Logo
Logo
×

জাতীয়

হাত হারিয়েও সীতাকুণ্ড বিস্ফোরণ মামলার প্রধান আসামি নুরুল

Icon

সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১০ জুন ২০২২, ০৭:০৬ এএম

হাত হারিয়েও সীতাকুণ্ড বিস্ফোরণ মামলার প্রধান আসামি নুরুল

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কেশবপুর এলাকার বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় আটজনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। এ মামলায় মালিকপক্ষের কাউকে আসামি করা হয়নি। 

মামলায় প্রধান দুই আসামি করা হয়েছে দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুমুখে কাঁতরানো দুজনকে। তারা হলেন—  ওই দুর্ঘটনায় হাত হারানো নুরুল আক্তার ও শরীরের ১২ শতাংশ পুড়ে যাওয়া খালেদুর রহমান। 

নুরুল আক্তার বিএম কনটেইনার ডিপোর উপমহাব্যবস্থাপক (অপারেশন)। পুলিশের মামলায় তাকে ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে।  ডিপোর ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) খালেদুর রহমানকে করা হয়ে ২ নম্বর আসামি। 

সীতাকুণ্ড থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফ সিদ্দিকীর করা মামলার এজহার থেকে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

বাকি ৬ আসামির সবাই বিএম ডিপোর কর্মকর্তা। তারা হলেন— ডিপোর সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্বাস উল্লাহ, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ মো. নাসির উদ্দিন, সহকারী ব্যবস্থাপক আবদুল আজিজ, কনটেইনার ফ্রেইট স্টেশনের ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম, একই বিভাগের নজরুল ইসলাম ও মহাব্যবস্থাপক (বিক্রয় ও বিপণন) নাজমুল আক্তার খান।

আসামিদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে মানুষের মৃত্যুর অভিযোগ আনা হয়েছে। 

সীতাকুণ্ড থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, কর্তৃপক্ষের অবহেলাজনিত কারণ উল্লেখ করে পুলিশের পক্ষ থেকে আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। 

শনিবার রাতে বিএম কনটেইনার ডিপোতে রাত সাড়ে ৯টার দিকে একটি কনটেইনারে আগুনের সূত্রপাত। রাত পৌনে ১১টার দিকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। স্মরণকালের ভয়াবহ এই বিস্ফোরণে অন্তত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।  নিহতদের মধ্যে ৯ ফায়ার ফাইটার রয়েছেন। এ ঘটনায় দগ্ধ হয়েছেন ৪ শতাধিক।

গত শনিবার রাতের এ ঘটনার পর চার দিনেও মামলা না হওয়ায় প্রশ্ন ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। এর পর মঙ্গলবার রাতে তড়িঘড়ি করে মামলা করা হয়।  সেদিন রাতে আসামিদের নাম প্রকাশ করেনি পুলিশ।

জানা গেছে, ২০১১ সালে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের দুই কোম্পানির যৌথ বিনিয়োগে বেসরকারি এই বিএম কনটেইনার ডিপোটি গড়ে তোলা হয়। এর মালিকানায় রয়েছে দেশের শীর্ষ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্মার্ট গ্রুপ। ডিপোটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হলেন স্মার্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান। পরিচালক হলেন তার ছোট ভাই স্মার্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মুজিবুর রহমান। তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ।

এদিকে ১ নম্বর আসামি করায় হতবাক নুরুল আক্তারের স্বজনরা। তাদের ভাষ্য, আগুনের খবর শুনে যিনি কর্মস্থলে ছুটে যান এবং আগুন নেভানোর চেষ্টায় হাত হারিয়েছেন তাকে ১ নম্বর আসামি কীভাবে করা হলো!।

নুরুল আক্তারের ভায়রা এআর সোহেল বলেন, ‘ঘটনার দিন অফিস শেষ করে বাসায় চলে যান নুরুল আক্তার। রাতে আগুনের খবর শুনে ছুটে যান কর্মস্থলে। নেমে পড়েন আগুন নেভানোর চেষ্টায়। হঠাৎ সেই আগুন থেকে ঘটা বিস্ম্ফোরণে উড়ে যায় তার বাঁ হাত, ঊরু থেকে খসে পড়ে মাংস। নুরুলের এক হাত কেটে ফেলেছেন চিকিৎসকরা। মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। তার অবস্থা গুরুতর। তাকে ১ নম্বর আসামি করায় হতবাক হয়েছি।’ 

একই রকম প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন খালেদুরের স্বজনদের কাছ থেকে।

খালেদুরের জামাতা রাকিব উদ্দিন ফাহিম বলেন, দুর্ঘটনার সময় খালেদুর বাসায় ছিলেন। অগ্নিকাণ্ডের খবর শুনে ছুটে যান কর্মস্থলে। সহকর্মীদের নিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। এটি করতে গিয়ে শরীরের ১২ শতাংশ পুড়ে গেছে তার। চিকিৎসকরা বলছেন, যে কোনো মুহূর্তে অবস্থার অবনতি হতে পারে। এ অবস্থায় মামলার আসামি করা খুবই অমানবিক। তিনি ডিপোতে টাকার বিনিময়ে সার্ভিস দিয়েছেন। তিনি কেন আসামি হবেন?

মালিকপক্ষের কাউকে আসামি না করার সীতাকুণ্ড সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মামলায় আটজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ আনা হয়েছে। সেই সঙ্গে ডিপো পরিচালনায় দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ আনা হয়েছে। অজ্ঞাত আরও অনেক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। যদি তদন্তে হত্যা প্রমাণিত হয়, তা হলে হত্যা মামলাই হবে।’

সীতাকুণ্ড আসামি নুরুল

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম