Logo
Logo
×

জাতীয়

আমার ভাইকে বাঁচাতে পারলেন না?

Icon

শিপন হাবীব

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২১, ০৪:৪৫ পিএম

আমার ভাইকে বাঁচাতে পারলেন না?

ইমরান হোসেন। ফাইল ছবি

ভাইবোনের সর্ম্পক মানেই শত রাগ, অভিমান হওয়ার পরও-কথা না বলে থাকতে না পারা। ভাই মানে ভরসা-বাবার মতো আদর। সেই ভরসা আর আদর চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেললো ছোট বোন আইরিন।

রাজধানীর মগবাজার বিস্ফোরণে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তার ভাই ইমরান হোসেন (২৫) বুধবার ভোরে মারা গেছেন। ১৩ বছর বয়সী আইরিনের আর্তনাদ যেন শেষ হচ্ছে না।

রোববার রাত ৯টায় ইমরানকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে অজ্ঞান অবস্থায় ভর্তি করা হয়। ভাইকে বাঁচাতে ডাক্তার, নার্সদের কাছে দু'হাত করজোর করে আকুতি জানাচ্ছিলেন আইরিন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছিলেন-তার ভাইকে যেন প্রয়োজনে বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। এ নিয়ে মঙ্গলবার যুগান্তরে  ‘স্যার, আমার ভাই বাঁচবে তো?' শিরোনামে আইরিনের এমন আকুতি নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিস্ফোরণ ঘটনায় ৯ জনের মৃতু্য হলো। জীবন-মৃতু্যর সন্ধিক্ষণে আছে আরও তিন জন। 

বুধবার ভোরে বার্ন ইউনিট আইসিইউর বারান্দায় টানা আর্তনাদ করছিল আইরিন। ভাই হারা যন্ত্রণা বুকে চেপেই টিকিত্সত-নার্সদের প্রশ্ন করছিল- ‘আপনারা কেন আমার ভাইকে বাঁচাতে পারলেন না। আমার ভাই কেন মারা গেল। এত ডাক্তার-এত নার্স- আপনারা কী করেছেন?  ভাইকে রাখতে পারলেন না?

সমস্ত মানবিক অনুভূতিকে এক লহমায় স্তব্ধ করে দেয়া এসব প্রশ্নের স্বাক্ষী ছিলেন যে কয়েকজন চিকিৎসক-নার্স, বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন তারাও।

চিকিৎসকরা জানালেন, ৯৫ শতাংশ শরীর পুড়ে যাওয়া ইমরানকে বিশ্বমানের চিকিৎসার পরও বাঁচানো যায়নি। শ্বাসনালী পোড়াসহ এমন দগ্ধ ব্যক্তিদের ৯০ শতাংশই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। আমরা হেরে যাই-যাচ্ছি। 

বার বার মুর্চ্ছা যাচ্ছিলেন ইমরানের মা-বাবা। সাদা কাপড়ে ঢাকা ক্ষতবিক্ষত প্রিয় সন্তানের মৃতদেহের ওপর আছড়ে পড়ছিলেন বুক-ফাটা কান্নায়।

নিহত ইমরানের খালা হেনা বেগম জানান, তাদের পরিবারে একমাত্র ছেলে সন্তান ছিল ইমরান। তারও তিন মেয়ে। ছেলে হিসেবে বোনের ছেলেকেই মানতেন। অসম্ভব ভালো একটা ছেলে ছিল-ইমরান। এ মৃত্যু তো স্বাভাবিক নয়। কারও দায়িত্ব অবহেলায় বিস্ফোরণ হয়েছে- অর্থাৎ, এটি একটি খুন- যারা দায়ী তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। নয়তোবা এমন ঘটনা একের পর এক ঘটতেই থাকবে। আমাদের কূল শূন্য হবে। 

মৃত ইমরানের বাবা আব্দুল মজিদ বুক থাপরাচ্ছিলেন। কান্নারত অবস্থায় বলছিলেন- তার একটি মেয়ে-একটি ছেলে নিয়ে সাজানো সংসার। ছেলে অল্প বয়সে বিয়ে করেছে-নিজ থেকেই সংসারে সহযোগিতা করার জন্য বেঙ্গল মিটে চাকরি নিয়েছিল। বেতন পেয়ে আমাদের জন্য খাবার কাপড় কিনে নিয়ে আসতো বললেন, সন্তান নেই- যেন তার জীবন অন্ধকার হয়ে আসছে। ভাই বোনের একটি জোড়া-কী যে সুন্দর লাগতো? বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

এদিকে ইমরানের মা লিজা আক্তার শুধু বিলাপ করছিলেন। যা বলার, তার বিলাপ-চোখ মুখই বলে দিচ্ছিল- সন্তান হারার কী যে বেদনা, যন্ত্রণা। 

ইমরানের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল। নারায়ণগঞ্জ তাদের জমি রয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে নারায়গঞ্জ ত্রিমোহনী এলাকায় জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে ইমরানকে দাফন করা হয়।

এ পর্যন্ত মগবাজার বিস্ফোরণ ঘটনায় ৯ জনের মৃত্যু হলো। এখনও বার্ন ইউনিটে রাসেল, নুরুন্নবী ও রাজধানীর বেসরকারি একটি হাসপাতালে শামীম মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে তিনজন।

রোববার ঘটনার দিনই ৭ জন নিহত হয়। মঙ্গলবার ধ্বংসস্তুপের ভেতর থেকে আরেকজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আর বুধবার ভোরে মারা গেছেন ইমরান। 

রোববার সন্ধ্যা ৭টা ৩৪ মিনিটের দিকে বিস্ফোরণের বিকট শব্দে রাজধানীর মগবাজার ওয়্যালেস গেইট এলাকা কেঁপে ওঠে। তাতে সার্কুলার রোডের ৭৯ নম্বর হোল্ডিংয়ের তিনতলা রাখি নীড়ের নিচতলা ভেঙে পড়ে। বিস্ফোরণের ধাক্কায় প্রায় ১ হাজার ফুট এলাকায় মগবাজার প্লাজা, আড়ং, বিশাল সেন্টার, নজরুল শিক্ষালয়, রাশমনো হাসপাতালসহ আশপাশের ডজনখানের ভবনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাস্তায় থাকা যাত্রীসহ তিনটি বাস। তিন বাসের যাত্রীরা গ্লাস ভেঙে গুরুতর আহত হয়। এতে আহত হয় প্রায় ৬৩ জন চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

মগবাজার

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম