শীতে কাঁপছে সারা দেশ, তীব্র শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:২৪ এএম
ছবি: যুগান্তর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
পৌষের প্রথম দিকেই শীতে কাঁপছে গোটা দেশ। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে জনজীবন রীতিমতো বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঘন কুয়াশার প্রভাবে দিনের বেলাতেও যানবাহন চলাচল করতে হচ্ছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় তীব্র শীতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে কুয়াশার কারণে মেঘনা নদীতে দুটি যাত্রীবাহী লঞ্চের সংঘর্ষে চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
বর্তমানে দেশের সাতটি জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এসব জেলার মধ্যে রয়েছে চুয়াডাঙ্গা, যশোর, গোপালগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও নীলফামারী। শুক্রবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে সর্বশেষ আজ শনিবার সকালে যশোরে সর্বনিম্ন ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, হালকা থেকে ঘন কুয়াশার প্রকোপ আরও অন্তত পাঁচ দিন অব্যাহত থাকবে। এর ফলে নৌ, সড়ক ও বিমান চলাচল সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে। একই সঙ্গে জানুয়ারির শুরু থেকে শীতের তীব্রতা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বুলেটিনে বলা হয়েছে, ২৬ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত মধ্যরাত থেকে সকাল সময়জুড়ে সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোনো কোনো এলাকায় এই কুয়াশা দুপুর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। পাশাপাশি সাত জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু শৈত্যপ্রবাহ কিছু এলাকায় অব্যাহত থাকার সম্ভাবনাও রয়েছে।
ঘন কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা কমে যাওয়ায় বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটতে পারে বলে সতর্ক করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম দিন পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকা অঞ্চলে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং অন্যান্য এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
২৬ ডিসেম্বর সকালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে, যা ছিল ৯ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একই সময়ে চুয়াডাঙ্গায় ৯ দশমিক ৬, গোপালগঞ্জে ৯ দশমিক ৮ এবং পাবনার ঈশ্বরদীতে ১০ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা রেকর্ড করা হয়েছে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায়।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক গণমাধ্যমকে জানান, কুয়াশার এই প্রবণতা আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে এবং জানুয়ারির শুরুতে শীতের তীব্রতা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও জানান, দেশের অভ্যন্তরের জলাধার, বিল ও হাওর থেকে উৎপন্ন কুয়াশা, বিকিরণজনিত কুয়াশা, পাহাড়ি এলাকায় সৃষ্ট কুয়াশা এবং ভারতের উত্তর–পশ্চিম দিক থেকে বায়ুতাড়িত কুয়াশা প্রবেশ করায় সামগ্রিকভাবে কুয়াশার ঘনত্ব বেড়েছে। এই কুয়াশা মধ্যরাত থেকে দুপুর পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলে অবস্থান করায় সূর্যের আলো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, ফলে ঠান্ডার অনুভূতিও আরও তীব্র হয়ে উঠছে।
শনিবার ভোর থেকে কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক ও ফসলের মাঠ। হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে চলছে যানবাহন। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না অনেকেই। ঘন কুয়াশার কারণে পাটুরিয়া দৌলতদিয়া ও আরিচা কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সন্ধ্যা নামলেই। রাজধানীসহ সারা দেশের আটটি বিভাগের ওপরই বয়ে চলেছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। গতকাল শুক্রবার যশোরে চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ ডিগ্রি।
উত্তরের জেলাগুলোর অবস্থা আরো করুণ। গত তিন দিনে শৈত্যপ্রবাহের তীব্র শীত আর কনকনে ঠান্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে কয়েকটি জেলার জনজীবন। দুর্ভোগ পোহাচ্ছে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেওয়া ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। বেশি অসুবিধায় পড়েছেন ছোট বাচ্চা ও বয়োবৃদ্ধরা। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র না থাকায় ঘর থেকে বের হচ্ছেন না গরিব অসহায় মানুষ। সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে হিমালয় থেকে আসা হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে। ঘন কুয়াশা আর হাড়-কাঁপানো শীতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। দিনেও স্বস্তি নেই, আর রাত নামলেই প্রকৃতি যেন আরো কঠোর হয়ে ওঠে।
