‘দেশে ব্যথাজনিত সমস্যায় ভুগছেন ৪ কোটি মানুষ’
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২৫, ০৫:৫৪ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বিশ্বে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন মানুষ ব্যথার কষ্টে ভুগছেন। তাদের কেউ গিরা, পেশী বা হাড়ের ব্যথাজনিত সমস্যায় আক্রান্ত। একইসঙ্গে বিশ্বে প্রতিবছর তিন কোটিরও বেশি মানুষ নতুন করে কোনো না কোনো শরীর ব্যথায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এমনি তথ্য উঠে এসেছে গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজের গবেষণায়।
অন্যদিকে বাংলাদেশের মানুষের ওপর কমিউনিটি ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রাম ফর কন্ট্রোল
অব রিউমেটিক ডিসিজের (কপকর্ড) চালানো গবেষণার তথ্য বলছে, দেশে প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ
অর্থাৎ প্রায় ৪ কোটি প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ গিরা, পেশী কিংবা হাড়ের সমস্যায় ভুগছেন। দিন
দিন সংখ্যা আরও বাড়ছে।
শনিবার (৯ আগস্ট) রাজধানীর শহীদ আবু সাইদ কনভেনশন সেন্টারে বাত-ব্যথা
রোগীদের জন্য কাজ করা সংগঠন প্রফেসর নজরুল রিউমাটোলজি ফাউন্ডেশন অ্যান্ড রিসার্চ (পিএনআরএফআর)
ট্রাস্ট আয়োজিত বাত-ব্যথা রোগীদের সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
পিএনআরএফআরের চেয়ারম্যান, এশিয়া প্যাসিফিক লীগ অব অ্যাসোসিয়েশন ফর রিউমাটোলজি
ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে
অনুষ্ঠানে বাত-ব্যথা সংক্রান্ত মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ট্রাস্টের
ভাইস চেয়ারম্যান এবং এম এইচ শমরিতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী
অধ্যাপক ডা. নীরা ফেরদৌস।
পিএনআরএফআর ট্রাস্টের পক্ষ থেকে নবম বারের মতো এ ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন
করা হয়েছে। এতে দিনভর বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ, প্রশ্ন উত্তরের মাধ্যমে সমস্যার
সমাধানসহ রোগীদের হাতে কলমে ব্যায়াম শেখানো হয়।
অনুষ্ঠানে চিকিৎসকগণ বলেন, দেশে দিনে দিনে বাত ব্যথাজনিত রোগী বাড়লেও
সেই তুলনায় বাতরোগ বিশেষজ্ঞ দক্ষ চিকিৎসক নেই। ফলে অনেক রোগী অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন।
সরকারের উচিত এ দিকে নজর দেওয়া।
তথ্য অনুযায়ী, দেশে রিউমাটয়েড আর্থারাইটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সাড়ে
১৭ লাখের মতো। বিশ্বে প্রতি বৎসর এ রোগে প্রতি লাখে প্রায় ৪০ জন নারী ও ২০ জন পুরুষ
আক্রান্ত হচ্ছে। সে হিসেবে দেশে প্রতি বছর
প্রায় রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে সাড়ে ৬ হাজার নতুন রোগী বাড়ছে।
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে মানসিক রোগীর পর শারীরিক অক্ষমতা নিয়ে
যারা বেঁচে থাকেন তাদের মধ্যে বাত রোগের অবস্থান দ্বিতীয়।
মূল প্রবন্ধের তথ্যানুযায়ী, স্পন্ডাইলো আর্থ্রাইটিসের প্রাদুর্ভাবও দেশে
কম নয়। এ রোগে সাড়ে ১২ লাখের মতো মানুষ ভুগছে। সোরিয়েটিক আর্থ্রাইটিসের সমস্যাও উদ্বেগজনক।
প্রতি বছর এ সমস্যার রোগী বাড়ছে। আর গাউট রোগের প্রাদুর্ভাবও কম নয়। দেশে প্রায় সাড়ে
পাঁচ লাখ মানুষ গাউট রোগে ভুগছেন। অন্যদিকে হাইপার ইউরেসেমিয়াতে (ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা
বেড়ে যাওয়া) ভুগছেন প্রায় দেড় কোটি মানুষ।
বয়সজনিত বাতের রোগ হাঁটুর অস্টিওআর্থ্রাইটিসে ভুগছেন দেশের প্রায় সোয়া
কোটি মানুষ। গবেষণার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে এ রোগে আক্রান্ত প্রায় সোয়া ১ কোটি মানুষ।
আর নতুন করে প্রতি বছরে আক্রান্ত হচ্ছেন কমপক্ষে ১৩ লাখ মানুষ।
কোমড় বাত ব্যথা (লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস) দেশে বয়সজনিত কোমড়ের বাতের প্রাদুর্ভাব
১০ ভাগ। অর্থাৎ, এক কোটি ৬ লাখ মানুষ এ সমস্যায় ভুগছেন। আর নতুন করে প্রতিবছর আক্রান্ত
হচ্ছেন ৩ লাখের মতো রোগী।
২০২২ সালের গণশুমারি অনুযায়ী বর্তমানে দেশে ৫০ বছরের উর্ধ্বে প্রায় ৩
কোটি মানুষ বসবাস করছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ অস্টিওপোরোসিস
রোগে ভুগছে। সে হিসেবে দেশে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ এ রোগে ভুগছে।
হাড়ক্ষয় রোগের ভয়াবহতা নিয়ে বৈজ্ঞানিক সেমিনারে জানানো হয়, বিশ্বে প্রতি
তিন সেকেন্ডে হাড়ক্ষয়জনিত রোগে একটি হাড় ভেঙে যাচ্ছে। এ রোগে আক্রান্ত ৫০ বছরের বেশি
প্রতি তিনজন নারীর একজন এবং প্রতি পাঁচ পুরুষের একজন এ রোগে হাড় ভেঙে যাচ্ছে। প্রতি
বছর হাড় ভাঙার প্রকোপ প্রায় ৯০ লাখ, যা খুবই উদ্বেগের বিষয়। কারণ এ রোগীদের মধ্যে মেরুদণ্ডের
হাড় ভাঙার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। এ রোগের কারণে মৃত্যু ঝুঁকি প্রায় ৮ গুণ বেড়ে যায়।
