Logo
Logo
×

জাতীয়

জন্মশতবার্ষিকীর শ্রদ্ধাঞ্জলি

সরদারের দর্শনে সন্ধান মেলে মানবিক পৃথিবীর

Icon

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

প্রকাশ: ০২ মে ২০২৫, ১০:৪৭ পিএম

সরদারের দর্শনে সন্ধান মেলে মানবিক পৃথিবীর

দার্শনিক, চিন্তাবিদ ও মুক্তবুদ্ধির প্রতীক মনীষী সরদার ফজলুল করিম ছিলেন এক বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব, যার দর্শনে সুন্দর এক মানবিক পৃথিবীর সন্ধান পাওয়া যায়। বাংলাদেশের দর্শনচর্চার অন্যতম এই পথিকৃতের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার এক স্মরণসভায় বক্তারা এভাবে তাকে মূল্যায়ন করেন। 

তারা বলেন, প্লেটো ও সক্রেটিসের মতোই সংলাপের মাধ্যমে দর্শন রচনা করতেন সরদার ফজলুল করিম। রাজধানীর বাংলামোটরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ইসফেনদিয়ার জাহিদ হাসান মিলনায়তন এ স্মরণসভার আয়োজন করে সরদার ফজলুল করিম স্মৃতি পরিষদ। এতে অংশ নেন বরেণ্য চিন্তাবিদ, লেখক, শিক্ষাবিদ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

সরদার ফজলুল করিমের জন্ম ১৯২৫ সালের ১ মে। তার মৃত্যু হয় ২০১৪ সালের ১৫ জুন। তিনি একাধারে দার্শনিক, শিক্ষক ও লেখক ছিলেন। কবিতা লিখেছেন, অভিনয়ও করেছেন। স্মরণসভায় বক্তারা বলেছেন, বাংলাদেশে যারা জ্ঞানের আলোর মশাল জ্বালিয়েছেন, সরদার ফজলুল করিম ছিলেন তাদের অন্যতম। 

স্মরণসভায় সরদার ফজলুল করিমের জীবন ও দর্শনচর্চা নিয়ে আলোচনা করেন- বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এমএম আকাশ, প্রাবন্ধিক ও গবেষক মফিদুল হক, অধ্যাপক এমএ আজিজ মিয়া, অধ্যাপক হারুন রশিদ, অধ্যাপক এএন রাশেদা, স্থপতি ইকবাল হাবিব, বিজ্ঞান লেখক সুব্রত বড়ুয়া, কথাপ্রকাশের প্রকাশক মো. জসিম উদ্দিন, সমাজচিন্তক কাজী মো. শীষ ও সুব্রত ভট্টাচার্য, লেখক মশিউল আলম, আনিসুর রহমান প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে মাকসুদ খান সোহান আবৃত্তি করেন কবি তারাপদ রায়ের ‘দারিদ্র্য রেখা’ ও ফাতেমা ফারজানা নির্জনা আবৃত্তি করেন কাজী নজরুল ইসলামের ‘মানুষ’ কবিতা। অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদারের লেখা ‘জীবন জয়ী হবে’ গ্রন্থ হতে ‘ব্যক্তির হতাশা থেকে হতাশার মহামারী হয়’ প্রবন্ধের অংশবিশেষ পাঠ করেন অনন্যা গোস্বামী। সহজিয়া ব্যান্ডের রাজীব আহমেদ রাজু পরিবেশন করেন ‘ছোট পাখি’ গানটি। ‘ও আলোর পথযাত্রী’ দলীয় সংগীত পরিবেশন করে। অতিথিদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ডা. শাকিল আখতার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অধ্যাপক স্বপন নাথ। অনুষ্ঠানের সূচনার মতো সমাপ্তিও হয় বাঁশির সুরে।

আলোচনা পর্বে অধ্যাপক হারুন রশীদ বলেন, ‘সরদার ফজলুল করিম সক্রেটিসের প্রশ্নোত্তর পদ্ধতির মতো করে দর্শন রচনা করতেন।’ 

অধ্যাপক এমএ আজিজ মিয়া বলেন, ‘সরদার ফজলুল করিম প্লেটো ও সক্রেটিসের মতো সংলাপের মাধ্যমেই নিজের জীবনের দর্শন রচনা করতেন। তিনি বলতেন, আমাকে প্রশ্ন কর, প্রশ্নের উত্তরেই আমি সমাধান খুঁজব।’

অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, ষাটের দশকে সরদার নিজেকে একটু বেশি জাতীয়তাবাদী হিসেবে উল্লেখ করতেন। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর ওই ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে তিনি বলতেন, সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে যদি দশ লক্ষ বছরও লাগে, তিনি সমাজতন্ত্রের পক্ষেই লড়বেন।

সরদার ফজলুল করিমের ‘অতিক্রান্ত সময়’ বই নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে কথাপ্রকাশের প্রকাশক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশের দর্শনচর্চার পথিকৃৎ সরদার ফজলুল করিম। তার প্রগতিশীল চিন্তা আমাদের নতুন মানবিক পথের সন্ধান দিয়েছিল।’ 

সমাজচিন্তক কাজী মো. শীষ বলেন, ‘আমরা যখন হতাশা, অন্ধকার থেকে বের হয়ে আলোর পথ খুঁজি, তখন আমরা সরদারকে খুঁজে পাই। তার স্মৃতি আমাদের এক সুন্দর পৃথিবীর সন্ধান দেয়।’

প্রাবন্ধিক ও গবেষক মফিদুল হক সরদার ফজলুল করিমের ‘দর্শনকোষ’ বই নিয়ে আলোচনায় বলেন, ‘সরদার ফজলুল করিম সাবলীলভাবে রচনা করে গেছেন। তিনি চেষ্টা করেছেন, মাতৃভাষায় সহজভাবে দর্শনকে সবার সামনে তুলে ধরতে।’

সরদার ফজলুল করিম

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম