Logo
Logo
×

জাতীয়

খসড়া অধ্যাদেশে আয়কর ক্যাডারের মতামত প্রতিফলিত হয়নি

এনবিআর বিলুপ্তের প্রভাব পর্যালোচনার তাগিদ

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৫, ০৯:০১ পিএম

খসড়া অধ্যাদেশে আয়কর ক্যাডারের মতামত প্রতিফলিত হয়নি

রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশের খসড়ায় আয়কর ক্যাডারের মতামত প্রতিফলিত হয়নি। তাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তের বিষয়টি পর্যালোচনার তাগিদ দিয়েছে বিসিএস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশন। একইসঙ্গে এনবিআর বিলুপ্ত করা হলে দেশের অর্থনীতিতে এর কী প্রভাব পড়বে, তা পর্যালোচনা করতে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সংগঠনটি।

রোববার বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশন থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়। শনিবার আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনের মাল্টিপারপাস হলে সংগঠনটির জরুরি সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রায় অর্ধশত আয়কর ক্যাডারের কর্মকর্তা খসড়া অধ্যাদেশের ওপর মতামত জানান। অনুষ্ঠানে বিসিএস (কাস্টমস) অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। 

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সঙ্গে রাজস্ব প্রশাসন ও রাজস্ব নীতি প্রণয়ন কাজ পরিচালিত হওয়ার বিষয়ে যে ঐকমত্য হয়েছিল খসড়া অধ্যাদেশে তার প্রতিফলন নেই। রাজস্ব প্রশাসন পরিচালনা ও রাজস্ব নীতি প্রণয়নে বিশেষায়িত জ্ঞানের প্রয়োজন হয়। এসব কাজে এনবিআরের বিভিন্ন পদে কেবল বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস) ক্যাডারের সদস্যরা নিয়োজিত থাকেন। খসড়া অধ্যাদেশে এনবিআর বিলুপ্ত করে তার স্থলে রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করে বিভাগ দুটিতে কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডারের জন্য সংরক্ষিত না রেখে রাজস্বের কাজে অভিজ্ঞতা নেই এমন কর্মকর্তা পদায়নের সুযোগ রাখা হয়েছে। এতে একদিকে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা কাজে অভিজ্ঞ নয় এমন কর্মকর্তা পদায়নের মাধ্যমে রাজস্ব প্রশাসনের দক্ষতা, গতিশীলতা এবং কার্যকারিতা বিঘ্নিত হবে। অন্যদিকে এনবিআরে কর্মরত দুটি ক্যাডারের কাজের ক্ষেত্র ও পদোন্নতির সুযোগ মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, রাজস্ব ব্যবস্থার জন্য স্বাধীন ও স্বতন্ত্র রাজস্ব এজেন্সি থাকা অপরিহার্য। পৃথিবীর সব দেশেরই স্বাধীন ও স্বতন্ত্র রাজস্ব এজেন্সি আছে। খসড়া অধ্যাদেশে এনবিআর বিলোপের যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের রাজস্ব এজেন্সিটি বিলোপ হয়ে যাবে। বিদ্যমান রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী সরকারের কোনো বিভাগ এনফোর্সমেন্ট কাজ করতে পারে না। অথচ রাজস্ব ব্যবস্থাপনা মূলত এনফোর্সমেন্ট ভিত্তিক কাজ। এ কারণেই রাজস্ব প্রশাসনের কাজ পরিচালনার জন্য স্বতন্ত্র সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত রাজস্ব এজেন্সি দরকার হয়। ফলে রাজস্ব রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্ত হয়ে গেলে রাজস্ব ব্যবস্থাপনার এনফোর্সমেন্ট কিভাবে হবে তার আইনি কাঠামো খসড়া অধ্যাদেশে রাখা হয়নি। এর ফলে রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হবে। 

এছাড়াও খসড়া অধ্যাদেশে অনেক কাঠামোগত অসঙ্গতি এবং ত্রুটি রয়েছ। যেমন খসড়ায় রাজস্ব নীতি বিভাগের কার্যপরিধিতে ‘কর আইন প্রয়োগ ও কর আহরণ পরিস্থিতি পরিবীক্ষণ’ যুক্ত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের ওপর রাজস্ব নীতি বিভাগের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে; যা আইনের দৃষ্টিতে সাংঘর্ষিক। খসড়ার অনুচ্ছেদ ৯-এ রাজস্ব নীতি বিভাগে জনবল পদায়নের নিমিত্ত সুপারিশের লক্ষ্যে একটি কমিটির কথা উল্লেখ থাকলেও ধারা ৪(৪)-এ কোনো কমিটির উল্লেখ নেই।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এনবিআর বিলোপ করে তার স্থলে দুটি পৃথক বিভাগ প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত বৃহৎ কাঠামোগত সংস্কার। এ বিষয়ক অধ্যাদেশের খসড়া প্রণয়নের কাজটি অত্যন্ত তড়িঘড়ি করে করা হয়েছে। এ বৃহৎ প্রশাসনিক পরিবর্তনের সঙ্গে এনবিআরে কর্মরত আয়কর, ভ্যাট এবং কাস্টমস বিভাগের হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর কর্মজীবন জড়িত থাকা সত্ত্বেও কারো সঙ্গে কোনো পরামর্শ ব্যতিরেকে খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয়েছে।

বিসিএস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশন ৫টি দাবি জানিয়েছে। এগুলো হচ্ছে- খসড়া অধ্যাদেশটি অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। দেশের একমাত্র রাজস্ব এজেন্সি বিলোপ করার আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা সেই বিষয়ে অংশীজনদের মতামত গ্রহণ করতে হবে। রাজস্ব এজেন্সি বিলোপের সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে ব্যাপক পর্যালোচনা এবং বিশেষজ্ঞ মতামত গ্রহণ করতে হবে। রাজস্ব সংস্কারের কাজ সত্যিকার অর্থে অর্থবহ ও কার্যকর করতে প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ, আইনবিদ, ব্যবসায়িক সংগঠনের প্রতিনিধি, রাজস্ব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, আয়কর ও কাস্টমস বিভাগে কর্মরত কর্মকর্তাসহ সব স্টেকহোল্ডারদের সমন্বয়ে জাতীয় পর্যায়ের একটি কমিশন অথবা কমিটি গঠন করতে হবে। ওই কমিশন অথবা কমিটির প্রতিবেদন এবং আয়কর ও কাস্টমস বিভাগের মতামতের ভিত্তিতে এনবিআরের কাঠামোগত পরিবর্তনসহ সার্বিক রাজস্ব সংস্কারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। 

এছাড়াও রাজস্ব সংস্কারকে শুধু পৃথকীকরণের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে টেকসই রাজস্ব নীতি প্রণয়ণ, রাজস্ব বিষয়ক আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, রাজস্ব ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন ও অটোমেশন, এনবিআরের প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ বৃদ্ধিতে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।

খসড়া অধ্যাদেশ আয়কর ক্যাডার মতামত প্রতিফলিত

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম