
কমেছে শীতের দাপট। সারা দেশেই কমবেশি সূর্যের দেখা মিলেছে। যদিও বাতাসের কারণে শীতের তীব্রতা অনুভ‚ত হয়েছে। শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায় ৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। এদিন ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শুক্রবারের মতো আগামী দুদিনও সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। এতে আরও কমবে শীতের তীব্রতা। যদিও এ সময় আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থাকলেও শুষ্ক থাকতে পারে আবহাওয়া। তবে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। পাশাপাশি উত্তর/উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে।
শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এসব তথ্য জানানো হয়। এদিকে ভোলার চরফ্যাশন, পাবনা, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বেড়েছে শীতজনিত নানা রোগ। চরফ্যাশনে অন্তত ৩শ জেলে নৌকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
আজকের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, এদিন সকাল সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। সারা দেশে রাতের এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
কালকের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, এদিন সকাল সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। সারা দেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। বর্ধিত পাঁচ দিনের আবহাওয়ার অবস্থায় বলা হয়, এ সময়ের শেষের দিকে রাত ও দিনের তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, শৈত্যপ্রবাহ বৃহস্পতিবার ছিল ৫ জেলায়। শুক্রবার তার আওতা বেড়ে ১০ জেলায় হয়েছে। এগুলো হলো-রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, গোপালগঞ্জ ও মৌলভীবাজার। এসব জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। তবে আজ থেকে দুই-তিনদিনের মধ্যে কয়েকটি জেলায় শৈত্যপ্রবাহ থাকবে না। এছাড়া আগামী ১৬ বা ১৭ জানুয়ারি আবারও শৈত্যপ্রবাহের আওতা বাড়তে পারে।
প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
চরফ্যাশন (ভোলা) : দক্ষিণ উপকূলের মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে বসবাস করা ৩০০ জেলে পরিবারের লোকজন সরকারি কোনো সুবিধা পাচ্ছেন না। আগুন আর ছেঁড়া কাঁথাই তাদের শীত নিবারণের একমাত্র অবলম্বন। ফলে এসব পরিবারের বৃদ্ধ-শিশুদের শীতজনিত রোগ লেগেই আছে। ওয়ার্ল্ডফিশের ইকো ফিশ প্রকল্পের ভোলা জেলা সমন্বয়কারী খোকন চন্দ্র শীল বলেন, পরিবারকে সোলার প্যানেল ছাড়া কিছুই দিতে পারিনি। এসব জেলে মৌলিক ও মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
চরকুকরিমুকরির ইউনিয়ন পরিষদ সচিব লোকমান হোসেন বলেন, এসব জেলে উদ্বাস্তু। তাদের বসতি নেই। যার কারণে পরিষদের করা তালিকায় অন্তর্ভুক্তি হচ্ছে না। আমি বিষয়টি জানি, চেষ্টা করছি এদের জন্য কিছু করার।
মাদ্রাজ ইউনিয়নের বেতুয়াসুলিজ খালের মাথায় দেখা যায়, মেঘনাতীরে ৫০ নৌকায় বসত করে প্রায় ২শ মানুষ। স্থানীয়রা এদের বলে মানতা-সম্প্রদায়। ঢালচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য মোস্তফা বলেন, সরকার থেকে এসব জেলের জন্য কোনো বরাদ্দ আসে না। তাই দেওয়া হয় না।
পাবনা : শুক্রবার জেলায় তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। হাড় কাঁপানো শীতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন চরাঞ্চলের ২ লাখের বেশি মানুষ। অনেকের পর্যাপ্ত শীতের কাপড় নেই। তীব্র শীতের মধ্যেই তাদের কাজে বের হতে হয়। এদিকে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত নানা রোগে শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা আক্রান্ত হচ্ছে। গেল ২৪ ঘণ্টায় পাবনা জেনারেল হাপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ৩ শতাধিক শিশু ও বয়স্ক লোক ভর্তি হয়েছে।
পঞ্চগড় : শুক্রবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া লোকজন তেমন ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে হাটবাজারে লোকসমাগম কমে আসে। এদিকে শিশু ও বয়স্করা সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পঞ্চগড় আধুনিক হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
দিনাজপুর : আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তোফাজ্জল হোসেন জানান, বুধবার থেকে দিনাজপুরে কমতে শুরু করেছে তাপমাত্রা। বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার নেমে আসে ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
হাকিমপুর (দিনাজপুর) : হিলিতে রিকশাচালক মোবারক আলী বলেন, ঠান্ডায় রিকশা চালাতে খুব কষ্ট হয়। তবুও পেটের দায়ে বের হয়েছি। পরিবারে চারজন সদস্য। একদিন কাজ না করলে সংসার চালানো যায় না। দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ তোফাজ্জল হোসেন বলেন, জেলায় সকাল ৬টায় তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) : সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯০ শতাংশ।