Logo
Logo
×

শেষ পাতা

কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক

ড. ইউনূসকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস

কাতারের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান

Icon

বাসস

প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ড. ইউনূসকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ পুনর্গঠনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান বিন জসিম আল থানি। বৃহস্পতিবার দোহায় কাতারের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ আশ্বাস দেন। তিনি প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বের প্রতিও পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন।

এদিকে প্রধান উপদেষ্টা কাতারের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, আপনারা এ সুযোগ নিতে পারেন। বুধবার রাতে কাতার ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ সম্ভাবনা নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন। বৈঠকে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা শেখ মোহাম্মদ জানান, তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে কাতারের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে তার একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে মনোনীত করবেন। চলমান সংস্কার ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ আগামী বছরগুলোয় আরও শক্তিশালীভাবে আত্মপ্রকাশ করবে বলে আস্থা প্রকাশ করেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য কূটনৈতিক, আর্থিক ও বিনিয়োগ খাতে কাতারের পূর্ণ সহযোগিতা কামনা করেন। এর মধ্যে রয়েছে দেশের প্রায় ১৮ কোটি মানুষ, বিশেষ করে তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য নতুন সুযোগ এবং একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ সৃষ্টি করা। তিনি কাতারের প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, আমাদের তরুণদের স্বপ্নের দেশ গড়তে আপনাদের সহায়তা প্রয়োজন। শেখ মোহাম্মদ বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টাকে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করার জন্য কাতারে একটি কারিগরি দল পাঠানোর আহ্বান জানান।

বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও আলোচনা করা হয়। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গা জনগণ যাতে মর্যাদার সঙ্গে স্বদেশে ফিরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য সম্ভাব্য সব সহায়তার আহ্বান জানান। শেখ মোহাম্মদ রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সমর্থন জোরালো করার আহ্বান জানান। তিনি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রতি এবং সমস্যার টেকসই সমাধানে কাতারের অব্যাহত সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।

দুই নেতা গাজার পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করেন। অধ্যাপক ইউনূস দুঃখপ্রকাশ করেন যে, গাজার দুর্দশার বিষয়ে বিশ্বের বেশির ভাগ অংশ এখনো নীরব। কাতারের প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অনেক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বে গাজা সংকট কভার করার জন্য কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আলজাজিরাকে ধন্যবাদ জানান বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা।

অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের নারী ক্রীড়াবিদদের প্রশিক্ষণ এবং সুযোগ-সুবিধা প্রদানে কাতারের সহায়তা কামনা করেন। তিনি কাতারের প্রধানমন্ত্রীকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। শেখ মোহাম্মদ এই অনুরোধ সানন্দে গ্রহণ করেন। বৈঠকে অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।

কাতারের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান : কাতারের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ এখন আবার ব্যবসায় ফিরেছে এবং তা বড় পরিসরে। আমরা আপনাদের অংশীদারত্ব চাই। তিনি জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছে এবং একটি দুর্নীতিমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ফোরাম, কাতারের সভাপতি আজাদ আশরাফ স্বাগত বক্তব্য দেন। বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী সম্ভাব্য কাতারি বিনিয়োগকারী ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের সামনে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেওয়া সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়ে একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আপনি যদি কখনো বাংলাদেশকে বিনিয়োগের গন্তব্য হিসাবে বিবেচনা করেন, তাহলে এখনই সম্ভবত সবচেয়ে ভালো সময়।

জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন দায়িত্ব গ্রহণ করে, তখন বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতে ৩.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অনাদায়ি ঋণ ছিল, যা এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৬০০ মিলিয়ন ডলারে। এর মধ্যে কাতার এনার্জির কাছে ২৫৪ মিলিয়ন ডলারের বকেয়া ছিল, যা বুধবারের মধ্যে শূন্যে নেমে এসেছে বলে তিনি জানান। অনুষ্ঠানে কাতারের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি সালেহ মাজেদ আল খালাফি, নেক্সট স্মার্ট সলিউশনসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা আলি বেন ফার্জসহ অন্যরা বক্তব্য দেন। এতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নজরুল ইসলাম সমাপনী বক্তব্য দিয়েছেন।

কাতারের বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল : বুধবার দোহায় কাতারের উপপ্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষাবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শেখ সাউদ বিন আবদুল রহমান বিন হাসান আল-থানির সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কাতারের বিনিয়োগকারীদের জন্য একটা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা যেতে পারে। সেখানে কাতারের ব্যবসায়ীরা সমরাস্ত্রের যন্ত্রাংশসহ অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করতে পারেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান। অধ্যাপক ইউনূস কাতারের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে সেদেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

কাতার তিন বছর পরপর বাংলাদেশ থেকে ৭২৫ জন করে সেনাসদস্য নেবে। প্রধান উপদেষ্টা কাতারের উপপ্রধানমন্ত্রীকে এই সেনাসদস্যের সংখ্যা বাড়ানোর অনুরোধ জানান।

শিক্ষার্থীদের ‘তিন-শূন্য মানুষ’ হিসাবে প্রস্তুত করার পরামর্শ : তরুণ প্রজন্মকে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রজন্ম অভিহিত করে প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের বড় স্বপ্ন দেখতে এবং নিজেদেরকে ‘তিন-শূন্য মানুষ’ (শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণ) হিসাবে গড়ে তুলতে উৎসাহিত করেন। বৃহস্পতিবার কাতারের রাজধানী দোহায় কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘তিন শূন্যের পৃথিবী’ শিরোনামে এক অনুপ্রেরণামূলক বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, আমি যখন কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাই, তখন খুবই স্বস্তিবোধ করি। আমি নিজেকে তরতাজা অনুভব করি। তোমরা মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রজন্ম। আমি আন্তরিকভাবে তা বিশ্বাস করি। তোমরাই সুপারম্যান আর সুপারওম্যান।

অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ইউনূসকে বিশ্ব মানবতার কল্যাণে অসামান্য অবদানের জন্য সম্মানসূচক অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।

অন্তর্বর্তী সরকার ড.মুহাম্মদ ইউনূস কাতার সফর

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম