যেভাবে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত হয়েছিলেন ওসমান হাদি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:১৪ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ভোটের তফসিল ঘোষণার পরপরই ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করার ঘটনা দেশের রাজনৈতিক আলোচনা তীব্র করে তুলেছে।
জুলাই আন্দোলন ও আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ আন্দোলনের পরিচিত মুখ হাদি তার রাজনৈতিক অবস্থান এবং সরাসরি সমালোচনামূলক বক্তব্যের জন্য সবার নজর কাড়ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র শরীফ ওসমান হাদি ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকার জন্য পরিচিত হয়েছিলেন। তার জন্ম ঝালকাঠির নলছিটিতে, পিতা ছিলেন মাদ্রাসার শিক্ষক। নেছারাবাদ কামিল মাদ্রাসায় শিক্ষাজীবন শুরু করে পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
এক সময় তিনি ইংরেজি শেখানোর কোচিং সেন্টার সাইফুরসে শিক্ষকতা করেছেন এবং সর্বশেষ ইউনিভার্সিটি অব স্কলারস নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন।
মাদ্রাসায় পড়ালেখা এবং তার ভাষা ও পোশাকের কারণে অনেকে হাদিকে কোনো ধর্মভিত্তিক গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত মনে করতেন। তবে সহকর্মীরা জানান, জুলাই আন্দোলনের আগে তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না; সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সক্রিয় ছিলেন এবং বইও লিখেছেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর তিনি ‘ইনকিলাব মঞ্চ’ প্রতিষ্ঠা করেন। সংগঠনের লক্ষ্য হলো- সব ধরনের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন করা।
সবশেষ ডাকসু নির্বাচনে ইনকিলাব মঞ্চের ফাতিমা তাসনিম জুমা মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন।
আওয়ামী লীগের সমালোচক হাদি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর বলেন, এটি পৃথিবীর জন্য নজির স্থাপন করেছে। বিভিন্ন সময় তিনি সেনাবাহিনী, বিএনপি এবং অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতা নিয়ে সমালোচনা করেছেন এবং জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাবও দিয়েছেন।
এছাড়া চলতি বছরের এনসিপির ডাকা কর্মসূচিতে সংঘর্ষের পর তিনি গোপালগঞ্জ জেলা ভেঙে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন। পরে বিতর্কিত মন্তব্যকে তিনি ‘মুক্তির মহাকাব্য’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।
নভেম্বর মাসে হাদি তার ফেসবুকে দাবি করেন, দেশি-বিদেশি অন্তত ৩০টি ফোন নম্বর থেকে তাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে, তার বাড়িতে আগুন দেওয়ার ও পরিবারের সদস্যদের ক্ষতির হুমকি এসেছে। তিনি বলেন, জীবননাশের আশঙ্কা থাকলেও ইনসাফের লড়াই থেকে তিনি পিছিয়ে যাবেন না।
সম্প্রতি হাদি ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দেন এবং প্রতি শুক্রবার জনসংযোগ কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
এরই মধ্যে আজ জুমার নামাজ শেষে বিজয়নগর কালভার্ট রোড এলাকায় প্রচার চালানোর প্রস্তুতিকালে দুর্বৃত্তদের ছোড়া গুলিতে তিনি আহত হন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে তাকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়েছে। সেখানে তার অস্ত্রোপচার চলছে।

