Logo
Logo
×

জাতীয়

রোহিঙ্গাদের স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবিতে ঢাকায় ‘মার্চ ফর আরাকান’

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৫, ০৮:১৯ পিএম

রোহিঙ্গাদের স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবিতে ঢাকায় ‘মার্চ ফর আরাকান’

ছবি: সংগৃহীত

মিয়ানমার থেকে গণহত্যার মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবিতে ঢাকায় ‘মার্চ ফর আরাকান’ শীর্ষক পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে জেন-জি অ্যাক্টিভিস্টরা।

সোমবার বিকালে ‘আন্তর্জাতিক রোহিঙ্গা গণহত্যা স্মরণ দিবস’ উপলক্ষে ‘বাংলাদেশ পিপলস কোয়ালিশন ফর রোহিঙ্গা রাইটস’র ব্যানারে রাজধানীর শাহবাগ থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত এ পদযাত্রার আয়োজন করা হয়।

এ কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, জুলাই বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী অ্যাক্টিভিস্ট, সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্য ও নাগরিকরা অংশ নেন।

বিকাল ৩টায় শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে শহীদ মিনার অভিমুখে পদযাত্রা শুরু হয়। এ সময় অংশগ্রহণকারীরা ‘রোহিঙ্গা জাতির ওয়াতান, নাফ থেকে কালাদান’, ‘ভোরের আলো মুক্তির গান, স্বাধীন হবে আরাকান’, ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, আরাকান উইল বি ফ্রি’, ‘রক্তে লেখা এই আহ্বান, মুক্ত হোক আরাকান’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

পরে পদযাত্রাটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশে মিলিত হয়। এ সময় রোহিঙ্গা জাতির প্রতিনিধি আহনাফ আলম, অ্যাক্টিভিস্ট ইফতেখার জামিল, রাফিদ এম ভূঁইয়া, মোহাম্মদ ইশরাক হোসাইন, আজিজ ফাহিম, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুল ওহায়েদ, সদস্য সচিব ফজলুর রহমান, বাংলাদেশ পিপলস কোয়ালিশন ফর রোহিঙ্গা রাইটসের সংগঠক জিহাদী ইহসান ও মুখপাত্র শাহরিয়ার ফাহাদ প্রমুখ বক্তৃতা করেন।

রোহিঙ্গা তরুণ আহনাফ আলম তার জাতির বিরুদ্ধে সংঘটিত নিপীড়নের দীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আরাকানে আমাদের পূর্বপুরুষদের শতাব্দীব্যাপী উপস্থিতি থাকার পরও আমাদের অস্তিত্ব মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে। বাংলাদেশে আমাদের ভাইদের মধ্যে অনেকের কাছে ভুল ধারণা ও বিদ্বেষ আছে, যা দূর করা জরুরি। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশি জনগণ আমাদের প্রতি সহমর্মিতা দেখাবে।’

ছবি: সংগৃহীত

জিহাদী ইহসান তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমাদের বাংলা সালতানাত ও রক্তের সিলসিলার ভাই রোহিঙ্গারা সতের শতক থেকে গণহত্যার শিকার হয়ে আসছে। তাদের রক্তের কোনো দাম নেই, কারণ তারা দেখতে কালো, চিবুক ভাঙা, চোখের কোঠরে মণি শুকিয়ে গেছে। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য হলেও রোহিঙ্গাদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে’।

তিনি আরও বলেন, ‘পৃথিবীর সকল দেশে ফিলিস্তিনের জন্য শিল্প-সাহিত্যের মধ্য দিয়ে লড়াই জারি আছে, তাই পৃথিবীর সকল দেশের মুক্তিকামী মানুষের কাছে বার্তা দিচ্ছি আপনার রোহিঙ্গাদের নিয়ে সরব হন। ঐক্যবদ্ধ মানুষের ঢল যেন সাতশো নদীর ঘ্রাণ নিয়ে ছুটে যায় নাফ নদী থেকে ঝেলাম নদী, ইলি নদী থেকে হোতান নদী, ককেশাস পর্বতের তেরেক নদী থেকে ফোরাত নদী, জর্ডান নদী থেকে নীলনদ পর্যন্ত। সমগ্র পৃথিবীর নদী মুখরিত হয় বাতাস স্রোত আর লাল পপির ঘ্রাণ।

বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের সদস্য সচিব ফজলুর রহমান বলেন, ‘রোহিঙ্গারা আমাদের ভাই। তারা গত কয়েক দশক ধরে ধারাবাহিকভাবে গণহত্যার শিকার হয়ে আসছে। বছরের পর বছর নিজেদের ভূমির অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে নির্মম জীবন যাপন করছে। অথচ সভ্যতার বুলি আওড়ানো বিশ্বশক্তি ও মানবাধিকারের বুলি আওড়ানো সংগঠনগুলো এ বিষয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।’

তিনি বলেন, ‘একটা জাতিকে বছরের পর বছর গণহত্যার শিকার হতে হচ্ছে, অথচ বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এবং মানবাধিকারের ধ্বজাধারীরা কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এই নীরবতা মানবতার জন্য লজ্জাজনক।’

ফজলুর রহমান জোর দিয়ে বলেন, ‘আরাকানকে স্বাধীনতা দেওয়া হোক, রোহিঙ্গাদের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে মানবতা রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। বিশ্ববাসীকে আহ্বান জানাই- আরাকানের রোহিঙ্গাদের অধিকারের দাবিতে আপনারা সরব হোন, আওয়াজ তুলুন, কারণ ন্যায় ও মানবতার সংগ্রামে নীরবতা কোনো সমাধান নয়।’

সমাবেশে মার্চ ফর আরাকান’ কর্মসূচির মুখপাত্র শাহরিয়ার ফাহাদ রোহিঙ্গাদের মুক্তি ও আরাকান স্বাধীনতার জন্য আট দফা দাবি ঘোষণা করেন। দাবিগুলো হলো-

১. রোহিঙ্গা গণহত্যার স্বীকৃতি ও আন্তর্জাতিক বিচার করতে হবে। মিয়ানমার জান্তা বাহিনী কর্তৃক এবং বর্তমানে জেনারেল তোয়ান মারত নাইয়ের আরাকান আর্মি কর্তৃক আরাকানের রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো হত্যাযজ্ঞকে আনুষ্ঠানিকভাবে গণহত্যা হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগীদের এবং আরাকান আর্মির বিচার করতে হবে।

২. রোহিঙ্গাদের ‘রাইট টু রিটার্ন’ এর স্বীকৃতি দিতে হবে। আরাকার প্রদেশে যেসব সম্পদ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রোহিঙ্গাদের মালিকানায় ছিল তা তাদের ফিরিয়ে দিতে হবে।

৩. রোহিঙ্গাদের পূর্ণ মানবাধিকার ফিরিয়ে দিয়ে, রোহিঙ্গাদের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। রোহিঙ্গাদের স্বায়ত্তবশাসিত অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের পূর্ণ আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার দিতে হবে।

৪. আরাকানে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ বসবাস নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা কাঠামোকে অ্যাক্টিভ করতে হবে। দরকারে ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিলকে দায়বদ্ধ করতে হবে।

৫. রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আত্মনিয়ন্ত্রণ পরাশক্তিগুলো হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। রোহিঙ্গাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব, শিক্ষা, ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতির পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। আরাকানে কোনো জাতিগোষ্ঠীকে প্রান্তিক করা যাবে না।

৬. আরাকানের রোহিঙ্গাদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে। দীর্ঘ দশকের পর দশক ধরে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো দমননীতি, গণহত্যা ও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির জন্য মিয়ানমার রাষ্ট্রকে ক্ষতিপূরণের দায় নিতে হবে এবং আন্তর্জাতিক তহবিলের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ভূমি, ঘরবাড়ি ও সম্পত্তি ফিরিয়ে দিতে হবে।

৭. বাংলাদেশের কক্সবাজারসহ যেসব জায়গায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প আছে সেগুলো বিদেশি এনজিওর একচ্ছত্র পরিচালনার বাইরে এনে বাংলাদেশের সরকার এবং জনগণকে তাদের এথনিক কিনকে মেহমান হিসেবে সেবার সুযোগ দেওয়া এবং রিফিউজি স্কিম যথাসম্ভব কমানো।

৮. বৈশ্বিক সংহতি ও মুক্তি আন্দোলনে সহযোগিতা করতে হবে। এজন্য বিশ্বের সকল মানবাধিকার সংগঠন, রাজনৈতিক দল ও মুক্তিকামী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আরাকান রাষ্ট্রের স্বাধীনতা আন্দোলনকে সমর্থন করতে হবে; যাতে রোহিঙ্গারা নিজেদের দেশে মর্যাদা ও নিরাপত্তার সঙ্গে বাঁচতে পারে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম