‘হিট স্ট্রোকে’ ঢাকার আদালত চত্বরে আইনজীবী, ছাতকে তিন রোগীর মৃত্যু
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে কয়েকদিন ধরে চলা দাবদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি তাপমাত্রায় মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই। আবার মাঝে মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। রাস্তায় চলতে গিয়ে মানুষ অসহনীয় পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার তীব্র গরমে (হিট স্ট্রোক) পুরান ঢাকার নিম্ন আদালত চত্বরে এক আইনজীবীর মৃত্যু হয়েছে। অসহ্য গরমে সিলেটের ছাতকে তিন রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মেট্রোবারের সামনে কালো কোট ও গাউন পরা অবস্থায় আইনজীবী সৈয়দ শফিউল ইসলাম আলাউদ্দিন মাথা ঘুরে পড়ে গেলে তার সহকর্মীরা মাথা ও মুখে পানি ছিটিয়ে দেন।
এরপর তাকে রিকশায় তুলে দ্রুত ঢাকা বারের ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকরা তাকে পাশের ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু সেখানে যাওয়ার আগে বেলা দেড়টার দিকে তরুণ আইনজীবী আলাউদ্দিনের মৃত্যু হয়। ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য আলাউদ্দিনের বাড়ি মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায়। ২০২১ সালে তিনি আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান মামুন জানান, চিকিৎসকরা বলেছেন আলাউদ্দিন হিট স্ট্রোকে মারা গেছেন। কালকিনিতে তার লাশ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছি। বিকাল ৪টার দিকে মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে তার জানাজা হয়।
আলাউদ্দিনকে ঢাকা বারের ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া আইনজীবী ওসমান গনি জানান, অনেক কষ্টে রিকশায় উঠিয়ে তাকে ঢাকা বারের ক্লিনিকে নিই। দেখে চিকিৎসক বলেন- তার ‘হিট স্ট্রোক’ হয়েছে। আমাদের গায়ে কোট ও গাউন দেখে একজন চিকিৎসক বলেন, ‘এ গরমেও আপনারা এমন পোশাক পরেন! সেখানে কিছুক্ষণ শ্রুশ্রূষার পর সেদিনের মামলা নিয়ে আলাউদ্দিন আমার সঙ্গে কথাও বলেন। এছাড়া তার ফাইল গাউন কোট সম্পর্কে জানতে চান। আমি বললাম, ‘সব আছে আপনি চিন্তা করবেন না।’ আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমি জামিন করিয়েছি, বেইল বন্ড জমা দেওয়া হয়নি।’ আমি বললাম, সমস্যা নেই, দিতে পারবেন। ওয়াশরুম থেকে ফেরার পর তার অবস্থা খারাপ হয়ে পড়ে। তখন তাকে পাশের ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তার আগেই তিনি মারা যান।
সাধারণ আইনজীবীরা জানান, তীব্র দাবদাহের মধ্যে কোট-গাউন পরার কারণে আইনজীবী আলাউদ্দিন অসুস্থ হয়ে পড়েন। আইনজীবীরা গ্রীষ্মকালীন ড্রেসকোড পরিবর্তনের জন্য বেশ কিছুদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এর মধ্যেই আইনজীবীর মৃত্যু হলো।
রাজশাহী পুড়ছে তীব্র দাবদাহে : রাজশাহী ব্যুরো জানায়, কয়েকদিন থেকে তাপমাত্রার পারদ আবারও ঊর্ধ্বমুখী। তীব্র রোদের মধ্যে রাস্তায় বের হলে গায়ে লাগছে ‘ঝলসানো তাপ’। নাভিশ্বাস উঠেছে জনজীবনে। আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। সর্বনিæ ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদ উঠেছিল ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। মঙ্গলবার দুপুর ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৭ এপ্রিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাজিব খান বলেন, দুই দিনের চেয়ে বৃহস্পতিবার তাপমাত্রার পারদ কিছুটা কম। তবে দুপুর ৩টার দিকে আর্দ্রতা ছিল ৪৭ শতাংশ। এ কারণে প্রচুর গরম অনুভব হচ্ছে। সঙ্গে ঘামও হচ্ছে।
ছাতকে তিন রোগীর মৃত্যু : ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, প্রচণ্ড গরমের কারণে ‘হিট স্ট্রোকে’ বুধবার সন্ধ্যায় কৈতক হাসপাতালে তিন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- ছাতক উপজেলার জাউয়াবাজার ইউনিয়নের সাদারাই গ্রামের শামসুল হকের ছেলে মনজুর রহমান (৪০), শান্তিগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের নূর আলমের স্ত্রী রাফিয়া বেগম (৬০) ও দোয়ারাবাজার উপজেলার পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের জলসী গ্রামের আজির উদ্দিন (৬৫)। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আইনুন্নাহার শান্তা।
স্থানীয়রা জানায়, বুধবার দুপুরে প্রচণ্ড রোদের মধ্যে কৃষি জমিতে কাজ করার সময় মনজুর ও আজির এবং ধান মাড়াই করার সময় রাফিয়া বেগম অসুস্থ হন। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের কৈতক হাসপাতালে তাদের নিয়ে আসা হয়। সন্ধ্যায় তারা মারা যান। এছাড়া স্কুলশিক্ষার্থী ও কৃষকসহ ১৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
‘হিট স্ট্রোকে’ ঢাকার আদালত চত্বরে আইনজীবী, ছাতকে তিন রোগীর মৃত্যু
যুগান্তর প্রতিবেদন
১১ মে ২০২৩, ২১:৫৯:৫৪ | অনলাইন সংস্করণ
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে কয়েকদিন ধরে চলা দাবদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি তাপমাত্রায় মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই। আবার মাঝে মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। রাস্তায় চলতে গিয়ে মানুষ অসহনীয় পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার তীব্র গরমে (হিট স্ট্রোক) পুরান ঢাকার নিম্ন আদালত চত্বরে এক আইনজীবীর মৃত্যু হয়েছে। অসহ্য গরমে সিলেটের ছাতকে তিন রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মেট্রোবারের সামনে কালো কোট ও গাউন পরা অবস্থায় আইনজীবী সৈয়দ শফিউল ইসলাম আলাউদ্দিন মাথা ঘুরে পড়ে গেলে তার সহকর্মীরা মাথা ও মুখে পানি ছিটিয়ে দেন।
এরপর তাকে রিকশায় তুলে দ্রুত ঢাকা বারের ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকরা তাকে পাশের ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু সেখানে যাওয়ার আগে বেলা দেড়টার দিকে তরুণ আইনজীবী আলাউদ্দিনের মৃত্যু হয়। ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য আলাউদ্দিনের বাড়ি মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায়। ২০২১ সালে তিনি আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান মামুন জানান, চিকিৎসকরা বলেছেন আলাউদ্দিন হিট স্ট্রোকে মারা গেছেন। কালকিনিতে তার লাশ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছি। বিকাল ৪টার দিকে মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে তার জানাজা হয়।
আলাউদ্দিনকে ঢাকা বারের ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া আইনজীবী ওসমান গনি জানান, অনেক কষ্টে রিকশায় উঠিয়ে তাকে ঢাকা বারের ক্লিনিকে নিই। দেখে চিকিৎসক বলেন- তার ‘হিট স্ট্রোক’ হয়েছে। আমাদের গায়ে কোট ও গাউন দেখে একজন চিকিৎসক বলেন, ‘এ গরমেও আপনারা এমন পোশাক পরেন! সেখানে কিছুক্ষণ শ্রুশ্রূষার পর সেদিনের মামলা নিয়ে আলাউদ্দিন আমার সঙ্গে কথাও বলেন। এছাড়া তার ফাইল গাউন কোট সম্পর্কে জানতে চান। আমি বললাম, ‘সব আছে আপনি চিন্তা করবেন না।’ আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমি জামিন করিয়েছি, বেইল বন্ড জমা দেওয়া হয়নি।’ আমি বললাম, সমস্যা নেই, দিতে পারবেন। ওয়াশরুম থেকে ফেরার পর তার অবস্থা খারাপ হয়ে পড়ে। তখন তাকে পাশের ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তার আগেই তিনি মারা যান।
সাধারণ আইনজীবীরা জানান, তীব্র দাবদাহের মধ্যে কোট-গাউন পরার কারণে আইনজীবী আলাউদ্দিন অসুস্থ হয়ে পড়েন। আইনজীবীরা গ্রীষ্মকালীন ড্রেসকোড পরিবর্তনের জন্য বেশ কিছুদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এর মধ্যেই আইনজীবীর মৃত্যু হলো।
রাজশাহী পুড়ছে তীব্র দাবদাহে : রাজশাহী ব্যুরো জানায়, কয়েকদিন থেকে তাপমাত্রার পারদ আবারও ঊর্ধ্বমুখী। তীব্র রোদের মধ্যে রাস্তায় বের হলে গায়ে লাগছে ‘ঝলসানো তাপ’। নাভিশ্বাস উঠেছে জনজীবনে। আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। সর্বনিæ ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদ উঠেছিল ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। মঙ্গলবার দুপুর ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৭ এপ্রিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাজিব খান বলেন, দুই দিনের চেয়ে বৃহস্পতিবার তাপমাত্রার পারদ কিছুটা কম। তবে দুপুর ৩টার দিকে আর্দ্রতা ছিল ৪৭ শতাংশ। এ কারণে প্রচুর গরম অনুভব হচ্ছে। সঙ্গে ঘামও হচ্ছে।
ছাতকে তিন রোগীর মৃত্যু : ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, প্রচণ্ড গরমের কারণে ‘হিট স্ট্রোকে’ বুধবার সন্ধ্যায় কৈতক হাসপাতালে তিন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- ছাতক উপজেলার জাউয়াবাজার ইউনিয়নের সাদারাই গ্রামের শামসুল হকের ছেলে মনজুর রহমান (৪০), শান্তিগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের নূর আলমের স্ত্রী রাফিয়া বেগম (৬০) ও দোয়ারাবাজার উপজেলার পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের জলসী গ্রামের আজির উদ্দিন (৬৫)। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আইনুন্নাহার শান্তা।
স্থানীয়রা জানায়, বুধবার দুপুরে প্রচণ্ড রোদের মধ্যে কৃষি জমিতে কাজ করার সময় মনজুর ও আজির এবং ধান মাড়াই করার সময় রাফিয়া বেগম অসুস্থ হন। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের কৈতক হাসপাতালে তাদের নিয়ে আসা হয়। সন্ধ্যায় তারা মারা যান। এছাড়া স্কুলশিক্ষার্থী ও কৃষকসহ ১৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023