Logo
Logo
×

জাতীয়

বাংলাদেশ ইউএসটিআর বৈঠক

৩৫ ভাগ শুল্ক ইস্যুতে দুই শর্তের মুখে দেশ

Icon

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ১০:৩৩ পিএম

৩৫ ভাগ শুল্ক ইস্যুতে দুই শর্তের মুখে দেশ

ফাইল ছবি

বাড়তি শুল্ক ইস্যুতে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তরের (ইউএসটিআর) সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের প্রথম দিন বাংলাদেশকে দুটি শর্ত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর প্রথমটি হচ্ছে, তৈরি পোশাকসহ ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে তাদের দেশে বিনিয়োগ করতে হবে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, বাংলাদেশে শ্রম অধিকার নিশ্চিত করা। এছাড়া আলোচনায় উঠে আসা অন্য বিষয়ের বেশির ভাগেই একমত দুই দেশ। ৯ জুলাই ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের নেতৃত্বে শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নেন। এতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তুলা, গম ও জ্বালানি তেল আমদানি বাড়ানো ও বোয়িং বিমান কেনার প্রস্তাব দেওয়া হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে এ তথ্য জানান।

ইউএসটিআরের সঙ্গে এই আলোচনার মূল লক্ষ্য হলো বাড়তি ৩৫ শতাংশ মার্কিন শুল্ক থেকে অব্যাহতি নিশ্চিত করা, যা ১ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে কার্যকর হতে যাচ্ছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকে ইউএসটিআর কর্মকর্তাদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি বিনিয়োগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিকের পারিশ্রমিক এবং কারখানার পরিচালন ব্যয় বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি হবে। এতে যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করে একটি টি-শার্ট উৎপাদনের পর তার বিক্রয় মূল্য বাংলাদেশে উৎপাদিত একই টি-শার্টের তুলনায় অনেক বেশি হবে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের বেশি মূল্য দিয়ে পণ্য কিনতে হবে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ খুব বেশি উপযোগী হবে না বাংলাদেশের জন্য। তবে দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে আগের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানির পরিমাণ বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এছাড়া বোয়িং বিমান কেনার প্রক্রিয়া শুরু এবং এপ্রিল থেকে তরল গ্যাস এলএনজি এবং গম আমদানি বাড়ানো হয়েছে। শ্রম অধিকার নিশ্চিত প্রসঙ্গে সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার একটি শ্রম আইন প্রণয়ন করেছে। শ্রম আইন বিধিমালা প্রণয়ন প্রক্রিয়াধীন। যা শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করবে।

এদিকে ইউএসটিআরের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে ১০ জুলাই বাংলাদেশ সময় ভোর ৩টায় শেয়ার করা এক ফেসবুক পোস্টে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তোজা বলেন, ‘বাংলাদেশ-মার্কিন শুল্কসংক্রান্ত আলোচনার প্রথম দিন শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার আলোচনা চলবে। বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় উভয়পক্ষ ফের সভা শুরু করবে। যুক্তির দিক থেকে উভয়পক্ষই বেশির ভাগ পয়েন্টে একমত হয়েছে। তবে শুল্ক ইস্যুতে মন্তব্য করার সময় এখনো আসেনি। 

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এবং অতিরিক্ত সচিব ড. নাজনীন কাউসার চৌধুরীও ব্যক্তিগতভাবে বৈঠকে যোগ দেন। তারা স্থানীয় সময় সকালে ঢাকা থেকে ওয়াশিংটনে পৌঁছেছেন।

এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) কর্মকর্তাদের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা আলোচনার প্রথম বৈঠকের লক্ষ্য হচ্ছে একটি খসড়া দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করা, যা ১ আগস্ট থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত ৩৫ শতাংশ শুল্ক থেকে বাংলাদেশকে অব্যাহতি দিতে পারে।

বৈঠক প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার সকালে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিতীয় রাউন্ডের ৩ দিনব্যাপী শুল্কসংক্রান্ত আলোচনার প্রথম দিনের বৈঠক ওয়াশিংটন ডিসিতে শেষ হয়েছে। আলোচনাটি ছিল ব্যাপক, যেখানে দুদেশের মধ্যকার বাণিজ্য সম্পর্কের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ দিকই উঠে এসেছে। 

ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার আইসিটি ও টেলিযোগাযোগবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি, শক্তি, বাণিজ্য ও কপিরাইট সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই সভায় যোগ দেন। 

এদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার ফেসবুক প্রোফাইলে শেয়ার করা এক বিবৃতিতে বলেছেন, উভয়পক্ষ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় তাদের বৈঠক পুনরায় শুরু করবে। শুক্রবারও আলোচনা হবে। ‘আলোচনাগুলো অত্যন্ত বিস্তৃত ছিল, দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্কের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। 

বৈঠকের বিষয় নিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান একটি ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমি বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে কথা বলেছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে ৩ দিনের বাণিজ্য আলোচনার প্রথম দিন শেষ হয়েছে। আলোচনা আগামীকাল এবং তার পরের দিনও চলবে। প্রথম দিনের আলোচনাটি ব্যাপক ছিল। কৃষি, বাণিজ্য, জ্বালানি এবং বৌদ্ধিক সম্পত্তিসহ সব ক্ষেত্রের প্রতিনিধিরা মার্কিন পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন। আমাদের প্রতিনিধিদল তাদের সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে এবং তাদের বক্তব্য শুনেছে।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘আগামীকাল আমাদের বাণিজ্য উপদেষ্টা মার্কিন বাণিজ্য সচিবের সঙ্গে একটি বৈঠক করবেন, এখন আমাদের ধৈর্য ধরে আলোচনার সমাপ্তির জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’

উল্লেখ্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর আগে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনাম থেকে পোশাকের ওপর শুল্ক ২০ শতাংশ কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন। ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া এবং চীনের জন্য প্রস্তাবিত শুল্ক হারও বাংলাদেশের তুলনায় কম। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন পর্যন্ত ২০ দেশের প্রধানদের কাছে ২৫-৪০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের চিঠি পাঠিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘যদি কোনো কারণে আপনি শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে, আপনি যে পরিমাণ বৃদ্ধি করতে চান তা আমাদের চার্জ করা শুল্কের সঙ্গে যুক্ত করা হবে।’

এদিকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঠানো চিঠিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প কঠিন দুটি শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। প্রথমটি হচ্ছে, যেসব দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা এবং বাড়তি শুল্ক আরোপ করবে তা বাংলাদেশকেও অনুসরণ করতে হবে। দ্বিতীয় হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে যেসব সুবিধা বাংলাদেশ দেবে একই সুবিধা অন্য কোনো দেশের পণ্যকে দিতে পারবে না। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এ শর্ত পালন করা সম্ভব হবে না। কারণ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার রুলস অনুযায়ী কোনো দেশ এ ধরনের শর্ত পালন করতে পারে না। ডব্লিউটিওর নীতি অনুযায়ী ফেভার ওয়ান ফেভার অল সুবিধা দিতে হয়। ফলে কোনো দেশকে শুল্ক সুবিধা দিয়ে বাড়তি সুযোগ নেওয়া যাবে না। এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খুশি নাও হতে পারে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম