জেনে নিন কীভাবে সরকারি নমুনা অনুসরণ করে দলিল তৈরি করবেন
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৫০ এএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আমরা অনেক সময় জমি রেজিস্ট্রি করতে গিয়ে ভুল করে ফেলি। আর একবার দলিল ভুল হয়ে গেলে মহাবিড়ম্বনায় পড়ি। যদিও অনেকের ধারণা—একবার দলিল ভুল হয়ে গেলে তা আর সংশোধন করা যায় না। এটি মোটেও ঠিক নয়; এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।
কারণ জমির দলিলে রেজিস্ট্রির পর তাতে দাগ, খতিয়ান, মৌজা ও চৌহদ্দি কিংবা নামের বানানে কোনো প্রকার ভুল ধরা পড়ে তবে তা ঠিক করা যায়। এটি সময়সাপেক্ষ বিষয়।
যদি আপনি দলিল ভুল করেই ফেলেন, তবে তা তিন বছরের মধ্যে দেওয়ানি আদালতে দলিল সংশোধনের মামলা করতে পারবেন। তিন বছর পর সেই ধরনের মামলা তামাদির কারণে বারিত হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে সংশোধন মামলা করা যায় না। তবে তখন ঘোষণামূলক মামলা করা যায়।
এ ক্ষেত্রে আদালত কর্তৃক প্রদানকৃত মামলার রায়ই হচ্ছে সংশোধন দলিল। রায়ের ১ কপি আদালত থেকে সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রারের নিকট পাঠানো হলে সাব-রেজিস্ট্রার ওই রায়ের আলোকে সংশ্লিষ্ট ভলিউম সংশোধন করে নেবেন। এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ৩১ ধারায় নতুন করে আর কোনো দলিল করার প্রয়োজন হবে না।
আর আপনি দলিল রেজিস্ট্রির আগে এ ঝামেলা এড়াতে সরকারি নমুনা অনুসরণ করে দলিল তৈরি করতে পারেন। একজন দক্ষ দলিললেখক আর একাধিক দলিল প্রুফ রিডিং দিয়ে কাজ করালে বড় কোনো ধরনের ভুলত্রুটি থাকে না। এ ক্ষেত্রে দক্ষ ও অভিজ্ঞ দলিললেখক নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । তাই আপনার জমির দলিললেখক তালিকাভুক্ত কিনা তা যাচাই করে দলিল তৈরি করুন।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে নির্ভুল দলিল তৈরি করবেন—
১. শুরুতেই দলিল সম্পাদনকারী তথা জমিদাতা (বিক্রেতা) আইনের দৃষ্টিতে সাবালক ও সুস্থ মস্তিষ্কে সম্পন্ন কিনা তা যাচাই করে নিন ৷
২. পুরোনো দলিল এবং নতুন দলিলের বিভিন্ন জায়গা যেমন (ক) শিরোনাম (খ) সাফকবলা (গ) বায়নাপত্র ইত্যাদি খেয়াল করুন ৷
৩. ক্রেতা যে জমিটি কিনতে যাচ্ছেন সেই প্রস্তাবিত জমিটির পরিমাণ বিক্রয় মূল্য (এ ক্ষেত্রে যদি বায়না দলিল হয়, তাহলে বায়নায় পরিশোধিত টাকা এবং বাকি টাকা) পক্ষ পরিচয় তথ্য (ক) দলিল গ্রহীতা (খ) দলিলদাতা— প্রথম পক্ষ ও দ্বিতীয় পক্ষ উভয় পক্ষের পূর্ণ নাম, ঠিকানা, পেশা, ধর্ম ইত্যাদি। আর যদি জমিদাতার মালিকানার ভিত্তি, দলিলমূলে হয়, তবে পূর্বের দলিলের নম্বর ও তারিখ পর্চা/খতিয়ান নজর দিন ৷
৪. যদি জমিদাতা জমিটি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে থাকেন, তবে মূল মালিকের সঙ্গে বিক্রেতার যোগসূত্র ও সম্পর্ক সঠিক আছে কিনা তা জেনে নিন ।
৫. দলিলে প্রস্তাবিত জমির তফশিল যেমন— জেলার নাম, উপজেলার নাম, রেজিস্ট্রি অফিসের নাম, মৌজার নাম, দাগ নং, খতিয়ান নম্বর এবং জমিটি কোন শ্রেণির যেমন— ভিটা, নাকি দলা, ডাঙ্গা ও জলাভূমি তা দেখে নিন ।
৬. ক্রেতা জমি বিক্রেতার জমিটির চৌহদ্দি ঠিক আছে কিনা— উত্তর, দক্ষিণ পূর্ব ও পশ্চিম পাশের জমির বর্ণনাসহ মালিকের নাম উল্লেখ করতে হবে।
৭. জমি বিক্রেতা কিংবা দলিলদাতা দলিলের ১ম পৃষ্ঠার ওপরের ডান পাশের নিচ থেকে ওপরের দিকে তার নিজ নাম স্বাক্ষর করবেন অথবা নিরক্ষর হলে নিজ নামের ওপরে টিপসহি প্রদান করেছেন কিনা তা দেখতে হবে। এ ছাড়া জমি বিক্রেতা বা দাতা দলিলের শেষ পৃষ্ঠার নিচে স্বাক্ষর বা টিপসহি করবেন। তবে দলিলের প্রতি পৃষ্ঠায় দাতার স্বাক্ষর বা টিপসহি দিলে ভালো হয়।
৮. জমির বিক্রেতা দলিলের শেষ পৃষ্ঠার নিচে যে জায়গায় তার নিজ নাম স্বাক্ষর বা টিপসহি করেছেন ঠিক তার নিচে ওই দলিললেখক তার নাম স্বাক্ষর করবেন; এরপর কমপক্ষে দুজন সাক্ষী এবং একজন জমির বিক্রেতাকে শনাক্ত করে শনাক্তকারী হিসাবে স্বাক্ষর করবেন।
৯. যতদূর সম্ভব দলিলে কাটাকাটি, ঘষামাঝা এবং অষ্পষ্টতা এড়াতে হবে। তবু যদি কোনো কারণে ভুলক্রটি, ঘষামাঝা ও কাটাকাটি হয়, তবে সে ক্ষেত্রে উওই কাটাকাটি বা ঘষামাঝা যুক্ত লাইন ও শব্দের ক্রম উল্লেখ করে দলিলের শেষাংশে কৈফিয়ত লিখে দলিললেখককে তার নিচে স্বাক্ষর করতে হবে।
১০. আর জমির তফশিল লেখার সময় প্রত্যেক দাগে মোট জমির পরিমাণ কত এবং আদ্যকার বিক্রয় দলিলে উক্ত দাগের মধ্য থেকে কত একর বা শতাংশ জমি দেওয়া হচ্ছে তা প্রতি ক্ষেত্রে লিখে নিতে হবে।
১১. জমির ক্রেতাকে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে, তা হলো বিভিন্ন জরিপের দাগ নম্বর ও খতিয়ান নম্বর, যাতে দলিললেখকের মাধ্যমে সঠিকভাবে লেখানো হয়। এ জন্য জমির ক্রেতাকে জমি ক্রয় করার আগেই তহশিল অফিস থেকে জমির সঠিক দাগ নম্বর ও খতিয়ান নম্বর জেনে নিতে হবে।

