প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কাটছাঁট হচ্ছে ঘাস চাষে বিদেশ সফর
যুগান্তরে রিপোর্ট প্রকাশ
যুগান্তর রিপোর্ট
২৪ নভেম্বর ২০২০, ১৫:৪৪:১৫ | অনলাইন সংস্করণ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কাটছাঁট হচ্ছে ঘাস চাষে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর। এ ক্ষেত্রে কমছে ব্যয়ও। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এই নির্দেশ দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে কর্মকর্তা সংখ্যাও যেমন কমাতে হবে, তেমনি এ খাতের ব্যয় হ্রাসের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে পরিকল্পনা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব আসাদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্রাণী পুষ্টি উন্নয়নে উন্নত জাতের ঘাস চাষ সম্প্রসারণ ও লাগসই প্রযুক্তি হস্তান্তর শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৩২ কর্মকর্তার বিদেশ সফরের আয়োজন করা হয়।
এ নিয়ে গত শুক্রবার দৈনিক যুগান্তরে ‘ঘাস চাষ শিখতে বিদেশ যাবেন ৩২ কর্মকর্তা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।
এতে ৩২ কর্মকর্তার পেছনে তিন কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব নিউজে উল্লেখ ছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের কেবল একান্ত প্রয়োজনে বিদেশে পাঠাতে হবে। ব্যয়ও কমাতে হবে।
এর আগে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পে খিচুড়ি রান্না শিখতে বিদেশ সফরের ব্যবস্থা থাকায় ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল।
এছাড়া বিভিন্ন সময় পুকুর খনন শেখা, খাল খনন, মৎস্য চাষ প্রযুক্তি হস্তান্তর, কাজুবাদাম চাষ, সড়ক উন্নয়ন এবং সুউচ্চ বিল্ডিং দেখতে বিদেশ সফরের প্রস্তাবও ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। এবার প্রস্তাব করা হল ঘাস চাষ দেখতে বিদেশ সফরের।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সাবেক সভাপতি ও পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, ঘাস চাষ এমন কোনো প্রযুক্তিগত বিষয় নয় যে, বিদেশ যেতে হবে। বরং এই টাকা গবেষণায় ব্যয় করলে দেশ আরও উপকৃত হতো।
‘তাছাড়া যারা চাষ দেখে আসবেন তারা হয়তো বদলি হয়ে যাবেন। কিংবা এই সফরে অপ্রয়োজনীয় অনেক কর্মকর্তাই হয়তো থাকবেন। তাই উন্নয়ন প্রকল্পে এ রকম ব্যয় বাদ দেয়া বাঞ্ছনীয়।’
বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ঘাসের চাষ শিখতে বিদেশ সফরের আয়োজন হাস্যকর। এ ধরনের ব্যয় প্রস্তাবে প্রশ্ন থেকে যায়।
যারা এই সফরে যাবেন তাদের আদৌ এত টাকা খরচ করে বিদেশ যাওয়ার প্রয়োজন আছে কিনা সেটি প্রশ্নসাপেক্ষ। তাছাড়া ১০১ কোটি টাকার প্রকল্পে ৩ কোটি টাকার বেশি শুধু বিদেশ সফরেই যদি ব্যয় হয় তাহলে মূল প্রকল্পের কি অবস্থা হবে? শতাংশের হিসাবে এই টাকা হয়তো বড় কিছু নয়, কিন্তু অঙ্কের দিক থেকে তো অনেক বেশি।
দেশের কৃষি গবেষণা সংক্রান্ত বেশকিছু নামকরা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তারা উন্নত ঘাসের চাষ আবিষ্কার করতে পারে না? এটি জটিল কোনো কারিগরি প্রকল্প নয় যে, বিদেশ যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয় করে কি পরিমাণ আর্থিক লাভ পাওয়া যাবে তার হিসাব করা উচিত।
জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আবদুল জব্বার শিকদার যুগান্তরকে বলেন, আমাদের দেশে ঘাস চাষ জনপ্রিয় নয়। ফলে গরুর জন্য আলাদা ঘাসের প্রয়োজন সেটি মানুষের ধারণার মধ্যে নেই।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নত মানের ঘাস চাষ ছড়িয়ে দেয়া হবে। বেশি বেশি দুধ পেতে হলে উন্নত ঘাসের অবশ্যই প্রয়োজন। বেসরকারি পর্যায়ে যাতে পুষ্টিগুণসম্পন্ন ঘাস পাওয়া যায় সেজন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
এক্ষেত্রে বিশ্বের যেসব দেশে অল্প জমিতে বেশি পরিমাণ এবং পুষ্টিগুণসম্পন্ন ঘাস উৎপাদন হচ্ছে সেগুলোর চাষাবাদ পদ্ধতি দেখতে এবং টেকনিক্যাল কিছু ব্যাপার থাকায় বিদেশ সফরের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৩২ জনের মধ্যে দেখা যাবে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের ৫ জনের মতো কর্মকর্তা থাকতে পারেন। বাকিরা পরিকল্পনা কমিশন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং এই প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
যুগান্তরে রিপোর্ট প্রকাশ
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কাটছাঁট হচ্ছে ঘাস চাষে বিদেশ সফর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কাটছাঁট হচ্ছে ঘাস চাষে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর। এ ক্ষেত্রে কমছে ব্যয়ও। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এই নির্দেশ দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে কর্মকর্তা সংখ্যাও যেমন কমাতে হবে, তেমনি এ খাতের ব্যয় হ্রাসের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে পরিকল্পনা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব আসাদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্রাণী পুষ্টি উন্নয়নে উন্নত জাতের ঘাস চাষ সম্প্রসারণ ও লাগসই প্রযুক্তি হস্তান্তর শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৩২ কর্মকর্তার বিদেশ সফরের আয়োজন করা হয়।
এ নিয়ে গত শুক্রবার দৈনিক যুগান্তরে ‘ঘাস চাষ শিখতে বিদেশ যাবেন ৩২ কর্মকর্তা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।
এতে ৩২ কর্মকর্তার পেছনে তিন কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব নিউজে উল্লেখ ছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের কেবল একান্ত প্রয়োজনে বিদেশে পাঠাতে হবে। ব্যয়ও কমাতে হবে।
এর আগে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পে খিচুড়ি রান্না শিখতে বিদেশ সফরের ব্যবস্থা থাকায় ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল।
এছাড়া বিভিন্ন সময় পুকুর খনন শেখা, খাল খনন, মৎস্য চাষ প্রযুক্তি হস্তান্তর, কাজুবাদাম চাষ, সড়ক উন্নয়ন এবং সুউচ্চ বিল্ডিং দেখতে বিদেশ সফরের প্রস্তাবও ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। এবার প্রস্তাব করা হল ঘাস চাষ দেখতে বিদেশ সফরের।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সাবেক সভাপতি ও পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, ঘাস চাষ এমন কোনো প্রযুক্তিগত বিষয় নয় যে, বিদেশ যেতে হবে। বরং এই টাকা গবেষণায় ব্যয় করলে দেশ আরও উপকৃত হতো।
‘তাছাড়া যারা চাষ দেখে আসবেন তারা হয়তো বদলি হয়ে যাবেন। কিংবা এই সফরে অপ্রয়োজনীয় অনেক কর্মকর্তাই হয়তো থাকবেন। তাই উন্নয়ন প্রকল্পে এ রকম ব্যয় বাদ দেয়া বাঞ্ছনীয়।’
বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ঘাসের চাষ শিখতে বিদেশ সফরের আয়োজন হাস্যকর। এ ধরনের ব্যয় প্রস্তাবে প্রশ্ন থেকে যায়।
যারা এই সফরে যাবেন তাদের আদৌ এত টাকা খরচ করে বিদেশ যাওয়ার প্রয়োজন আছে কিনা সেটি প্রশ্নসাপেক্ষ। তাছাড়া ১০১ কোটি টাকার প্রকল্পে ৩ কোটি টাকার বেশি শুধু বিদেশ সফরেই যদি ব্যয় হয় তাহলে মূল প্রকল্পের কি অবস্থা হবে? শতাংশের হিসাবে এই টাকা হয়তো বড় কিছু নয়, কিন্তু অঙ্কের দিক থেকে তো অনেক বেশি।
দেশের কৃষি গবেষণা সংক্রান্ত বেশকিছু নামকরা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তারা উন্নত ঘাসের চাষ আবিষ্কার করতে পারে না? এটি জটিল কোনো কারিগরি প্রকল্প নয় যে, বিদেশ যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয় করে কি পরিমাণ আর্থিক লাভ পাওয়া যাবে তার হিসাব করা উচিত।
জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আবদুল জব্বার শিকদার যুগান্তরকে বলেন, আমাদের দেশে ঘাস চাষ জনপ্রিয় নয়। ফলে গরুর জন্য আলাদা ঘাসের প্রয়োজন সেটি মানুষের ধারণার মধ্যে নেই।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নত মানের ঘাস চাষ ছড়িয়ে দেয়া হবে। বেশি বেশি দুধ পেতে হলে উন্নত ঘাসের অবশ্যই প্রয়োজন। বেসরকারি পর্যায়ে যাতে পুষ্টিগুণসম্পন্ন ঘাস পাওয়া যায় সেজন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
এক্ষেত্রে বিশ্বের যেসব দেশে অল্প জমিতে বেশি পরিমাণ এবং পুষ্টিগুণসম্পন্ন ঘাস উৎপাদন হচ্ছে সেগুলোর চাষাবাদ পদ্ধতি দেখতে এবং টেকনিক্যাল কিছু ব্যাপার থাকায় বিদেশ সফরের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৩২ জনের মধ্যে দেখা যাবে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের ৫ জনের মতো কর্মকর্তা থাকতে পারেন। বাকিরা পরিকল্পনা কমিশন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং এই প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন
►ঘাস চাষ শিখতে বিদেশ যাবেন ৩২ কর্মকর্তা