প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু
‘ষড়যন্ত্রকারীরা দেশকে ব্যর্থ করতে নানা অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে’
সংসদ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২২, ০৬:২১ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের দেওয়া প্রতিটি বাজেট বাস্তবায়ন করে দেশকে দুর্বার গতিতে এগিয়ে নিয়ে উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নেই।
তারা বলেছেন, দেশ যখন বিশ্বের বুকে মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়েছে, তখন দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা দেশকে ব্যর্থ করতে নানা অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অতীতে যেমন দেশের জনগণ ্এসব ষড়যন্ত্রকারীদের ব্যালটের মাধ্যমে বিদায় জানিয়েছে, আগামী নির্বাচনেও বিদায় জানাবে। উন্নয়নের রূপকার বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে আবারও বিপুল ভোটে ক্ষমতায় বসাবে।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর প্রথম দিনের সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন।
আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন, সাবেকমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, সাবের হোসেন চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত, আরমা দত্ত, সাইফুজ্জামান শিখর, মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন, মোজাফফর হোসেন, আনোয়ারুল আবেদীন খান, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, আমিরুল ইসলাম মিলন, শফিকুল ইসলাম শিমুল, বিএনপির জাহিদুর রহমান এবং জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।
রমেশ চন্দ্র সেন যুগোপযোগী বাজেট উপস্থাপন করায় অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ, সাহসী, প্রজ্ঞা ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই বাংলাদেশ কোভিড মহামারীর মধ্যেও এগিয়ে যাচ্ছে, পদ্মা সেতু উদ্বোধন হচ্ছে, উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছে। পদ্মা সেতুর পর মেট্টোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বঙ্গবন্ধু ট্যানেল চালু হয়ে দেশের উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ করবে। বদলে যাবে দেশের চিত্র।
মোস্তাফিজুর রহমান প্রস্তাবিত বাজেটকে গণমুখী ও দেশকে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাওয়ার বাজেট উল্লেখ করে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার যখনই বাজেট দিয়েছে, দেশ এগিয়ে গেছে। দেশের কিছু মানুষ ও দল আছে তারা দেশের কোন উন্নয়ন চোখে দেখে না, শুধু সর্বনাশ দেখে। কিন্তু ক্ষমতায় থাকতে তারা পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী ট্যানেল, মেট্টোরেলের মতো একটি মেগা প্রকল্প করার নজীর দেখাতে পারবে? জিয়াউর রহমানের আমলে মানুষ সন্তান বিক্রি করেছে, পতিতালয়ে মেয়ে বিক্রি করেছে খাদ্যের অভাবের কারণে। আওয়ামী লীগ আমলে মানুষের কী খাদ্যের কোন অভাব আছে? বেগম জিয়ার এতিমের টাকা আত্মসাত, দুই পুত্রের পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার প্রমাণ রয়েছে। তারাই আজ আবার বড় কথা বলে।
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছে, সেই বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। টানা তিনবার আওয়ামী লীগকে জনগণকে ম্যান্ডেট দিয়েছিল বলেই দেশ আজ সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশের চিত্র বদলে গেছে। আগামী নির্বাচনেও জনগণ এটা মনে রাখবেন বলে আশা করি। বায়ু দূষণ, সড়ক দুর্ঘটনারোধ এবং পলিথিনমুক্ত করা যায়, সেই বিষয়ে ভাবতে হবে। প্রতি বছর এক লাখ ৬০ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে তামাক সেবনের কারণে। এতে ক্ষতি হচ্ছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। আমরা তামাক কোম্পানিকে সুবিধা দিতে সংসদে আসিনি।
ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি প্রস্তাবিত বাজেটকে সমন্বয়হীন, পলিথিন দূষণ ও অনৈতিক বাজেট উল্লেখ করে বলেন, বাজেটে পাচারকৃত টাকা ফেরত আনার যে প্রস্তাব রাখা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অনৈতিক। এ বাজেট অবশ্যই গণমাধ্যম নয়। মধ্যবিত্তের ওপর চাপ বাড়াবে এই বাজেট। আয় কম, ব্যয় বেশি এবং বিপুল পরিমাণ ঘাটতির বাজেট। ব্যাংক থেকে অতিরিক্ত ঋণ গ্রহণের প্রবণতার কারণে কর্মসংস্থান কমবে। সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা নিশ্চিত করা গেলে দুর্নীতি অবশ্যই কমবে।
ড. আবদুস সোবহান মিয়া বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষের জীবন বদলে দিতে নির্মিত পদ্মা সেতু আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন করা হবে। যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে, খুনীদের বিচার বন্ধে ইনডেমনিটি দিয়েছে, স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন করেছে, ৭ মার্চের ভাষণ বাজানো বন্ধ করেছিল- সেই খুনী জিয়ার হাতে অবৈধভাবে গঠিত দল বিএনপির পেতাত্মারা এখন নানা ষড়যন্ত্র করছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সকল অপশক্তির ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে দেশকে দুর্বার গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
জাহিদুর রহমান বলেন, এই বাজেট গণমানুষের নয়, বরং লুটেরা, অর্থপাচারকারী ও অসাধু ব্যবসায়ীদের সুবিধা প্রদানের বাজেট। অর্থপাচারকারীদের আরও অর্থ পাচারে উৎসাহিত করার জন্য এই বাজেট দেয়া হয়েছে। অর্থপাচারকারীদের দায়মুক্তি দেয়া অনৈতিক, অগ্রহণযোগ্য। বরং পাচারকারীদের সকল সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। দায়মুক্তির প্রস্তাব বাজেট থেকে বাদ দিতে হবে। বাজেটে গরীব মানুষের জন্য কোন সুখবর নেই।
ডা. হাবিবে মিল্লাত বলেন, দেশ যখন বিশ্বের বুকে মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়েছে, তখন দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা দেশকে ব্যর্থ করতে নানা অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অতীতে যেমন দেশের জনগণ আপনাদের বিদায় জানিয়েছে, আগামী নির্বাচনেও বিদায় জানাবে। উন্নয়নের রূপকার বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে আবারও বিপুল ভোটে ক্ষমতায় বসাবে। গত ১০ বছরে সিরাজগঞ্জের আমার নির্বাচনী এলাকায় যে কাজ হয়েছে, গত ৪০ বছরে তা হয়নি।
সাইফুজ্জামান শিখর বলেন, অসাধ্য সাধনের নামই হচ্ছে শেখ হাসিনা। বর্তমান সরকার যখনই বাজেট দিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী দেখিয়ে দিয়েছেন প্রতিটি বাজেট বাস্তবায়ন করে। মিথ্যাচার করে বিএনপি জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। অতীতে তারা বলেছে, আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে বাংলাদেশ ভারত হয়ে যাবে, সাবেক খালেদা জিয়া পর্যন্ত বলেছেন, আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে মসজিদে উলুধ্বনী শোনা যাবে। জনগণ তাদের মিথ্যাচারে আর বিভ্রান্ত হবে না। দেশের মানুষ এখন দেখার অপেক্ষায় বিএনপি নেতারা জোড়াতালি দেওয়া পদ্মা সেতু দিয়ে যায় কি না।
আরমা দত্ত বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসলেই ফিনিক্স অর্থাৎ আগুণ পাখি। টানা ১৭ বার বাজেট দিয়ে সারাবিশ্বে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন তিনি। বঙ্গবন্ধুকন্যা অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক ধারায় দুর্বার গতিতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এই কারণেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়ন রোল মডেল বলে স্বীকৃত। বিএনপি আসলে একটি বেঈমান দল। তারা বঙ্গবন্ধুকে মেরেছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করেছে।
ইকবাল হোসেন বলেন, যখন স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন হবে, মেট্টোরেল উদ্বোধন হবে, বাংলাদেশ যখন অদম্য গতিতে এগিয়ে চলেছে- তখন জনগণ থেকে প্রত্যাখ্যাত বিএনপি-জামায়াত অপশক্তিরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। কিন্তু তারা আওয়ামী লীগকে চেনে না। রাজপথে ষড়যন্ত্রকারীদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেওয়া হবে। যারা পদ্মা সেতুর বিরোধীতা করেছিল, তাদের সবার ছবি যেন মাওয়ায় নির্মিত জাদুঘরে রাখা হয়। যাতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম তাদের ঘৃণা জানাতে পারে।
বিএনপি মহাসচিবের সমালোচনা করে নাজিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, মির্জা ফখরুলের পিতা মুসলিম লীগের স্বীকৃত রাজাকার ছিলেন। বেতন-ভাতা, ট্যাক্স ফ্রি গাড়িসহ সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বিএনপির ক’জন সংসদ সদস্য সংসদে লাগাতার মিথ্যাচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।
