ডিভোর্সের পরও সন্তানের টানে আদালতে আবার বিয়ে
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০১ মে ২০২৫, ০৮:০১ পিএম
ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
এক দম্পতির তিন বছর আট মাস আগে বিবাহবিচ্ছেদ হয়। পরে দুই কন্যাসন্তানের হেফাজত চেয়ে আদালতে পালটাপালটি মামলা করেন মা ও বাবা। শুনানির সময় বাবার সঙ্গে আদালতে সন্তানদের দেখা হতো। কিন্তু এতটুকু দেখাতে মন ভরত না সন্তানদের। সন্তানেরা মা-বাবাকে সব সময় একসঙ্গে কাছে পেতে চাইত। সাত বছর বয়সী বড় কন্যা প্রতিবার সাক্ষাতের সময় কান্নাকাটি করে মা-বাবাকে একসঙ্গে থাকার জন্য আকুতি জানাত।
পরে দুই কন্যার মানসিক অবস্থা বিবেচনা
করে ব্যথা ও অভিমান ভুলে ওই দম্পতি আবার একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। প্রায় তিন বছর
মামলা চালানোর পর গত মার্চ মাসে আদালত চত্বরে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।
জানা গেছে, ২০১৭ সালে পারিবারিকভাবে এই
দুজনের বিয়ে হয়। তারা দুজনই উচ্চশিক্ষিত। দুজনই উচ্চপদে চাকরি করেন। বিয়ের পর নারীর
বাবার বাড়িতে তাদের সংসার শুরু হয়। পরে রাজধানীতে একটি ভাড়া বাসা নিয়ে থাকা শুরু করেন।
বিয়ের এক বছরের মাথায় তাদের কন্যাসন্তানের জন্ম হয়।
নারীর ভাষ্য, বিয়ের পর তাদের সংসার ভালোই
চলছিল। স্বামী যৌতুক চেয়েছিলেন।এ কারণে মেয়ের সুখের কথা ভেবে যৌতুক হিসেবে ছয় লাখ টাকা
ব্যয় করে টিভি, ফ্রিজ, খাট ও আলমারি উপহার দেন তার বাবা।
মামলায় ওই নারী অভিযোগ করেন, বসুন্ধরা
আবাসিক এলাকায় তার স্বামীর ভাড়া বাসায় ওঠার কয়েক মাস পর থেকে সংসারে অশান্তি শুরু হয়।
ভাড়া বাসার পাশে তার ননদের বাসা ছিল। শাশুড়ি কখনো তাদের সঙ্গে, আবার কখনো মেয়ের বাসায়
থাকতেন। তুচ্ছ কারণে শাশুড়ির সঙ্গে তার প্রায় সময় মনোমালিন্য হতো। এ নিয়ে স্বামী তাকে
কটু কথা বলতেন। একপর্যায়ে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করতেন স্বামী। তবু সন্তানের কথা
ভেবে অত্যাচার সহ্য করে সংসার করতে থাকেন তিনি।
মামলায় ওই নারী আরও অভিযোগ করেন, একপর্যায়ে
বাবার কাছ থেকে জমি লিখে নিতে স্বামী তাকে চাপ দিতে শুরু করেন। এ প্রস্তাবে রাজি না
হওয়ায় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন আরও বেড়ে যায়। একসময় তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়।
পরে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বিয়ের চার বছরের মাথায় তিনি স্বামীকে তালাক দিয়ে সন্তান
নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যান।
তালাক কার্যকরের (তিন মাস) আগে স্বামীর
পরিবারের সদস্যরা তালাকের নোটিশ প্রত্যাহারের অনুরোধ করতে থাকেন। স্বামী ও তাদের স্বজনেরা
ওই নারীর কাছে অঙ্গীকার করেন, আর কখনোই শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করা হবে না। স্বামীর
অনুরোধ ও সন্তানের কথা ভেবে কার্যকর হওয়ার আগে ওই নারী তালাকের নোটিশ প্রত্যাহার করে
নেন। আবার সংসার শুরু করেন।
আদালতের কাছে নারী দাবি করেন, আবার সংসার
শুরুর পর থেকে কয়েক মাস তার স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক বেশ ভালো ছিল। তবে দ্বিতীয় সন্তান
গর্ভে আসার পর থেকে আবারও স্বামী নির্যাতন করা শুরু করেন। তিনি এতটাই উগ্র হয়ে ওঠেন
যে নির্যাতন ঠেকাতে পরিবারের অন্য সদস্যরা এগিয়ে এলে স্বামী তাদের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার
করতেন। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আবারও স্বামীর বাসা ছেড়ে চলে যান বাবার বাসায়। ২০২১
সালের ৩০ আগস্ট তিনি আবার তার স্বামীকে তালাকের নোটিশ দেন। তালাক কার্যকরও হয়। ছয় মাস
পর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার দ্বিতীয় কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। স্বামী কখনো দ্বিতীয়
সন্তানকে দেখতে আসেননি।
তবে এই নারীর সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন
তার সাবেক স্বামী। সাবেক স্বামীর অভিযোগ, তার মায়ের সঙ্গে স্ত্রীর বনিবনা হতো না। এ
কারণে স্ত্রী প্রায় সময় তার মায়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেন। একদিন রাগ করে তার স্ত্রী
বড় মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যান। দ্বিতীয় সন্তান জন্মের পর কন্যাদের দেখতে তিনি
শ্বশুরবাড়িতে গেলে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে মারধর করেন।
এ ঘটনার পর তাদের দুজনের মধ্যে আর কোনো
সমঝোতা হয়নি। পরে দুই কন্যার হেফাজত চেয়ে সাবেক স্ত্রীকে বিবাদী করে পারিবারিক আদালতে
মামলা করেন সাবেক স্বামী। অন্যদিকে ওই নারীও সাবেক স্বামীকে বিবাদী করে একই ধারায় মামলা
করেন।
বিবাদীপক্ষের আইনজীবী মলয় কুমার সাহা বলেন,
এই দম্পতির বড় সন্তানের বয়স প্রায় সাত বছর, আর ছোট সন্তানের বয়স চার বছর। পারিবারিক
আদালতে মামলার শুনানি চলাকালে আদালতকক্ষে স্বামী-স্ত্রীর দেখা হতো। দুই কন্যা তখন মা–বাবা দুজনের সঙ্গেই
কথা বলত। তারা কান্নাকাটি করত; সবাই মিলে একসঙ্গে থাকতে চাইত। একসময় স্বামী-স্ত্রী
দুজনই সন্তানের মানসিক অবস্থার কথা চিন্তা করে আবার একসঙ্গে সংসার করার সিদ্ধান্ত নেন।
