প্রেস সচিব শফিকুল আলম
ফ্যাসিস্টরা জয়ী হলে ২ লাখ লোক জেলে যেত

জবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:৩১ পিএম

ফাইল ছবি
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, আন্দোলনে ২ হাজার লোক জীবন দিয়েছে। যদি ফ্যাসিস্টরা জয়ী হতো, তাহলে দুই লাখ লোক জেলে যেতে। তাদের রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হতো।
শনিবার দুপুর
১২টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি আয়োজিত ‘জুলাই বিপ্লবে গণমাধ্যমের ভূমিকা
ও পরবর্তী প্রত্যাশা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শফিকুল আলম
বলেন, অনেক গণমাধ্যম আন্দোলনকারীদের ‘জাতির শত্রু’ হিসেবে তুলে ধরেছিল। গণমাধ্যমের
ভাষা ব্যবহার করে তখন শাসকদের কাছে বার্তা দেওয়া হচ্ছিল এই আন্দোলনকারীদের দমন করা
উচিৎ। আন্দোলনে ২ হাজার মানুষ মারা গেছে। যদি ফ্যাসিস্ট শক্তি জয়ী হতো, তাহলে দুই লাখ
মানুষকে জেলে যেতে হতো। তাদের রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হতো। আর তখন ন্যারেটিভ হতো
যে, কিছু ‘দুর্বৃত্ত’ দেশজুড়ে অরাজকতা সৃষ্টি করেছে।
ক্ষমতাবানকে
প্রশ্ন করা সাংবাদিকদের কাজ উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, সাংবাদিকদের এই কাজ চালিয়ে
যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে। ছাত্রদল বা শিবির যার বিরুদ্ধেই রিপোর্ট হয়, তাহলে প্রথমে দেখতে
হবে রিপোর্ট টা সত্য কিনা। সত্যি হলে তা মেনে নিতে হবে।
জুলাই আন্দোলনে
সাংবাদিকদের ভূমিকার কথা স্মরণ করে শফিকুল আলম বলেন, জুলাই আন্দোলনে সাংবাদিকরা সরকারের
রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে যে ভূমিকা পালন করেছে, তা ঐতিহাসিক। এই আন্দোলনে দেশের টিভি,
অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়াসহ ও অনেক সিটিজেন সাংবাদিক ভূমিকা রেখেছে। এর বিপরীতে গিয়ে
একটা পক্ষ কনসেন্ট তৈরির চেষ্টা করেছে যে, এই আন্দোলনকারী লোকেরা বিটিভিতে আক্রমণ করেছে,
মেট্রোরেলে হামলা করেছে, এরা সন্ত্রাসী, দুষ্কৃতকারী, এদেরকে মারো, তারা সন্ত্রাসী,
তাদেরকে হত্যা করা জায়েজ।
শফিকুল আলম
আরও বলেন, জুলাই আমাদের মহত্তম সময়। এই সময় আমাদের জন্য এর আগে কখনো আসেনি। আমাদের
সাংবাদিকরা ১৯৭১ এর যুদ্ধ কতটুকু দেখেছে আমি জানি না। তখন আমাদের এক কোটি লোক শরনার্থী
হয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। এদের মানবেতর জীবন ও দুঃখ দুর্দশা নিয়ে খুব কমই লেখা পাওয়া যায়।
এসব নিয়ে আমরা স্টোরি করিনি।
প্রেস সচিব
বলেন, আমাদের লেখালেখির অভ্যাসটা খুব কম। লেখার অভ্যাস বাড়াতে হবে। কার কতটুকু ভূমিকা লিখে রাখেন। প্রতি মুহূর্তে এই
লেখা আমাদের নতুনভাবে আলোকিত করবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকরা ঠিকই তাদের লেখা
চালিয়ে গেছে। পত্রিকায় লিখেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছে।
আবু সাঈদের শহিদ হওয়ার ভিডিওটা প্রকাশ হয়েছিল, ওটাও ছিল সিটিজেন জার্নালিজম। যারা আন্দোলনকে
গণ জোয়ারে পরিণত করতে ভূমিকা রেখেছিল তাদের বিষয়ে জানতে হবে। ঠিক একইভাবে যারা আমাদের
ওপর আত্রমণ চালিয়েছিল, স্বৈরাচারী সরকারকে ইন্ধন জুগিয়েছিল তাদের বিষয়েও জানতে হবে।
আমাদের আবু সাঈদের শহিদের গল্পটা জানতে হবে।
দেশের মধ্যে
শেখ হাসিনা চোরতন্ত্র তৈরি করেছিলেন মন্তব্য করে প্রেস সচিব বলেন, ‘বড় বড় কোম্পানিকে
কাজ পাইয়ে দেওয়া ছিল তার কাজ। সে সময় বিদেশে টাকা পাচারকারীরা এখন সেই টাকায় প্রপাগান্ডা
ছড়াচ্ছে। তারা প্রতিষ্ঠিত করতে চায় যে, এখানে এখন মৌলবাদী শক্তির উত্থান ঘটেছে, কোনো
গণ-অভ্যুত্থান হয়নি। পরাজিত শক্তি আবার আপনাদের জঙ্গি বানাতে চায়। জুলাই-আগস্টে কার
কী ভূমিকা ছিল, তা নিয়ে আরও ভালো করে জানার কাজ চলছে।
শফিকুল আলম
আরও বলেন, ২০০৯ সালের ক্ষমতায় আসার পর প্রথম যে ন্যারেটিভ তৈরি করেছিল তা হলো ‘স্বাধীনতা
বিরোধী শক্তি’। এই পুরো সময়ে আওয়ামী বয়ানই বিদ্যমান ছিল। আন্দোলন করেছে ছাত্রদল, শিবির,
বামপন্থীরা। কিন্তু এমনভাবে উপস্থাপন করেছে যে বৈশ্বিকভাবে সন্ত্রাসী ও তালেবান হিসেবে।
যার মানে তাকে মারা জায়েজ।
প্রেস ইনস্টিটিউট
অব বাংলাদেশ (পিআইবি) এর মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ফ্যাসিবাদী শক্তি শুধু মূর্তি
বানাইনি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক কানেকটিভিটি
(সম্পর্ক) এখনো বিদ্যমান রযেছে। অনুরূপভাবে আমরা কিছু ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে
পারি, যেগুলো একসময় বড় প্রতিষ্ঠানে রূপ নেবে।
প্রতিষ্ঠানকে
ধ্বংস করা যায় না উল্লেখ করে ফারুক ওয়াসিফ বলেন, প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করতে গেলে আমরা নিজেরা
বিলুপ্ত হয়ে যাব। ফ্যাসিবাদ কোনো প্রতিষ্ঠান নয়, ফ্যাসিবাদ হলো জমিদারি ও কর্তৃত্ব,
আমরা সেই জমিদারি ও কর্তৃত্বের অবসান করতে চাই।
মাইনাস থিওরি
বিষয়ে সতর্ক করে পিআইবির এই মহাপরিচালক বলেন, ২০০৬-০৭ সালের জরুরি অবস্থাকে আমাদের
রাজনৈতিক দলগুলো বুঝতে পারেনি। এটা ছিল মাইনাস টু থিওরি। আজকেও আন্দোলনের অংশীদাররা
কাউকে মাইনাস করতে চাই, তাদেরও একই অবস্থা হবে।
ফারুক ওয়াসিফ
বলেন, আমাদের ভিশনটা (লক্ষ্য) হবে জাতীয় ও জনগোষ্ঠীর স্বার্থ কেন্দ্রিক। যদি ভিশনটা
ব্যক্তি কেন্দ্রিক হয়, তাহলে এটি হয়ে যায় অ্যামবিশন। যার ফলস্বরূপ এই অভ্যুত্থান
পরবর্তী ছয় মাস আমরা মতবাদ প্রতিষ্ঠায় জোর দিচ্ছি, এই কারণে আমরা বিভক্ত হয়ে যাচ্ছি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ইমরান হুসাইনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন,
জবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম।
জবি সাংবাদিক
সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন লিমনের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন, জবি কোষাধ্যক্ষ
অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমিন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ
উদ্দিন।
আরও বক্তব্য
দেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. আসাদুল ইসলাম, জাস্টিস ফর
জুলাই-এর জবির আহ্বায়ক সজিবুর রহমান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক
ও জবি শিক্ষার্থী নূর নবী।
এছাড়াও অনুষ্ঠানের
শুরুতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জবি সাংবাদিক সমিতির সহসভাপতি আসাদুল ইসলাম। সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মী,
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।