Logo
Logo
×

জাতীয়

এক্সপ্রেসওয়ের প্রতি কিমির নির্মাণ ব্যয় ১৯১ কোটি 

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:২৯ পিএম

এক্সপ্রেসওয়ের প্রতি কিমির নির্মাণ ব্যয় ১৯১ কোটি 

ফাইল ছবি

সড়ক পরিবহণে ভোগান্তি কমাতে দীর্ঘমেয়াদী যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তার মধ্যে প্রথম থেকেই আলোচনায় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। প্রকল্প হাতে নেওয়ার এক যুগেরও বেশি সময় পর ২ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে এক্সপ্রেসওয়েটি। উদ্বোধনের পর বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার রাস্তা ব্যবহারের জন্য চালু করা হবে।

আরও পড়ুন উড়ালসড়ক উদ্বোধন: যেসব রাস্তা এড়িয়ে চলার নির্দেশনা ডিএমপির

প্রকল্পের শুরু থেকেই বলা হয়েছিল, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে ঢাকা ইপিজেড ও উত্তরবঙ্গের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের যোগাযোগ সহজ হওয়ার পাশাপাশি ঢাকার যানজট নিরসনে এক্সপ্রেসওয়েটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।

তবে এত কম দূরত্বের এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে বিশাল অংকের খরচ নিয়ে আছে সমালোচনা। নির্বাচন সামনে রেখে পুরোপুরি কাজ শেষ হওয়ার আগেই এক্সপ্রেসওয়েটি চালু করলেও যানজট নিরসনে এটা কতটুকু ভূমিকা রাখবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে শুরু করে মগবাজার হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়।

এক্সপ্রেসওয়েতে উঠা-নামার জন্য মোট ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩১টি র্যাম্প রয়েছে। এই র্যাম্পসহ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৭ কিলোমিটার। তবে এখন ১৩টি র্যাম্প দিয়ে গাড়ি উঠানামা করতে পারবে।

প্রকল্পটিতে মোট ব্যয় হয়েছে ৮,৯৪০ কোটি টাকা। সে হিসেবে এই এক্সপ্রেসওয়ের প্রতি কিলোমিটার নির্মাণে খরচ হয়েছে ১৯১ কোটি টাকারও বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত করা মেগা প্রকল্প বা সড়কের মধ্যে সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প এটি।
প্রকল্পের ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিয়ে ওঠা প্রশ্নের জবাবে গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, অন্য প্রকল্পের সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের পিপিপি প্রকল্প মিলিয়ে ফেললে চলবে না।

‘এটা পিপিপি প্রজেক্ট। সরকার টাকা দিচ্ছে না। সরকার শুধু ল্যান্ডটা ইকুইটি হিসেবে শেয়ার করেছে। সাধারণত অন্যান্য প্রকল্পগুলো সরকারি অর্থায়নে হয়। সেক্ষেত্রে সরকার ধার করে অথবা নিজেদের কোষাগার থেকে প্রকল্পগুলো করে। তবে এক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন, বলেন অধ্যাপক হক।

এই প্রকল্পকে বেসরকারি খাতে শিল্প নির্মাণের সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, সরকার জমি দিলে সেই স্থানে যেভাবে শিল্প গড়ে তোলা হয়, ঠিক সেভাবেই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে।

চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত প্রকল্পে বিনিয়োগ করা কোম্পানি নির্ধারিত টোল তুলবে।

সেক্ষেত্রে যদি খরচ ১০ গুণ বেড়েও যায়, তাতেও সরকারের কোন ক্ষতি নেই। কারণ নির্মাণ খরচ সরকারের না। আর এই সময়ে কেউ যদি এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার না করে সেক্ষেত্রেও ক্ষতি কেবল বিনিয়োগাকারীরই হবে, সরকারের না, বলেন অধ্যাপক হক।

তবে বিষয়টিকে ভিন্নভাবে দেখছেন বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক এস এম মেহেদী হাসান।

যেহেতু প্রকল্পের মোট ব্যয়ের ২৭ শতাংশ অর্থাৎ ২৪১৩ কোটি টাকা সরকার বহন করছে, ফলে সরকারেরও একটি খরচ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, বেসরকারি অংশীদার যেহেতু বিনিয়োগ করছে তার মানে সে বিনিয়োগ করা অর্থ মুনাফাসহ ফিরিয়ে আনবে। আর তার একটি পথ টোল, যা স্বাভাবিকভাবেই সাধারণের ওপর চাপ ফেলবে।

তার মতে, বেসরকারি খাত কখনোই নিশ্চিত না হয়ে বিনিয়োগ করে না। খরচ বাড়লে তারা আলোচনা করে নেয়। সে হিসেবে এই বিশাল অংকের প্রকল্পে সরকারের খরচ নেই সাদা চোখে তা বলার উপায় নেই।

যতই খরচ বাড়ুক, শেষ পর্যন্ত সরকারের দায় বাড়ছে এবং সাধারণ জনগণের ওপর চাপও বাড়ছে, বলেন মি. হাসান।

সূত্র: বিবিসি।
 

এলিভেটেড এক্সপ্রেস

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম