Logo
Logo
×

জাতীয়

সন্‌জীদা খাতুনের বর্ণাঢ্য জীবন

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২৫, ০৫:৫০ পিএম

সন্‌জীদা খাতুনের বর্ণাঢ্য জীবন

ফাইল ছবি

ছায়ানটের কথা আসলেই প্রথমে আসে সন্‌জীদা খাতুনের নাম।  জীবনের শুরু থেকেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছিলেন প্রতিবাদী ভূমিকায়। দেশের যে কোনো সংকটে সোচ্চার ছিলেন এই বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী হিসেবে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকেই সন্‌জীদা খাতুন সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন।

শিল্পী কামরুল হাসানের নেতৃত্বে সন্‌জীদা খাতুন ব্রতচারী আন্দোলনে যোগ দেন। তার প্রথম গানের গুরু ছিলেন সোহরাব হোসেন। তার কাছে তিনি শিখেছিলেন নজরুলসংগীত, আধুনিক বাংলা গান ও পল্লিগীতি। পরে রবীন্দ্রসংগীত শিখেছেন হুসনে বানু খানমের কাছে। 

শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন সন্জীদা খাতুন।  শান্তিনিকেতন থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর তিনি ইডেন কলেজ, কারমাইকেল কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা শেষে অবসরে যান। 

সন্‌জীদা খাতুন মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে মারা যান। গত এক সপ্তাহ ধরে তিনি এই হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন। 

দেশের সংস্কৃতি অঙ্গণের অগ্রণী ব্যক্তিত্ব, সঙ্গীতজ্ঞ ও ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সন্‌জীদা খাতুনের মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।

তার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন ছায়ানটে অনুষ্ঠান বিভাগের জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক রশীদ আল হেলাল। 

সন্‌জীদা খাতুন ১৯৩৩ সালের ৪ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। বাবা কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক। মা সাজেদা খাতুন গৃহিণী।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৪ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক, ১৯৫৫ সালে ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর এবং ১৯৭৮ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষকতা দিয়েই কর্মজীবন শুরু তার। 

শান্তিনিকেতন থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর তিনি ইডেন কলেজ, কারমাইকেল কলেজ যোগদান করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে দীর্ঘকাল অধ্যাপনা করেছেন তিনি। 

সন্‌জীদা খাতুন ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে সম্মানসহ স্নাতক এবং ১৯৫৫ সালে ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, শান্তিনিকেতন থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ১৯৭৮ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। 

মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই তিনি রংপুর থেকে ঢাকায় আসেন। এরপর সাভারের জিরাব গ্রাম থেকে ঢাকা হয়ে কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। তার সঙ্গে কয়েকজন সাংস্কৃতিক কর্মীও ছিলেন। তারা ভারতের আগরতলা শহরে কিছুদিন অবস্থান করেন। তারপর ১৯৭১ সালের ৫ মে কলকাতায় গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে সাংস্কৃতিক কর্মীদের একতাবদ্ধ করা শুরু করেন।

গত শতকের ষাট দশকে জাতির জাগরণের উত্তাল সময়ে ছায়ানট হয়ে ওঠে বাঙালির সাংস্কৃতিক যাত্রার দিশারী সংগঠন। আর স্বাধীনতা-পরবর্তী প্রতিক্রিয়াশীলতার প্রত্যাঘাতের সময় ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রামেও ছায়ানট থাকল একই অবস্থানে অবিচল প্রত্যয়ে। 

কঠিন বাস্তবতায় ছায়ানটের গুরুত্ব উত্তরোত্তর বেড়েছে এবং যখন জাগরণে ও প্রতিরোধে বৃহত্তর সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অনুঘটকের ভূমিকায় ছায়ানট তখন বা ততদিনে এ প্রতিষ্ঠানের কাণ্ডারী সন্‌জীদা খাতুন। প্রতিষ্ঠান অনেকের ভূমিকা ও অবদানেই রূপ পায়, তবে তখনই পায় যখন নেতৃত্ব থাকে সঠিক। 

বাঙালি মুসলিম সমাজের রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীদের প্রথম প্রজন্মের একজন তিনি, তবে তিনি কেবল সেই ভূমিকায় আবদ্ধ থাকলেন না, নিজেকে ছড়িয়ে দিলেন এবং ছাড়িয়ে উঠলেন সংগীত শিক্ষকের ও সংগঠকের দায় কাঁধে নিয়ে। সাহিত্যই তার আগ্রহ ও চর্চার আদি বিষয় হওয়ায় তার শিক্ষা সাঙ্গীতিক ব্যাকরণের পাঠ ছাপিয়ে জীবন, সমাজ ও সংস্কৃতি অবধি পরিব্যাপ্ত।

ছায়ানট সন্জীদা খাতুন রবীন্দ্রসংগীত

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম