ওই রাতে পুলিশের নিষ্ক্রিয় থাকার ব্যাখ্যা দিল ডিএমপি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:১৪ পিএম
ছবি: ডিএমপি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় ১৭ জনকে গ্রেফতারের তথ্য দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। পাশাপাশি সেই রাতে পুলিশ কেন নিস্ক্রিয় ভূমিকায় ছিল তার ব্যাখ্যা দিয়েছে ডিএমপি।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) এস এন মো. নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ওই রাতে পুলিশের ‘অ্যাকশনে’ নামতে না পারার কারণ হল, তাতে হতাহতের ঘটনা ঘটত।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘যে কারণে ওখানে আমরা অ্যাকশনে যেতে পারি নাই, কোনো হিউম্যান লাইফের কোনো অ্যাক্সিডেন্ট হয় নাই। এইটা আমি বলব যে, এই এত বড় একটা ইনসিডেন্টের আমাদের এচিভমেন্ট। যে কোনো ধরনের ক্যাজুয়ালটি ছাড়া এটাকে ট্যাকল দেওয়া গেছে।’
‘সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করা হয়ত সম্ভব’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘কিন্তু একটা হিউম্যান লাইফ যখন লস্ট হয়, এটা কোনো কিছুর বিনিময়ে আর ফিরায় আনা সম্ভব না। যে কারণে আমরা ওখানে অ্যাকশনে যাই নাই।’
শীর্ষ এই দুই গণমাধ্যমে হামলা-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩১ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
গ্রেফতাররা হলেন- মো. নাইম, মো. আকাশ আহমেদ সাগর, মো. আব্দুল আহাদ, মো বিপ্লব, মো. নজরুল ইসলাম মিনহাজ, মো. জাহাঙ্গীর, মো. সোহেল রানা, মো. হাসান, রাসেল ওরফে শাকিল, মো. আব্দুল বারেক শেখ আলামিন, রাশেদুল ইসলাম, সোহেল রানা, শফিকুল ইসলাম, মো. প্রান্ত ওরফে ফয়সাল আহমেদ প্রান্ত, আবুল কাসেম, রাজু হোসাইন ও মো. সাইদুর রহমান।
গ্রেফতারদের রাজনৈতিক পরিচয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা আমি খুঁজতে চাচ্ছি না, এরা দুষ্কৃতিকারী। তারা আইন ভঙ্গ করছে। আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে। বাংলাদেশের প্রচলিত যে আইন, যে বিচার ব্যবস্থা, সে বিচার ব্যবস্থায় তাদের বিচার নিশ্চিত করা হবে। সে যে দলেরই হোক, যে মতেরই হোক।’
‘মব ভায়োলেন্স’ ঠেকাতে ডিএমপি কতটা সক্ষম, প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা সক্ষম। সবসময় সব ঘটনা আমরা কার্ভ করতে পারব, বিষয়টা এরকম না। কারওয়ান বাজারের যে ঘটনাটা, ওখানে যে অবস্থা ছিল, এইটার অন্তরালে আরও কিছু বিষয় আছে। আমরা যদি ওখানে অ্যাকশনে যেতাম তাহলে গুলি হতো, দুই-চারজন মারা যেত।’
পুলিশের ওপর হামলা হলে এই বাহিনীকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া ‘সম্ভব না’ বলে মন্তব্য করেছেন অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘পাল্টা তারা পুলিশ ফোর্সের ওপর আক্রমণ করত। আমরা জানি না যে, তাদের মনের ভিতরে কী ছিল। যদি পুলিশের দুই চারজন সদস্য আবার সেদিন নিহত হইত, তাহলে আপনারা জানেন যে, পুলিশ জাস্ট এক বছর আগে বিরাট ট্রমা থেকে...আমরা তাদেরকে এই পর্যায়ে নিয়ে আসছি, সামনে ইলেকশন। এই পুলিশের যদি আবার নতুন করে ক্যাজুয়ালটি হয়, এই পুলিশটাকে দিয়ে আমি সামনে আগাইতে পারব না।’
সেদিন তাহলে পুলিশ কোনো অ্যাকশনেই যায়নি? সাংবাদিকের এই প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অ্যাকশনে গেছি, যতটুকু আমরা প্রয়োজন মনে করছি, যতটুকু আমাদের অবস্থা ছিল সেটা। অ্যাকশন যেটা সর্বোচ্চ, গুলি করা পর্যন্ত যেতে পারতাম। কিন্তু আমরা ওইটা অ্যাভোয়েড করার চেষ্টা করছি। কারণ যে পরিমাণ ওখানে জনবল ছিল, পাবলিক ছিল চার-পাঁচ হাজারের মত। এখানে আমার ৫০-১০০ জন ফোর্স নিয়ে অ্যাকশনে গেলে আমার পুলিশের এবং পাবলিকের বোথ সাইডে ক্যাজুয়ালিটি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।’
কারওয়ান বাজারে ওই রাতে পুলিশ কখন পৌঁছেছে, জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ তো ঘটনার আগেই পৌঁছাইছে। তারপর, তারপরে তো পুলিশ এটা প্রটেক্ট করার চেষ্টা করছে। পুলিশ বাধা দিছে, পারে নাই। পুলিশ এক পর্যায়ে মাফ চাইছে যে, আপনারা এই কাজটা করবেন না। কিন্তু আমাদের অ্যাকশন নেওয়ার মত সেখানে অবস্থা ছিল না।’
গুলি করার আগের পর্যায় কাঁদুনে গ্যাস বা সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করার মত অবস্থাও সেখানে ‘ছিল না’ বলেও জানিয়েছেন নজরুল ইমলাম।
এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে পুলিশ ‘একইভাবে’ ব্যর্থ হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা যদি এডভান্স ইনফরমেশন পাই, সেক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই মেজার নিব। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি, আর্মিও ফিল্ডে আছে, সকলেই কাজ করতেছে।’
এ ধরনের হামলার আগে কিছু ‘পরিচিত মুখ’ ফেইসবুক থেকে ‘ইন্ধন’ দিচ্ছে, তাদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘একটা মামলায় চারটা আইন ইনক্লুড হইছে। এত বড় মামলা এর আগে হইছে কিনা আমি জানি না। পেনাল কোড, স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট, এন্টি টেরোরিজম অ্যাক্ট একই মামলার মধ্যে আছে। আমরা এটার অ্যাকশন নেব।’
আরও কোনো সংবাধমাধ্যমের ওপর হামলার আশঙ্কা বা হুমকি রয়েছে কিনা জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের কাছে এরকম আপাতত ইনফরমেশন নাই। তবে আমরা যদি এরকম ইনফরমেশন পাই, অবশ্যই আমরা সেটাকে কার্ভ করার জন্য প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা, এটা আমরা নিব।’
ছায়ানট ও উদীচীতে হামলার বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ছায়ানটের ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় ও উদীচীর ঘটনায়ও মামলা হইছে শাহবাগ থানায়, ওটা পরে ব্রিফ করব।’
প্রসঙ্গত, সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর এলে ১৮ ডিসেম্বর রাতে প্রথমে শাহবাগ অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে একদল লোক কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে এবং পরে ডেইলি স্টার ভবনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করে। পরে ধানমন্ডিতে ছায়ানট ভবনেও হামলা হয়। সেখানেও ভাঙচুর-লুটপাট চালিয়ে আগুন দেওয়া হয়। পরদিন ১৯ ডিসেম্বর উদীচীর কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়।
