ করে বয়স্ক, শিক্ষার্থী ও শিশুদের চরম কষ্ট হচ্ছে।

এদিকে সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে ডিএমপির ওয়ারী জোনের এডিসি মো. আকরামূল হক, ডেমরা জোনের এসি মো. শামীম ও যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মো. রাজু বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। গ্যাস সংকটের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে তুলে ধরে সমাধানের আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা অবরোধ তুলে নেন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম