Logo
Logo
×

জাতীয়

ইফতার পার্টি না করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কারণ কী

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৪, ০৮:৩২ পিএম

ইফতার পার্টি না করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কারণ কী

দ্বিতীয় রমজানের দিন বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বেই অনুষ্ঠিত হয় মন্ত্রিসভার বৈঠক। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন জানান, প্রধানমন্ত্রী ইফতার পার্টি না করার জন্য সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। 

রোজা শুরুর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ইফতার পার্টি না করার ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোজা শুরুর পর আবারো একই নির্দেশনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী।

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যারা ইফতারে আগ্রহী ও সাধ্য আছে তারা যেন সেই ইফতার পার্টির টাকা নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ায়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মূলত সরকারিভাবে ইফতার আয়োজন না করার ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছেন। একই সঙ্গে এ নির্দেশনা গ্রহণ করেছে তার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগও।

দল থেকে এবার কোনো ইফতার পার্টি আয়োজন করবে না বলে বিবিসিকে জানান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম। এছাড়া বেসরকারিভাবেও এতে ইফতার পার্টির বিষয়টা নিরুৎসাহিত হবে বলে মনে করছেন অনেকে।

কিন্তু ইফতার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনার কারণ কী? 

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, গতবারও কিন্তু আওয়ামী লীগ থেকে এবং প্রধানমন্ত্রীর গণভবনে কোন ইফতার পার্টির আয়োজন করা হয়নি। 

বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, সাধারণত গণভবনসহ বিভিন্ন জায়গায় খুবই আড়ম্বরপূর্ণ ইফতার পার্টি হয়, এটা অনেকটা সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়, কিন্তু সেখানে যারা যায় তাদের সবারই কিন্তু ইফতার করার সামর্থ্য থাকে। তাই সরকার ও দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে যারা গরিব, দুস্থ তাদের কাছে ইফতার সামগ্রী বিতরণের জন্য।

গতবার অপচয় রোধে ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে খরচ কমাতে ইফতার পার্টি না করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।

এটা সেটারই চলমান প্রক্রিয়া কিনা আমি জানি না, তবে এ জাতীয় অকারণে আরও বহু খরচ করা হয়, সেগুলোও বন্ধ করা উচিত বলে মনে করেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার।

আলী ইমাম মজুমদার বলেন, এটা ভালো সিদ্ধান্ত, কিন্তু বাড়াবাড়ি ব্যয় অন্য সব কিছুতেই বন্ধ করা উচিত।

সাধারণত ইফতার পার্টিতে কেমন আয়োজন হয়?

সাধারণত সরকারিভাবে প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে বেশ কয়েক দফা ইফতারের আয়োজন হয়। সেটার চিত্রটা কেমন হয় জানাচ্ছিলেন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা আলী ইমাম মজুমদার।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে একটা অস্থায়ী প্যান্ডেল বানানো থাকে, মাসে অন্তত ১০-১৫ দিন ইফতারের আয়োজন হয় বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে। এতে কেমন খরচ হয় সেটার সঠিক পরিমাণ বলতে পারবো না তবে অনেক হয়। এছাড়া সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তর থেকেও ইফতার পার্টি করা হয়ে থাকে।

রাষ্ট্রপতি ভবনে আড়ম্বরপূর্ণভাবে ইফতার আয়োজন হয়, বিভিন্ন বাহিনী ইফতারের আয়োজন করে, সবমিলে সরকারি উদ্যোগেই প্রচুর ইফতারের আয়োজন হয় বলে জানান আলী ইমাম মজুমদার। আর এর সবগুলোতেই আয়োজনের মাত্রাটা হয় ব্যাপক।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ইফতার আয়োজনের চিত্রটা তুলে ধরেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম।

তিনি বলেন, আমরা যখন কোনো ইফতারের আয়োজন করি সেখানে অনেক লোকজনকে দাওয়াত দেওয়া হয়, অনেকেই সেখানে আসে। আয়োজনও বেশি করতে হয়। বড় কমিউনিটি সেন্টার বা বিলাসবহুল হোটেলে অনেক খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করতে হয়।

এগুলোকে অপচয় হিসেবে বিবেচনা করে সেখান থেকে সরে আসার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান আওয়ামী লীগের এই নেতা।

বাহাউদ্দিন নাছিম। বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সারা দেশে সাংগাঠনিকভাবে ইফতার আয়োজন না করে নিম্নবিত্ত যারা কষ্টে আছে তাদের সহায়তা করব।

বিপ্লব বড়ুয়াও জানান, দল থেকে ইফতার পার্টি করলে হাজার হাজার নেতাকর্মী আসে, যাদের বেশিরভাগেরই বাড়িতে ইফতার করার সামর্থ্য আছে। এখন সেই টাকায় ইফতার কিনে দুস্থ, গরিব, অসহায়দের দেওয়া হচ্ছে।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের তরফ থেকে প্রায়শই বলা হয় দেশে নিম্নবিত্ত মানুষের সংখ্যা কমেছে ও মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও বেড়েছে। সেখান ইফতার ঘিরে সরকারের এমন সিদ্ধান্ত দেশের দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতির বাস্তবতাকেই যেন সামনে আনছে।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, সাধারণ মানুষ হিসেবে, মিডলক্লাস হিসেবে, দ্রব্যমূল্য নিয়ে এবার ভীষণ নিয়ে চাপের মুখে আছি। এটা যৌক্তিক সিদ্ধান্ত, সরকারিভাবে মানা হবেই, বেসরকারিভাবে কেউ মানবে, কেউ মানবে না, কিন্তু কিছুটা কৃচ্ছসাধন তো হবেই।

কিভাবে বাস্তবায়ন হবে এ নির্দেশনা?

বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, আমরা এবার কোন ইফতার পার্টি করছি না। গতকাল স্বেচ্ছাসেবক লীগ থেকে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। মানে যে পার্টি করতাম আড়ম্বরভাবে সেটি অনাড়ম্বরভাবে বিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা অবশ্যই যারা গরিব, কষ্টে আছে তাদের উপকার হবে।

বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, সারা দেশে সাংগঠনিকভাবে এটি মানা হবে। আমরা ইতিমধ্যেই ইফতার সামগ্রী ক্রয় করে গরিব মানুষদের দিচ্ছি। এটা সারা মাসব্যাপী চলবে ঈদের আগপর্যন্ত, এরপর ঈদের উপহার দেব গরিব মানুষদের।

তবে আলী ইমাম মজুমদার মনে করিয়ে দেন শুধু ইফতারের ক্ষেত্রে এমন নির্দেশনা না দিয়ে সব ক্ষেত্রেই কী করে অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত ব্যয় কমানো যায় সেটি ভাবা উচিত।

তিনি বলেন, সামনে পহেলা বৈশাখ আসছে, উন্মাদের মতো খরচ করা হয়, রাষ্ট্রীয়ভাবেও হয় বেসরকারিভাবেও হয়, এগুলো আগে ছিল না, এখন এগুলো বন্ধ করা উচিত।
 

রমজান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম