বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির ব্যাখ্যায় যা জানাল বিদ্যুৎ বিভাগ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২৪, ০১:১৭ এএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে আবারো বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। ফেব্রুয়ারি থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে। সরকারের নির্বাহী আদেশে দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, ভর্তুকি সমন্বয়ের লক্ষ্যে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে নতুন দর কার্যকর হবে।
বিদ্যুতের মূল্য বৃুদ্ধির ব্যাখ্যায় বিদ্যুত বিভাগ জানায়, বাংলাদেশ সরকার এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন, ২০০৩ এর ধারা ৩৪ক তে প্রদত্ত্ব ক্ষমতাবলে, জনস্বার্থে বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সঞ্চালন নিশ্চিত করতে হুইলিং চার্জ, বিদ্যুতের পাইকারি মূল্যহার ও খুচরা মূল্যহার এবং বিদ্যুৎ সম্পর্কিত বিবিধ সেবার জন্য চার্জ/ফি পুন: নির্ধারণ করা হয়েছে।
সব বিতরণ কোম্পানির ২৩০ কেভি এবং ১৩২ কেভি লাইনের জন্য পাইকারি বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে যথাক্রমে ৮ টাকা ৪৪ পয়সা এবং ৮ টাকা ৪৭ পয়সা। এর বাইরে ৩৩ কেভি লাইনের জন্য পিডিবির বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ টাকা ৬২ পয়সা, আরইবির ক্ষেত্রে ৬ টাকা ২৩ পয়সা, ডিপিডিসির ৮ টাকা ৫৬ পয়সা, ডেসকো ৮ টাকা ৫৮ পয়সা, ওয়েস্টজোনের ক্ষেত্রে ৭ টাকা ৪৬ পয়সা এবং নেসকোর ৭ টাকা ৪ পয়সা।
গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৩৪ থেকে ৭০ পয়সা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সর্বনিম্ন ব্যবহারকারীর মাসে ২০ টাকার বেশি বাড়বে না বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৩৪ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ৭০ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। লাইফলাইন গ্রাহকের (৭৫ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারী) মাসের বিল ২০ টাকার মতো বাড়তে পারে। নতুন দর ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। তিনি বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে না; সমন্বয় করা হচ্ছে। উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে বিক্রি করায় লোকসান হচ্ছে। এ কারণে কিছুটা সমন্বয় করা।
প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ আরও বলেন, এখন বিদ্যুতের গড় উৎপাদন খরচ প্রতি ইউনিট ১২ টাকার মতো, আর ভোক্তাকে ৭ টাকায় বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে। বছরে বিদ্যুৎ খাতে ৪৩ হাজার কোটি টাকা সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। কয়েক বছর ধরে ধীরে ধীরে বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করা হবে। কম ব্যবহারকারী গ্রাহকের বিদ্যুতের দাম কম বাড়বে, আর উপরের দিকে বেশি ব্যবহারকারীর বিদ্যুৎ খরচ বেশি বাড়বে। তিনি বলেন, ডলারের দর বেড়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়েছে। তেল-গ্যাস ও কয়লার আন্তর্জাতিক বাজার দর ক্ষেত্রবিশেষে একই থাকলেও আগের চেয়ে ডলার প্রতি ৪০ টাকার বেশি খরচ হচ্ছে। এখানে বিশাল ব্যবধান তৈরি হয়েছে। ডলারের সঙ্গে সমন্বয়ের কাজ করা হচ্ছে।
নসরুল হামিদ বলেন, প্রতি মাসে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে জ্বালানি তেলের দামের সমন্বয় করা হবে। এজন্য ইনডেক্স ও ফর্মুলা করা হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ প্রতিদিন এ সমন্বয় করে। সেখানে অতিরিক্ত বেড়ে গেলে সরকার অন্যভাবে সহায়তা করে।
তিনি বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে না, সমন্বয় করা হচ্ছে। উৎপাদন খরচের তুলনায় কম দামে বিক্রি করায় লোকসান হচ্ছে, এ কারণে কিছুটা সমন্বয় করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা তো খরচ উঠাতে চাচ্ছি; খুবই সামান্য পরিমাণে দাম বাড়বে। লাইফ লাইন গ্রাহকের (৭৫ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারী) মাসের বিল ২০ টাকার মতো বাড়তে পারে। গ্রাহকরা একটু সাশ্রয়ী হলে বিল আগের অবস্থায় থাকবে। আমাদের লক্ষ্য-গ্রাহকদের মিতব্যয়ী হতে উদ্বুদ্ধ করা।
২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হয়। তখন আবাসিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে শূন্য থেকে ৫০ ইউনিটের দাম ৩ টাকা ৯৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪ টাকা ৩৫ পয়সা, শূন্য থেকে ৭৫ ইউনিটের দাম ৪ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪ টাকা ৮৫ পয়সা, ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিটের দাম ৬ টাকা ১ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৬৩ পয়সা, ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিটের দাম ৬ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৯৫ পয়সা, ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিটের দাম ৬ টাকা ৬৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭ টাকা ৩৪ পয়সা, ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিটের দাম ১০ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১১ টাকা ৫১ পয়সা এবং ৬০০ ইউনিটের দাম ১২ টাকা ৩ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৩ টাকা ২৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়।
২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন অধ্যাদেশ ২০২২ সংশোধনের কারণে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা পায় সরকার। ওই অধ্যাদেশের আওতায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দিল বিদ্যুৎ বিভাগ
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বিদ্যুৎ বিভাগ মনে করে এই সমন্বয় গ্রাহকদের কাছে সহনীয় হবে।
