সয়াবিনের মূল্য নির্ধারণের পর ফের কারসাজি সিন্ডিকেটের
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৫৪ এএম
ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সয়াবিন তেল ও পাম তেলের দাম সরকারকে চাপে ফেলে লিটারপ্রতি ৬ টাকা বাড়িয়েছে ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানাগুলোর মালিকপক্ষ। কাগজে-কলমে নির্ধারিত দামের অস্তিত্ব থাকলেও বাস্তবে পুরোটাই ধোঁকা। প্রশাসনের কোনো অংশকে ম্যানেজ করে সরকারের সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে বাজারে লিটারপ্রতি আরও ৯ টাকা বেশি দরে সয়াবিন বিক্রি করছে-তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, ভোক্তার স্বার্থ উপেক্ষা করে ব্যবসায়ীদের স্বার্থরক্ষায় সয়াবিনের বাড়তি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে কিনা তা নিয়ে তদন্ত দরকার।
এদিকে রাজধানীর একাধিক বাজারের মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। সেই মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, শুক্রবার প্রতিলিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ১৮৫ টাকায়। যা সরকার নির্ধারিত মূল্য ১৭৬ টাকা। অর্থাৎ সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে খুচরা বাজারে ক্রেতার কাছ থেকে লিটারে ৯ টাকা বাড়তি নেওয়া হচ্ছে।
টিসিবির মূল্য অনুযায়ী দেখা যায়, শুক্রবার প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ১৯৮ টাকা। যা সরকার নির্ধারিত মূল্য ১৯৫ থেকে ৩ টাকা বেশি। এছাড়া বাজারে প্রতিলিটার খোলা পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ১৬৬ টাকা দরে। যা সরকার নির্ধারিত মূল্য ১৬২ টাকা। ক্রেতার কাছ থেকে লিটারপ্রতি বাড়তি নেওয়া হয় ৪ টাকা।
গত ৭ ডিসেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠকের পর লিটারপ্রতি ৬ টাকা বাড়িয়ে মূল্য ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। যা ৮ ডিসেম্বর থেকে বাজারে কার্যকর হয়। সংগঠনের তরফ থেকে ‘নতুন দাম অনুযায়ী এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হবে ১৯৫ টাকায়। যা আগে সরকার নির্ধারিত মূল্য ১৮৯ টাকা ছিল। পাশাপাশি প্রতিলিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হবে ১৭৬ টাকা। যা আগে ১৭০ টাকা ছিল।
অন্যদিকে প্রতিলিটার পাম তেলের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬৬ টাকা। সঙ্গে ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৫৫ টাকা।’
এর আগে ১০ নভেম্বর লিটারে ৯ টাকা বাড়ানোর অনুমতি চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। ২৪ নভেম্বর তারা আবারও মূল্য সমন্বয়ের সুপারিশ করে। অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে দুবার অনুমতি চাওয়া হলেও মন্ত্রণালয় তখন সাড়া দেয়নি। এ পর্যায়ে ব্যবসায়ী সংগঠন সরকারকে পাত্তা না দিয়ে অনুমতি ছাড়াই প্রতিলিটারে ৯ টাকা বাড়িয়ে খুচরা পর্যায়ে বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯৮ টাকায় বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়। মোড়কে নতুন দাম উল্লেখ করে বাজারে ছাড়া হয় তেল। তখন ক্রেতাকে বাধ্য হয়ে বাড়তি দামেই তেল কিনতে হয়েছে।
সরকারকে না জানিয়ে নভেম্বরে আমদানিকারক ও বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলো ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোয় উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তখন ব্যবসায়ীদের শোকজও দেওয়া হয়। পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠকের পর লিটারে ৬টা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। ডিসেম্বরের ৮ তারিখ থেকে ১৮ দিনের ব্যবধানে এমন কী ঘটল যে, লিটারপ্রতি আরও ৯ টাকা বাড়িয়ে সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে?
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন যুগান্তরকে বলেন, ভোক্তার স্বার্থরক্ষায় সরকার এক প্রকার ব্যর্থ। যে সময় তেলের দাম বাড়ানোর কথা নয়, সেই সময় সরকার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের চাপে পড়ে মূল্য বাড়িয়েছে। নির্ধারিত মূল্যে বাজারে তেল বিক্রি হচ্ছে না-তাও তদারকি করছে না।
রাজধানীর বাজারের চিত্র : শুক্রবার রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজার, জিনজিরা বাজার ঘুরে খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে সয়াবিন ও পাম তেলেরও একই দর পাওয়া গেছে।
জিনজিরা কাঁচাবাজারের মুদি বিক্রেতা মো. সাগর বলেন, আমরা কী করতে পারি। আমরা জানি, কোম্পানিগুলো সরকারকে ৪ দফা চাপে ফেলে লিটারে ৬ টাকা সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়েছে। সেই দরে আমাদের বিক্রি করার কথা। কিন্তু কোম্পানিগুলো আমাদের যে তেল সরবরাহ করছে তার দাম অনেক বেশি। যে কারণে আমাদের সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাড়তি দরে তেল বিক্রি করতে হচ্ছে। বেশি দামে কেনায় বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে একজন সহকারী পরিচালক জানান, বাজারে তেলের দাম নিয়ে কাজ করা হবে। তদারকি করে দেখা হবে, কোন পর্যায়ে কারসাজি হচ্ছে। প্রয়োজনে ব্যবসায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।
