জাতির গুরুত্বপূর্ণ অভিভাবক ছিলেন বিচারপতি আবদুর রউফ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৫, ১১:৪৯ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
জাতীয় জীবনে অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় হয়ে থাকবেন বিচারপতি মোহাম্মাদ আবদুর রউফ। তিনি ছিলেন জাতির গুরুত্বপূর্ণ অভিভাবক। সব সময়ে কাজে সক্রিয় থাকতেন। তিনি তার কাজের মাধ্যমেই মানুষের মাঝে বেঁচে থাকবেন।
শুক্রবার রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে দি বারাকাহ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত প্রয়াত বিচারপতি মোহাম্মাদ আবদুর রউফের ‘জীবনালেখ্য ও দোয়া’ অনুষ্ঠানে বক্তারা স্মৃতিচারণ করে এসব কথা বলেন।
বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ ছিলেন দি বারাকাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাপিলিয়েট ডিভিশনের সাবেক বিচারপতি ও বাংলাদেশের সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও জাতীয় শিশু সংগঠন ফুলকুঁড়ি আসরের সভাপতি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ। তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ খুবই সূক্ষ্মভাবে সব কাজ করতেন। অনেক জটিল বিষয় সহজভাবে উপস্থাপন করতেন। তিনি সফল নির্বাচন কমিশনার ছিলেন।
স্মরণসভায় বাবার সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করেন বড় ছেলে অ্যাডিশনাল এটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ। তিনি বলেন, আমি ছেলে হিসেবে বাবার জীবনকে তিনভাগে মূল্যায়ন করি। সেগুলো হলো- তার আইনজীবী, বিচারপতি ও অবসরকালীন জীবন। সব অধ্যায়ে তিনি সফল ছিলেন। তিনি বারাকাহ ফাউন্ডেশন ও ফুলকুঁড়ি আসর ভাবতেন। বারকাহ ফাউন্ডেশন পরিচালিত হাসপাতালগুলো সুপার স্পেশালাইজড মানে উন্নতি করতে কাজ করে গেছেন। তিনি বাবার জন্য সবার কাছে দোয়া চান।
অন্যান্য বক্তারা বলেন, বিচারপতি রউফ ছিলেন নাগরিক সমাজের একজন বড় মাপের ব্যক্তিত্ব। ভোটাধিকার, সংস্কার এবং গণতন্ত্রের জন্য তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। নব্বইয়ের আন্দোলনের পর দেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফেরাতে বিচারপতি রউফ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব নেন। তার ওই সময়ের ভূমিকা ও জীবদ্দশায় বিভিন্ন ভালো কাজে অবদান রাখায় জাতি সারাজীবন মনে রাখবে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পথ চলার ক্ষেত্রে বিচারপতি রউফ বারবার উদাহরণ হয়ে আছেন।
অনুষ্ঠানে বিচারপতি মোহাম্মাদ আবদুর রউফের কর্মময় জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে নানা আলোচনা করেন বক্তারা। বারাকাহ ফাউন্ডেশনের অধীন হাসপাতালগুলোর উত্তরোত্তর উন্নয়নের জন্য আবদুর রউফ সব সময় দিক নির্দেশনা প্রদান করতেন বলে তারা জানান। তিনি দরিদ্র রোগীদেরকে স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সবসময় সমর্থন দিতেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামিক আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শামসুল আলম, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট একেএম বদরুদ্দোজা, সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্টের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ড. মিয়া মোহাম্মদ আইয়ুব ও ট্রপিক্যাল হোমসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রবিউল হক।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বারাকাহ ফাউন্ডেশনের চিফ এক্সিকিউটিভ অধ্যাপক ডা. এম ফখরুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন বারাকাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. মতিয়ার রহমান। দোয়া অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করেন বারাকাহ ফাউন্ডেশনের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আফজালুল করিম। ধন্যবাদ জ্ঞাপন সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজের সাবেক প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ডা. মো. রুহুল আমিন।
বারাকাহ ফাউন্ডেশনের প্রাণপুরুষ বিচারপতি মোহাম্মাদ আবদুর রউফ মৃত্যুতে বারাকাহ পরিবার গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়। দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন বারাকাহ জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ইনসাফ বারাকাহ হাসপাতালের এডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. আলতাফ হোসেন, জেনারেল ম্যানেজার একাউন্ট এন্ড ফাইনান্স মোজাফফর হাসান খান মজলিস, বারাকাহ জেনারেল হাসপাতালের জিএম শাহজাহান সিরাজ, ডিজিএম আল কাইয়ুম আল ফয়সাল, এজিএম মুহা. হাফিজুর রহমান, বারাকাহ স্পেশালাইজড হাসপাতালের ডিরেক্টর মো. নজরুল ইসলাম শাওন, বারাকাহ ফাউন্ডেশনের ম্যানেজার মনোয়ার হোসেন রানা, অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার (বিপণন ও মিডিয়া) হোসাইন মোহাম্মদ দুলাল, আব্দুল কুদ্দুস, মো. সোহরাব আকন্দ, মো. হিরো মিয়া প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ ১৯৬২ সালে তৎকালীন ঢাকা হাইকোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত হন। ১৯৭০ সালে তিনি তৎকালীন পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ১৯৮২ সালের ২৯ জানুয়ারি তিনি হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক নিযুক্ত হন।
হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি পদে থাকাকালে ১৯৯০ সালের ২৫ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত হন আবদুর রউফ। ১৯৯৫ সালের ১৮ এপ্রিল তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদ ত্যাগ করেন। পরে তিনি হাইকোর্ট বিভাগে বিচারক হিসেবে কাজ শুরু করেন ও ১৯৯৫ সালের জুন মাসে আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৯৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
বিচারপতি আবদুর রউফ দুর্নীতিবিরোধী জাতীয় সমন্বয়ক কমিটির চেয়ারম্যানও ছিলেন। তিনি জাতীয় শিশু সংগঠন ফুলকুঁড়ি আসরের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
