জবাবদিহিতা থেকে সরে গেছি বলেই মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে: সুলতানা কামাল
তেজগাঁও (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:২৩ পিএম
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সেমিনার হলে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল। ছবি: যুগান্তর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলেছেন, মানুষ হয়ে জন্ম নিলে যে অধিকার সহজাত ও অলঙ্ঘনীয়, রাষ্ট্র তার সুরক্ষাকারী মাত্র, দাতা নয়। অন্যদিকে ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলীর মতে, বাংলাদেশে বিরাজমান ‘ভয়ের সংস্কৃতিই’ মানবাধিকার বাস্তবায়নে প্রধান বাধা।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে এক বিশেষ আলোচনা সভায় মানবাধিকার কর্মী ও বিশিষ্টজনেরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, সমাজে ভয়ের সংস্কৃতি, ন্যায়বিচার এবং জবাবদিহিতার অভাবের কারণে মানবাধিকারের মৌলিক ধারণাটিই প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) বিকালে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সেমিনার হলে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব মন্তব্য করেন।
আলোচনা অনুষ্ঠানের সূচনা করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী। শিল্পী প্রমিলা বিশ্বাসের পরিবেশনায় বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি... সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
ডা. সারওয়ার আলী তার সূচনা বক্তব্যে স্পষ্টভাবে বলেন, আমরা সবসময় ভয়ের সংস্কৃতির মধ্যে বাস করছি। মানবাধিকার বাস্তবায়নে ভয়ের সংস্কৃতিই প্রধান বাধা। এই সংস্কৃতি থেকে আমাদেরকে অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সমাজের প্রতিটি স্তরে নির্ভীক পরিবেশ তৈরি না হলে মানুষের সহজাত অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা ছিলেন বিশিষ্ট মানবাধিকার-কর্মী সুলতানা কামাল। মানবাধিকারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, মানবাধিকার নিয়ে কথা বলতে এখন দ্বিধা বোধ করি। মানবাধিকারের কথা যদি কারো কাছে বলি সেটা কতটা শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথে গৃহীত হবে, সেই শঙ্কা রয়ে যায়।
সুলতানা কামাল রাষ্ট্রের ভূমিকা প্রসঙ্গে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন- ‘রাষ্ট্র অধিকার দেবার মালিক নয়। রাষ্ট্র কেবল এর সুরক্ষা করবে।’ তিনি ১২১৫ সালের ম্যাগনাকার্টার উদাহরণ টেনে বলেন, ২০২৫ সালে এসেও আমরা সেই মৌলিক অধিকারগুলো নিয়েই কথা বলছি— কোনো মানুষকে সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া গ্রেফতার করা যাবে না, হিংসাত্মক আচরণ করা যাবে না, চলাফেরার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা যাবে না।
মানবাধিকার সুনিশ্চিত করার জন্য স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার এবং শান্তিকে অপরিহার্য শর্ত হিসেবে উল্লেখ করেন সুলতানা কামাল। তিনি বলেন, মানবাধিকার কেবল আইনের বিষয় নয়, এটি মৌলিক সংস্কৃতির বিষয় যা আমাদের আচরণে প্রতিফলিত হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের মধ্যে জবাবদিহিতার সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে। সমাজের কাছে, পরিবারের কাছে, সব ক্ষেত্রেই আমাদের জবাবদিহিতা আছে। এটা থেকে সরে গেছি বলেই মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের সংবিধানে যে সাম্য, মূল্যবোধ ও ন্যায়বিচারের মূল কথা বলা হয়েছে, এর বিপরীতে গেলেই মানবাধিকারের লঙ্ঘন ঘটে।
