হাদি হত্যার বিচারে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:১৯ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র এবং জুলাই আন্দোলনের সম্মুখযোদ্ধা ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি বিচারিক ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তা নেওয়ার দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের।
তিনি বলেন, জুলাই-পরবর্তী বাংলাদেশের জন্য এই হত্যাকাণ্ড একটি বড় পরীক্ষা। এ ঘটনায় দৃশ্যমান ও কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে রাষ্ট্রের ওপর জনগণের আস্থা আরও ক্ষুণ্ন হবে। এজন্য ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তা নেওয়া জরুরি।
আবদুল্লাহ আল জাবের আরও বলেন, বাংলাদেশের অতীতেও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় আন্তর্জাতিক সহায়তা নেওয়া হয়েছে। ওসমান হাদির মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রেও সেই পথেই হাঁটতে হবে। তিনি বলেন, ওসমান হাদি ঢাকা-৮ আসনের একজন গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী ছিলেন এবং জুলাই-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে সাহসী কণ্ঠগুলোর একটি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কোনো ভয়ভীতি ছাড়াই তিনি সব সময় সত্য কথা বলেছেন।
বর্তমান সরকারব্যবস্থায় যে আপাত স্থিতিশীলতা দেখা যাচ্ছে, এর পেছনেও ওসমান হাদির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
হাদি হত্যাকাণ্ডের বিচার না হলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে উল্লেখ করে জাবের বলেন, ওসমান হাদির রক্ত ঝরেছে আর আমরা যদি খুনিদের বিচার দেখতে না পাই—তা হতে পারে না। জুলাই-পরবর্তী বাংলাদেশের জন্য এই প্রশ্ন কোনোভাবেই এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। বিচার নিশ্চিত না হলে দেশে এ ধরনের ঘটনা আরও বাড়বে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, সাম্প্রতিক সময়ে ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডকে মূল আলোচনা থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কিন্তু হাদিকে ‘মেইন সাবজেক্ট’ থেকে বাদ দিলে আর কোনো বিষয়ই মূল সাবজেক্ট থাকবে না। রাষ্ট্রের সব সিদ্ধান্ত হাদিকে কেন্দ্র করেই গ্রহণ করতে হবে বলে জোর দেন তিনি।
টাইম ফ্রেম প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, প্রধান উপদেষ্টা সম্প্রতি নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছেন। সেই প্রেক্ষাপটে ইনকিলাব মঞ্চ আশা করছে, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দ্রুত বিচারিক ট্রাইব্যুনাল গঠন এবং আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সহায়তা নেওয়ার বিষয়ে রাষ্ট্র স্পষ্ট সিদ্ধান্ত জানাবে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রকে জনগণের সামনে এসে জানাতে হবে— ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের বিচারে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। হাদির রক্তের সঙ্গে কোনো ধরনের আপস করা হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
উল্লেখ্য, জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারণার সময় গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে গুলিবিদ্ধ হন শরিফ ওসমান হাদি। গুলি মাথা ভেদ করে যাওয়ায় তিনি গুরুতর আহত হন। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। তিন দিন পর উন্নত চিকিৎসার জন্য সোমবার তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ১০টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও অভিযোগ করা হয়, অতিরিক্ত আইজিপিকে দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করিয়ে শহীদ ওসমান হাদি হত্যার ঘটনাকে তুচ্ছ ও অগুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে ইনকিলাব মঞ্চ আগামীর কর্মসূচি ও দাবি নিয়ে নতুন করে সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দিয়েছে।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির জানাজার আগে বক্তব্য দেন সংগঠনের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের। সে সময় তিনি দুই দফা দাবি তুলে ধরেন।
তিনি দাবি করেন, খুনি, খুনের পরিকল্পনাকারী, সহায়তাকারী এবং পুরো চক্রকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরীকে জনতার সামনে এসে গত এক সপ্তাহে এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানাতে হবে।

