Logo
Logo
×

শেষ পাতা

আবু সাঈদ হত্যার বিচার দেখে যেতে পারবেন তার বাবা: আইন উপদেষ্টা

Icon

রংপুর ব্যুরো ও বেরোবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আবু সাঈদ হত্যার বিচার দেখে যেতে পারবেন তার বাবা: আইন উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত

শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও শোকের মধ্য দিয়ে বুধবার শহীদ আবু সাঈদকে স্মরণ করেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। তার স্মৃতিচারণে আলোচনা সভায় আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, দ্রুতই আবু সাঈদ হত্যার বিচার হবে। তার বাবা এ বিচার দেখে যেতে পারবেন। এ সরকারের আমলেই জুলাই হত্যার বিচার হবে।

এদিকে জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের প্রথম শাহাদতবার্ষিকীতে বেরোবিতে শহীদ আবু সাঈদ তোরণ, মিউজিয়াম ও স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে শহীদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন বেলা ১১টায় তোরণ, মিউজিয়াম ও স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। উদ্বোধন শেষে দোয়া মোনাজাত করা হয়। পরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আরও বক্তব্য দেন বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান ড. এসএমএ ফায়েজ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য ড. তানজীম উদ্দীন খান। সভাপতিত্ব করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শওকাত আলী। বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম, ডিআইজি আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আসিফ নজরুল আরও বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বহু মানুষ বহুভাবে মারা যায়। কিন্তু তার মতো এভাবে কেউ মারা যাননি। এটা জেনে শত শত তরুণ আত্মত্যাগ করেছে। আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের বিচারকাজ পূর্ণগতিতে এগিয়ে চলছে। তিনি বলেন, আমরা পৃথিবীর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, এমন একটি বিচার করতে চাই। আমরা আশাবাদী, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শাসনামলে আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের বিচার আপনারা দেখে যাবেন।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান তার বক্তব্যে বলেন, রংপুর অঞ্চলের মানুষ আর বৈষম্যের শিকার থাকবে না। ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন এ বছরেই হবে। এছাড়া কুড়িগ্রামে ইপিজেড হবে। রংপুর অঞ্চলে হবে চীনের অত্যাধুনিক হাসপাতাল।

এদিকে ‘জুলাই শহীদ দিবস’ উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে শোক র‌্যালি হয়েছে। সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেট থেকে এই শোক র‌্যালি বের হয়। র‌্যালিটি নগরীর পার্কের মোড়, মডার্ন মোড় ঘুরে শহীদ আবু সাঈদ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। র‌্যালিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা অংশ নেন।

বিকালে জুলাই শহীদ উপলক্ষ্যে ক্যাম্পাসের ক্যাফেটেরিয়ায় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও দোয়া এবং মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

মঞ্চে শহীদপরিবার, দর্শক-সারিতে উপদেষ্টারা : আলোচনা সভায় সবার দৃষ্টি কাড়ে একটি দৃশ্য। মঞ্চে বসে আছেন জুলাই আন্দোলনে শহীদপরিবারের সদস্যরা। আর দর্শক-সারিতে বসেন সরকারের দুই উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ও সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ অন্য অতিথিরা। এ যেন এক অনন্য নজির। শুধু তাই নয়, শহীদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন ছিলেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি। তার পাশেই মঞ্চে বসা ছিলেন আরও ২১ জন শহীদপরিবারের সদস্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শওকাত আলী বলেন, আমরা শহীদপরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাতেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

পীরগঞ্জে আবু সাঈদের কবর জিয়ারত : পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি জানান, শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেছেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, গণসংহতি আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী এবং ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা। বুধবার সকালে উপজেলার বাবনপুর গ্রামে আবু সাঈদের কবরে ফুল দেন তারা। জিয়ারত শেষে বেরোবির উপাচার্য ড. শওকাত আলী বলেন, শহীদ আবু সাঈদ দুই হাত প্রসারিত করে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে যে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল। দেশের নতুন প্রজন্মের জন্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় আত্মত্যাগের প্রতীক হয়ে উঠেছেন বেরোবির এই মেধাবী শিক্ষার্থী।

হত্যার বিচার দাবি শহীদ পরিবারগুলোর : রংপুরে ২২ শহীদের পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে ২০২৪-এর হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। শহীদ আবু সাঈদ স্মরণে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা বলেন, আমাদের সন্তানরা ন্যায্য দাবি আদায়ে আন্দোলন করেছিল। অথচ পুলিশ ও রাজনৈতিক সন্ত্রাসীরা তাদের গুলি করে হত্যা করে। আমরা এক বছর ধরে কেবল আশ্বাস পাচ্ছি, কিন্তু বিচার পাচ্ছি না। ভোট আসছে, কিন্তু ন্যায়বিচার আসছে না। আমরা নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদ রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা এবং শিক্ষার্থীদের হত্যার বিচার চাই।

শহীদ আবদুল্লাহ আল তাহেরের মা বলেন, শুধু নির্বাচন নির্বাচন করা হচ্ছে। এ নির্বাচন আমরা চাই না। আমরা চাই বিচার, সংস্কার। দেশে পরিবর্তন এলে নির্বাচন চাই। এর আগে নির্বাচন না করতে উপদেষ্টাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। শহীদ আল মামুনের মা বলেন, যাদের ছেলে, ভাই, বাবা, স্বামী শহীদ হয়েছেন, নির্বাচনের আগেই যেন তাদের বিচার হয় আর জুলাই সনদটা যেন দেওয়া হয়।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম