Logo
Logo
×

জাতীয়

কে এবং কেন গানম্যান পায়, আবেদন করবেন যেভাবে

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:১৩ এএম

কে এবং কেন গানম্যান পায়, আবেদন করবেন যেভাবে

ফাইল ছবি

বাংলাদেশে গানম্যান ও বডিগার্ড পাওয়ার বিষয়টি মূলত ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং রাষ্ট্রীয় প্রটোকল–– এই দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। এটি কোনো ঢালাও অধিকার নয়। বরং সরকারের বিশেষ বিবেচনায় অনুমোদিত একটি ব্যবস্থা। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চাইলে যে কাউকে তার বিশেষ ঝুঁকি বিবেচনা করে গানম্যান বরাদ্দ দিতে পারে। অনেক সময় রাজনৈতিক ঝুঁকি বা গুরুত্বপূর্ণ মামলার সাক্ষী হওয়ার কারণেও সরকার নিজ উদ্যোগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গানম্যান দিয়ে থাকে। খবর বিবিসি বাংলার।

পুলিশ সদরদপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলছেন, সাধারণ যে কেউ এ ধরনের নিরাপত্তা পেতে লিখিতভাবে পুলিশকে জানাতে হয়, অথবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হয়।

আবেদন প্রক্রিয়া শেষে গোয়েন্দা সংস্থা বা স্পেশাল ব্রাঞ্চ তদন্ত করে দেখে যে আবেদনকারীর সত্যিই নিরাপত্তা প্রয়োজন কিনা, নাকি তিনি কেবল প্রভাব খাটানোর জন্য এটি চাচ্ছেন। প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত দীর্ঘ এবং কঠোর যাচাই-বাছাইয়ের বিষয়।

সাধারণত মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রোটেকশন বিভাগ অথবা স্পেশাল ব্রাঞ্চ থেকে নিরাপত্তার জন্য গানম্যান বা বডিগার্ড নিয়োগ দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, বডিগার্ড সাধারণত মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রটেকশন ইউনিট থেকে নিযুক্ত করা হয় এবং গানম্যান দেওয়া হয় স্পেশাল ব্রাঞ্চ বা বিশেষ শাখা থেকে।

অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ বলছেন, সব ধরনের যাচাই প্রক্রিয়া শেষে পুলিশের প্রশিক্ষিত একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে যার জন্য নিরাপত্তা কর্মী দেওয়া হচ্ছে তার মতামতকেও প্রাধান্য দেওয়া হয়। অফিসিয়ালি সরকার নিয়োগ করলেও গানম্যান হিসেবে কাকে দেওয়া হবে এক্ষেত্রে যার নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত করা হচ্ছে তার মতামত নেওয়া হয়। কারণ এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের বিষয় থাকতে পারে।

তিনি জানান, একজন গানম্যান সরকারি অস্ত্র ব্যবহার করেন এবং নির্দিষ্ট সংখ্যক গুলিও তাদের জন্য বরাদ্দ করা থাকে। এছাড়া গানম্যানের খরচ বহন করে সরকার, যেহেতু সরকার তাকে ওই কাজে নিয়োজিত করেছে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আনসার ভিডিপির সদস্যদের নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে নিয়োগের সুযোগ রয়েছে। 

কে এবং কেন গানম্যান পায়?

সরকারি প্রটোকল বা পদাধিকার ভিত্তিতে রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সরকারি গানম্যান বা সশস্ত্র দেহরক্ষী পান।

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, বিচারপতি, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা (সচিব বা সমপর্যায়ের) এবং বাহিনী প্রধানরা এই ক্যাটাগরিতে পড়েন।

পুলিশের সাবেক প্রধান নুরুল হুদা বলছেন, একজন ব্যক্তি পুলিশের কাছে নানাভাবে নিরাপত্তা চাইতে পারেন। তবে, ব্যক্তি নিরাপত্তার জন্য গানম্যান বা বডিগার্ড নিয়োগের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়।

তিনি বলছেন, নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া অস্বাভাবিক নয়। তবে যাকে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে তার আসলেই নিরাপত্তা প্রয়োজন কিনা সেটি যথার্থ হওয়া প্রয়োজন।

আদালতের কাছেও গানম্যান বা পুলিশি নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করা যায় বলে জানান সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।

তিনি বলছেন, কোনো সাধারণ নাগরিক বা প্রভাবশালী ব্যক্তি যদি মনে করেন তার জীবন বিপন্ন, তবে তিনি গানম্যানের জন্য আবেদন করতে পারেন। রাষ্ট্রের সব নাগরিকের নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকারের, এ বিষয়টি সংবিধানেই উল্লেখ করা আছে। কিন্তু কোনো ব্যক্তিকে নিরাপত্তা দিতে হবে সেটা সংবিধানের আলোকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটি দেয়।

এছাড়া নিজস্ব বেতনভুক্ত লোক দিয়েও গানম্যানের কাজ করান অনেকে। এক্ষেত্রে ওই গানম্যানের নিজের নামে অস্ত্রের লাইসেন্স থাকতে হবে অথবা নিয়োগকর্তার অস্ত্রের লাইসেন্সে তাকে ‘রিটেইনার’ বা ব্যবহারকারী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

এছাড়া সরকার অনুমোদিত বেসরকারি সিকিউরিটি কোম্পানিগুলো থেকেও নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে গানম্যান নেওয়া যায়। তবে এক্ষেত্রেও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বিশেষ অনুমতি প্রয়োজন।

বাংলাদেশে অতীতেও নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে বিশেষ বিবেচনায় গানম্যান বা দেহরক্ষী নিয়োগ দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

মুক্তমনা লেখক, প্রকাশক ও বুদ্ধিজীবীদের হত্যার পাশাপাশি হুমকির ঘটনায় ২০১৪ সালেও অনেকের জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছিল সরকার।

পুলিশ সদরদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ওই সময় ২৬২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির নিরাপত্তায় সাদা পোশাকে গানম্যান নিয়োগ করা হয়েছিল।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম