অগ্নিঝরা জুলাইয়ে প্রেরণার প্রদীপ জ্বালিয়েছিল যে গানগুলো
আনন্দনগর প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৫, ১০:৩৪ এএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে সম্মুখ যোদ্ধাদের
সাহস জোগাতে তৈরি হয়েছে অসংখ্য গান। চব্বিশের কোটা সংস্কার ও সরকার পতনের আন্দোলনও
ব্যতিক্রম নয়। ২০২৪ সালের ১ জুলাই শুরু হওয়া এই আন্দোলন ৩৬ দিনের মাথায় চূড়ান্ত পরিণতি
পায়, শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের কুশাসনের অবসান ঘটে।
এর মধ্যে তৈরি হয়েছে অনেক গান। সেসব গান ফেসবুক, ইউটিউবে বেশ সাড়া ফেলেছে।
আন্দোলনের সময় প্রকাশিত সেসব গান রাজপথে উত্তাপ ছড়িয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বিজয় দেখে
নিজেদের ইতিহাসের অংশ মনে করতে পেরে তারাও আনন্দিত।
আন্দোলনে র্যাপ গানের ছিল আধিপত্য। সে সময় প্রায় অর্ধশতাধিক র্যাপ
গান প্রকাশ হয়েছিল। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ‘আওয়াজ উডা’। এটি গেয়েছেন র্যাপার হান্নান
হোসাইন শিমুল। ১৮ জুলাই গানটি প্রকাশের পরপরই তা রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়। কিন্তু শিল্পীকে
পড়তে হয়েছে সরকারের রোষানলে। গ্রেফতার ছাড়াও এ তরুণ র্যাপারকে রিমান্ডে নেয় ফ্যাসিস্ট
হাসিনার অনুগত বাহিনী। ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনে হান্নান কারামুক্ত হন। ১২ দিন তাকে কারাভোগ
করতে হয়েছে।
আলোচনায় ছিল হান্নানের ভাই র্যাপার সেজানের গাওয়া ‘কথা ক’ শিরোনামের
আরও একটি গান। এটিও বেশ সাড়া ফেলে ছাত্র-সমাজের মধ্যে। গত বছরের ১৬ জুলাই প্রকাশিত
এ গানটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ফুলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়ে। বহুদিন পর এমন জোরালো কথার
গান পেয়েছিলেন শ্রোতারা। সাধারণ মানুষের গিলে ফেলা কথাকে বাংলা র্যাপ গানে প্রাণ দিয়েছেন
সেজান। গানে সেজান প্রশ্ন তুলেছেন, ‘আমার ভাই-বইন মরে রাস্তায়, তর চেষ্টা কইরে? কথা
ক।’
তরুণ সংগীতশিল্পী পারশা মাহজাবীন পূর্ণির গাওয়া ‘চলো ভুলে যাই’ গানটিও
লাখো শ্রোতার হৃদয় জয় করেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে দশ মিনিটে গানটি লিখে
সুর বেঁধেছিলেন এ শিল্পী। খালি গলায় তার গাওয়া গানটি প্রকাশ্যে আসার পর বেশ আলোচনা
তৈরি হয়।
এদিকে শুরু থেকেই রাজপথে আওয়াজ তুলেছিলেন সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ
সায়ান। যিনি বহু বছর ধরেই গানে গানে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং সামাজিক
ও রাষ্ট্রীয় নানা অসংগতির কথা তুলে ধরছেন। আন্দোলনের মধ্যে সায়ান গেয়েছেন ‘ভয় বাংলায়’
ও ‘এইবার’ শিরোনামের দুটি প্রতিবাদী গান। বিজয়ের পর তিনি প্রকাশ করেছেন ‘হুঁশিয়ারী’
গানটি।
আন্দোলনের সময় তার গাওয়া ‘আমিই বাংলাদেশ’ গানটিও বেশ আলোচিত ছিল। ব্যান্ড
শহরতলির ভোকাল জিল্লুর রহমান সোহাগ গেয়েছেন ‘ও প্রধান তোমাকে বলছি শোনো’ গানটি। ফেসবুকে
প্রকাশ হওয়ার পর গানটি ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন পেজে। এর কথাগুলো বেশ পছন্দ করেন শ্রোতারা।
শূন্য ব্যান্ডের ‘শোনো মহাজন’ শিরোনামের গানটিও চর্চায় ছিল। ‘জাদুর দেশে জাদু দেখায়
রাজা/আমরা সবাই অবাক হয়ে রই’ এমন কথার একটি গান ২০২০ সালে প্রকাশ করেছেন শিল্পী মল্লিক
ঐশ্বর্য। আন্দোলনের সময় এটি নতুন করে ভাইরাল হয়। সামাজিক মাধ্যমে এটি ছড়িয়ে পড়ে, আন্দোলনে
ছাত্র জনতাকে রাজপথে গানটি গাইতেও দেখা গেছে।
এদিকে কাজী নজরুল ইসলামের ‘এই শিকল-পরা ছল’ গানটিও আন্দোলনে বেশ ভূমিকা
রাখে। নতুন করে এটি গেয়েছেন ‘শিরোনামহীন’ ব্যান্ডের শেখ ইসতিয়াক, ‘ক্রিপটিক ফেইট’-এর
সাকিব চৌধুরী, ‘অ্যাভোয়েড রাফার’ রায়েফ আল হাসান রাফা, ‘সোনার বাংলা সার্কাস’র প্রবর
রিপন ও ‘পাওয়ার সার্জ ব্যান্ড’র জামশেদ চৌধুরী। আন্দোলনজুড়ে কাজী নজরুল ইসলামের ‘কারার
ঐ লৌহ-কপাট’ ছাত্র-জনতাকে সাহস জুগিয়েছে। দ্বিজেন্দ্র লাল রায়ের ‘ধনধান্য পুষ্পভরা’
নিয়েও চর্চা হয়েছে।
ব্যান্ডশিল্পী হাসি গেয়েছেন ‘দেশটা কারো বাপের না’, লুনাটিক্স বীর ও
রিদমাস্ত্রের ‘দেশ কার’, রাজেশ পালের ‘শিকল ভাঙার মন্ত্র’ গানগুলোও আলোচিত হয়েছে। এখানেই
শেষ নয়। নব্বই ও শূন্য দশকে প্রকাশিত দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড মাকসুদ-এর ‘আবার যুদ্ধে
যেতে হবে’, আর্কের ‘আর কত মৃত্যু’, ওয়ারফেজের ‘জনস্রোত’, জেমসের গাওয়া ‘বাংলাদেশ’,
শিল্পী হায়দার হোসেনের ‘স্বাধীনতা’সহ আরও কয়েকটি পুরোনো গান আন্দোলনের মধ্যে চর্চায়
এসেছিল। এ ছাড়া ‘ছাত্র’, ‘সুবিচার চাই’, ‘রক্তাক্ত বাংলাদেশ’, ‘দমায় দেখা’, ‘রক্ত’,
‘আবু সাঈদ’, ‘জবাব দেনা’, ‘পাল্টে দে ইতিহাস’, ‘রাজাকার’, ‘দেশ কার’সহ প্রকাশিত আরও
বেশ কয়েকটি গান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বড় অস্ত্র হয়ে উঠেছিল।
