মব সৃষ্টির অভিযোগে ধানমন্ডিতে আটক
তিন নেতাকে ছেড়ে দিল পুলিশ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২০ মে ২০২৫, ১১:০৮ পিএম
ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
মব সৃষ্টি করে একজন প্রকাশককে স্বৈরাচারের দোসর আখ্যা দিয়ে ঝামেলা করা দুই সমন্বয়কসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন নেতাকে ছেড়ে দিয়েছে ধানমন্ডি থানা পুলিশ।
মঙ্গলবার জাতীয় নাগরিক কমিটির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক হান্নান মাসুদের জিম্মায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ধানমন্ডি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ক্যশৈনু। তিনি বলেন, তাদের একজন সিনিয়র সমন্বয়ক এসেছিলেন এবং পরিবারের লোকজনও এসেছিলেন। পরে মুচলেকা রেখে তাদের ওই সমন্বয়ক ও পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছি।
ওই তিনজন হলেন মোহাম্মদপুর থানার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের (বৈবিছাআ) আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম রাব্বী, ঢাকা মহানগর শাখার সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব আফারহান সরকার দিনার এবং মো. উল্লাহ জিসান। মো. উল্লাহ জিসানের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটিতে কোনো পদবি নেই।
এদিকে মঙ্গলবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ফেসবুকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, নৈতিক স্খলনজনিত কারণে মোহাম্মদপুর থানার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের (বৈবিছাআ) আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম রাব্বীকে সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সোমবার রাতে আটকের পর মঙ্গলবার বিকাল তিনটা পর্যন্ত ধানমন্ডি থানায় ছিলেন এই তিনজন। মঙ্গলবার দুপুরের পর ধানমন্ডি থানায় যান জাতীয় নাগরিক কমিটির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক হান্নান মাসুদ। প্রায় ঘণ্টাখানেক থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার পর তার জিম্মায় এই তিনজনকে ছেড়ে দেয় ধানমন্ডি থানা পুলিশ। এ সময় আটকদের পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন থানায়।
হান্নান মাসুদ থানার সামনে গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, এমনি খোঁজখবর নিতে এসেছিলাম। একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল সেটা মীমাংসা করা হলো। এই ঘটনায় বাইরের অনেকেই জড়িত আছে। সেগুলো আমরা খতিয়ে দেখছি।
এ ব্যাপারে পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, আমরা কোথাও মব সৃষ্টি করতে দেব না। সবাইকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না।
জানা গেছে, সোমবার রাতে ধানমন্ডির ৪ নম্বর সড়কে একজন প্রকাশকের বাসার সামনে মব সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছিল। এমন খবরে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে এই তিনজনকে আটক করে পুলিশ থানায় নিয়ে আসে। পুলিশের ধানমন্ডি অঞ্চলের সহকারী কমিশনার (এসি) শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামান জানান, সোমবার রাতে একজন প্রকাশককে ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা দিয়ে তার বাসায় কিছু লোক প্রবেশের চেষ্টা করে। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়। পরে তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা পরিচয় দিয়ে ওই প্রকাশককে গ্রেফতার করতে বলেন। কিন্তু ওই প্রকাশকের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। এ কারণে তাকে গ্রেফতারে অপারগতা প্রকাশ করে পুলিশ।
পুলিশের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ানোর একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) উদ্দেশ করে এক তরুণ বলেন, আপনি কেন এখানে কথা বলতেছেন এভাবে। আপনি ওসি, আপনি গ্রেফতার করলেন না কেন। আমি বলছি, আমি বলছি...আপনি গ্রেফতার করেন। তখন ওসি বলেন, ওনার নামে মামলা নেই। তরুণ বলেন, মামলা আমি করব, আপনি গ্রেফতার করেন।’ ওসি জবাব দেন, আমার সিনিয়র কর্মকর্তারা বলেছেন, মামলা না থাকলে গ্রেফতার করা যাবে না।’ ওসি তখন তরুণদের উদ্দেশে ‘সিন ক্রিয়েট’ না করার অনুরোধ করেন। তারপরও তারা গ্রেফতারের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। তারা বারবার বলছিলেন, ওসি টাকা খেয়েছেন। একপর্যায়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
হান্নান মাসুদের ফেসবুক পোস্ট : তিনজনকে মোহাম্মদপুর থানা থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার পর এ বিষয়ে নিজের বক্তব্য তুলে ধরে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন এনসিপি নেতা হান্নান মাসুদ। তাতে তিনি বলেছেন, ‘মোহাম্মদপুর থানা বৈবিছাআর আহ্বায়কসহ তিনজনকে আটক করা হয় মব সৃষ্টির চেষ্টাকালে, যার ফলে বৈবিছাআর পরিচয়ে স্টুডেন্টরা ধানমন্ডি থানায় গিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি করছিল। এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনারের অনুরোধে আমি সেখানে যাই। সেখানে গেলে প্রশাসনের অনুরোধে বিষয়টির মধ্যস্থতা করি, যেহেতু প্রশাসন ওদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ রুজু করেনি এবং করতেও চাচ্ছিল না। হান্নান মাসুদ আরও লিখেছেন, আর তা ছাড়া ফ্যাসিবাদবিরোধী একটা মঞ্চের ব্যানারে নিয়মিত মব সৃষ্টি করা ব্যক্তিদের মধ্যেও একজন সেখানে ছিল, যেটা পরবর্তী সময়ে আমি জানতে পারি। এই বিষয়ে প্রশাসনকে পরিপূর্ণ সহযোগিতা করা হচ্ছে, ইনশা আল্লাহ এই মব সৃষ্টির মূল হোতারা দ্রুত অ্যারেস্ট হবে। ডিএমপিকে ওদের ব্যাপারে ইনফর্ম করা হয়েছে।
