করোনাভাইরাসের নতুন উপ-ধরন
মাস্ক ব্যবহারের নির্দেশনা মানছে না কেউ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৫, ১১:২৮ পিএম
ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেশে করোনাভাইরাসের নতুন একটি উপ-ধরন (সাব-ভ্যারিয়েন্ট) এক্সএফজিতে আক্রান্ত
রোগী বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১৫ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর
৩ হাজার ৮৮টি নমুনা পরীক্ষা করে ২২৫ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়া রোধে
স্বাস্থ্য বিভাগ যথাসম্ভব জনসমাগম এড়িয়ে চলা, মাস্ক ব্যবহারসহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি
মেনে চলার নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু হাতেগোনা কিছু মানুষ ছাড়া কেউই মাস্ক পরিধানের
মতো সাধারণ নির্দেশনাও মানছেন না।
গত ২ দিন সরেজমিন রাজধানীর মেট্রোরেল, বিভিন্ন গণপরিবহণ, শপিংমল, কাঁচাবাজার,
বিনোদনকেন্দ্র, হাসপাতালসহ একাধিক স্থান ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এ অবস্থায় চিকিৎসা
বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা করোনা সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেন, প্রতিবেশী
ভারতসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে করোনাভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এরই মধ্যে চিহ্নিত
হয়েছে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার রোধে সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরের আইএইচআর
ডেস্কগুলোয় নজরদারি ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। হাঁচি বা কাশির
সময় বাহু বা টিস্যু দিয়ে নাখ-মুখ ঢেকে রাখা ও ব্যবহৃত টিস্যু অবিলম্বে ঢাকনাযুক্ত ময়লার
ঝুড়িতে ফেলার জন্য বলা হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা এবং কমপক্ষে
৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হয়েছে। রোগীর নাখ-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার এমনকি
রোগীর সেবাদানকারীরাও সতর্কতা হিসাবে মাস্ক ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মাস্কের ভূমিকা
বিশেষজ্ঞরা যুগান্তরকে বলেন, করোনাভাইরাস সাধারণত শ্বাসতন্ত্র আক্রান্ত
করে। মহামারির সময়ে কেএন-৯৫ মাস্ক, কাপড়ের মাস্ক বা ফেস শিল্ড ইত্যাদি ব্যবহার করে
শ্বাসতন্ত্রে রোগগুলো থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হয়েছে। সম্প্রতি দেশে করোনা সংক্রমণ আবারও
বাড়তে থাকায় হাসপাতালগুলোতে সীমিত পরিসরে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত
নিয়েছে সরকার। প্রাথমিকভাবে যেসব মেডিকেল কলেজ ও জেলা হাসপাতালে আরটি-পিসিআর ল্যাব
রয়েছে সেখানেই এ পরীক্ষা শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর)
প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. আহমেদ নওশের আলম যুগান্তরকে বলেন, করোনাভাইরাস থেকে
রক্ষা পেতে ফেস মাস্ক বেশ ভূমিকা রাখতে পারে। মাস্ক ব্যবহারের কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে।
এক্ষেত্রে সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো, যা ওয়ানটাইম (একবার ব্যবহারের
পর ফেলে দেওয়া) ব্যবহার করতে হয়। এগুলোতে অনেক লেয়ার (স্তর) থাকে।
তবে বাজারে এক লেয়ারের মাস্কও পাওয়া যায়, সেগুলো ব্যবহার করা ঠিক নয়।
সার্জিক্যাল মাস্কের দুটি দিক থাকে। সামনের দিকটা একটু হালকা নীল রংয়ের এবং পেছনের
দিকটা সাদা রংয়ের। সাদা অংশটা ফিল্টার, যা ভেদ করে জীবাণু ঢুকতে পারে না। যারা সুস্থ
আছেন এবং ভাইরাস বা জীবাণু প্রতিরোধ করতে চান, তারা সাদা অংশটি বাইরে রেখেই মাস্ক ব্যবহার
করবেন। কেননা সাদা অংশ দিয়ে ফিল্টার করেই বাতাস ভেতরে ফুসফুসে ঢুকবে। নীল অংশটি মুখের
ভেতরে থাকবে। অথচ বেশির ভাগ মানুষই সাদা অংশটি মুখের ভেতরে রাখেন। তবে কেউ যখন ঠান্ডা,
জ্বর, হাঁচি, কাশি বা অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত, তখন নীল অংশটি বাইরে রেখে মাস্ক ব্যবহার
করবেন। এতে তার মুখ থেকে ক্ষতিকর কিছু বাইরে যেতে বাধা পাবে এবং অন্য কেউ সহজে আক্রান্ত
হবেন না।
চিকিৎসকরা আরও বলেন, অনেকে মাস্ক পরার সময় নাক খোলা রেখে শুধু মুখ ঢেকে
রাখেন। এটা ঠিক নয়। বরং উপরের মেটাল (ধাতব) অংশটাকে নাকের সঙ্গে চেপে ও নিচের অংশটাকে
থুঁতনির নিচে নিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। অনেকে মাস্ক থুঁতনি পর্যন্ত খুলে রেখে কথাবার্তা
বলেন। এটাও ঠিক নয়। এতে লেগে থাকা জীবাণু সহজেই দেহে ছড়িয়ে পড়ে। একই মাস্ক ঘরে রেখে
দীর্ঘদিন ব্যবহার করা উচিত নয়। নিয়ম হলো, একটি মাস্ক সর্বোচ্চ একদিন ব্যবহার করে সেটা
ধ্বংস করে দিতে হবে।
২৪ ঘণ্টায় ১৫ রোগী শনাক্ত
এদিকে দেশে বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায়
নতুন করে ১৫ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। ১৩৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে এদের শরীরে
করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তবে ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত কারও মৃত্যু হয়নি। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত
রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৮৫ জনে। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে
পাঠানো করোনাবিষয়ক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ১৮ জন। এর ফলে
এ সংখ্যা ২০ লাখ ১৯ হাজার ৩৯৮ জনে দাঁড়িয়েছে। এর আগের দিন বুধবার (১১ জুন) ১০৭ জনের
নমুনা পরীক্ষায় ১০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়।
দেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর
১০ দিন পর ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।
২০২১ সালের ৫ ও ১০ আগস্ট দুদিন করোনায় সর্বাধিক ২৬৪ জন করে মারা যান।
