আজ শুভ জন্মাষ্টমী
বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা
হাজারীবাগ (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আরাধ্য পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি ও শুভ জন্মাষ্টমী আজ। এ উপলক্ষ্যে দেশের হিন্দু সম্প্রদায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে জন্মাষ্টমী পালন করবে। রাজধানীসহ সারা দেশে নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক বাণী দিয়েছেন।
হিন্দু পুরাণমতে, ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস-পাশবিক শক্তি যখন ন্যায়নীতি, সত্য ও সুন্দরকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছিল; তখন সেই শক্তিকে দমন করে মানবজাতির কল্যাণ ও ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটেছিল। তাদের আরও বিশ্বাস-দুষ্টের দমন করতে এভাবেই যুগে যুগে ভগবান মানুষের কাছে নেমে আসেন এবং সত্য ও সুন্দরের প্রতিষ্ঠা করেন।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ ইসকনসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছে। শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে কেন্দ্রীয়ভাবে কর্মসূচি নিয়েছে। শুক্রবার রাজধানীর শ্রীশ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ এবং মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। সভায় জন্মাষ্টমীর বিস্তারিত কর্মসূচি তুলে ধরা হয়।
দুদিনের কর্মসূচি : মতবিনিময় সভায় মহানগর সর্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব ঢাকায় দুদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। প্রথম দিন শনিবার সকাল ৮টায় দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় শ্রীশ্রী গীতাযজ্ঞ, বিকাল ৩টায় ঐতিহাসিক কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী শোভাযাত্রা এবং রাতে শ্রীকৃষ্ণপূজা অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকেশ্বরী মেলাঙ্গনে আয়োজিত গীতাযজ্ঞ পরিচালনা করবে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের শংকর মঠ ও মিশন। বিকাল ৩টায় পলাশীর মোড়ে ঐতিহাসিক কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী শোভাযাত্রার উদ্বোধন করবেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন এবং নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. মঈন খান। শোভাযাত্রা ঐতিহ্যের নান্দনিক উপস্থাপনায় প্রতিবছরের মতো পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে গিয়ে শেষ হবে। রাতে ঢাকেশ্বরী মেলাঙ্গনে শ্রীকৃষ্ণপূজার মধ্য দিয়ে প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শেষ হবে। সভায় আরও জানানো হয়, সারা দেশে সকালে শোভাযাত্রা হলে দুপুর ১২টার মধ্যে এবং বিকালে হলে সন্ধ্যার আগেই তা শেষ করতে হবে। শোভাযাত্রায় সরকারের নিরাপত্তাব্যবস্থার পাশাপাশি পূজা কমিটিগুলো নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক দল মোতায়েন করবে।
সভায় বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির উপদেষ্টা ও গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, সনাতনী ধর্মাবলম্বী, পাহাড়ি সম্প্র্রদায় ও অন্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নিয়মিতভাবেই নিরাপত্তাহীনতা ও হুমকির মুখে রয়েছে। তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ও স্বাভাবিক জীবনযাপনে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন। নারীরা রাস্তায় বের হলে তাদের সামাজিক পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়ে নানা ধরনের অপদস্থ আচরণের শিকার হতে হচ্ছে এবং প্রতিবাদ করলে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। তিনি আরও বলেন, ৩৬ জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর আমরা আশাবাদী হয়েছি-কেউ যেন আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ না করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সব রাজনৈতিক দলকে আহ্বান জানাচ্ছি যেন শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। অতীতে একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের গোষ্ঠী নানা সময়ে সংঘর্ষ, হত্যাকাণ্ড ও অপ্রীতিকর ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থেকেছে। বিগত সরকারের বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে আমরা এখনো পুরোপুরি মুক্ত নই। তাই সব ঘটনার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার নিশ্চিত করতে হবে। কাউকে যেন ছাড় না দেওয়া হয়।
সভায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর ও সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা। এছাড়া মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব ও সাধারণ সম্পাদক ড. তাপস চন্দ্র পাল, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির উপদেষ্টা কাজল দেবনাথ, মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির উপদেষ্টা মনিন্দ্র কুমার নাথ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টার বাণী : শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে দেওয়া বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে আমি দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বী সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। সমাজে সাম্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে শ্রীকৃষ্ণ আজীবন ন্যায়, মানবপ্রেম ও শান্তির বাণী প্রচার করেছেন। শ্রীকৃষ্ণ যেখানেই অন্যায়-অবিচার দেখেছেন, সেখানেই অপশক্তির হাত থেকে শুভশক্তিকে রক্ষার জন্য আবির্ভূত হয়েছেন। সৃষ্টিকর্তার বন্দনা ও সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় শ্রীকৃষ্ণের দর্শন ও মূল্যবোধ সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ সবাইকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে। মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের সংস্কৃতির অনন্য বৈশিষ্ট্য। আবহমানকাল থেকে এদেশের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে নিজ নিজ ধর্ম পালন করছে। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্র্রীতির এ বন্ধনকে অটুট রাখতে বদ্ধপরিকর। সমাজে বিদ্যমান শৃঙ্খলা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সাম্প্র্রদায়িক সম্প্রীতিকে কেউ যেন নষ্ট করতে না পারে, সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানাই।
তারেক রহমানের বাণী : শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে শুক্রবার দেওয়া বাণীতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা বাংলাদেশের সংস্কৃতির অনুষঙ্গ। সুপ্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশিরা কখনোই ঔদার্য, পারস্পরিক শুভেচ্ছাবোধ ও অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা হারায়নি। এখানে সব ধর্মের মানুষ যুগ যুগ সৌহার্দ ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বসবাস করে আসছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি সেই বন্ধন অটুট রাখতে দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ। শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। একই সঙ্গে কল্যাণ, সমৃদ্ধি ও শান্তি কামনা করেন তিনি।
ইসকনের চারদিনের কর্মসূচি : পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ৫২৫১তম জন্মাষ্টমী মহোৎসব পালনে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) চার দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। বৃহস্পতিবার থেকে রোববার পর্যন্ত রাজধানীর স্বামীবাগ আশ্রমে বর্ণাঢ্য আয়োজনে জন্মাষ্টমী উদযাপন করা হচ্ছে। ইসকনের পক্ষ থেকে জানানো হয়-আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কীর্তনমেলা, ধর্মীয় নাটকসহ নানাবিধ অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে। উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ হবে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মহাভিষেক অনুষ্ঠান। সংগঠন জানায়, প্রতিবছরের মতো এবারও ইসকন স্বামীবাগ মন্দিরে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মাধ্যমে জন্মাষ্টমী উদযাপন করবে।
