সেমিনারে বক্তারা
বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা পূরণে উলামা-জনতার ঐক্যের বিকল্প নেই
শাহবাগ (ঢাকা) সংবাদদাতা
প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৫, ১২:২১ এএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা পূরণে আলেমদের সঙ্গে সাধারণ পেশাজীবী জনগণের সম্মিলিত ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। বিপ্লবের পরে দেশে যা কিছু হচ্ছে এখন তার সবটাই আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। ইসলামকে বাদ দিয়ে যে সংস্কার হচ্ছে সেটাও আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাকরাইলে আইডিইবি কাউন্সিল হলে উলামা জনতা ঐক্য পরিষদ আয়োজিত ‘অভুত্থান পরবর্তী চ্যালেঞ্জ ও উলামা জনতার সম্মিলিত আকাঙ্ক্ষা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব বলেন।
তারা বলেন, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের অবশ্যই নবীজির আদর্শে ঐক্যবদ্ধ থেকে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় মন দিতে হবে। তা না করে বিপ্লব পরবর্তী সময়ে ছাত্রজনতাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। দুনিয়াতে আর কোথাও এমন নজির নেই। আমাদের মনে রাখতে হবে, মাথায় পাগড়ি বেঁধে বুকের রক্ত ঢেলে না দিলে ফ্যাসিস্টের পতন হতো না, দেশের পরিবর্তনটাও আসতো না।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন হেফাজত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী।
সেমিনারে হেফাজত ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা ফখরুল ইসলাম বলেন, বিপ্লব পরবর্তী সরকারে আলেম-ওলামাদের স্থান কেন দেয়া হলো না? এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সরকার দেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস খুলতে দিয়ে বিপ্লবের আকাঙ্খাকে নস্যাৎ করেছে।
বিশিষ্ট দাঈ মাওলানা আবু তাহের বলেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ভাগ্যটা তুলে দিয়েছিলেন ভারতের হাতে। আর এখন যারা আছেন তারা এটা তুলে দিচ্ছেন মার্কিনিদের হাতে। যেকোনো মূল্যে আমাদের এটা প্রতিহত করতে হবে।
বিচারপতি ফয়সাল মাহমুদ ফয়েজী বলেন, ৫ আগস্ট অভ্যুত্থান হয়েছে ঠিকই কিন্তু হৃদয়ে বিপ্লবের যে আকাঙ্ক্ষা তা পূরণ হয়নি। কেননা বিপ্লবের কোন ম্যানিফেস্টো ছিল না। তাই কেউ হতাশ হয়ে কক্সবাজার যায় কেউবা যা অন্য দেশে। আকাঙ্ক্ষা পূরণের লক্ষ্যে আমাদের সকলের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এবং তাহলে ইনশাআল্লাহ আমাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে।
সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের সংগঠন রাওয়া ক্লাবের চেয়ারম্যান কর্ণেল (অব) মোহাম্মদ আবদুল হক বলেন, অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ ভারতে পালিয়ে গিয়ে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের নীল নকশা আঁকছে। তারা এখন তওবা করে ক্ষমা চায় নাই। উলামা জনতা যদি ঐক্য ভুলে নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে তাহলে বিপ্লবের আকাঙ্খা কখনোই পূরণ হবেনা। তাই দয়া করে আপনারা কেউ নিজেদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করবেন না।
বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার ড. মুফতি কাজী ইব্রাহীম বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো গোলামি মনোবৃত্তি। একসময় গোলামি করেছি ব্রিটিশের, এরপর ভারতের আর এখন করছি মার্কিনীদের গোলামি। এই গোলামির থেকে মুক্তির একমাত্র পথ কোরআন। কোরআনই আমাদের গোলামি থেকে স্বাধীনতার পথে নিয়ে যাবে। মনে রাখতে হবে জালিমের দিন শেষ, আলেমের বাংলাদেশ।
সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মীর ইদ্রিস, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও গবেষক প্রফেসর ড. সারোয়ার হোসাইন, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক আসিফ মহাতাব উৎস, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুনীর কাসেমী, বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ও সংগঠক শায়খ জসীমউদ্দিন রাহমানি, দৈনিক ডেসটিনি সম্পাদক কবি মাহমুদুল হাসান নিজামী, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিক আবু সুফিয়ান প্রমুখ।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর। অসুস্থ হওয়ায় তিনি বক্তব্য রাখেননি।
সভাপতির বক্তব্যে সেমিনারের সভাপতি শাইখ মুফতি হারুন ইজহার বলেন, মার্কিনীদের তাবেদারি থেকে নিজেদের মুক্ত করে দেশ গঠনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। মার্কিনীরা আমাদের ফুল দেয় ঠিকই কিন্তু গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতার নামে মানবাধিকার কমিশনের তথাকথিত কার্যক্রম বর্জন করতে হবে। তাদের কোন সহযোগিতাই আমাদের দেশের শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় কাজে আসবে না।
সেমিনার সঞ্চালনা করেন মাওলানা ইসহাক খান ও মুফতি নাজমুল হক সাকিব
