jugantor
ছাত্রলীগের প্রতিপক্ষ ছাত্রলীগ
সংঘর্ষ, কোন্দলে নাকাল

  মুসতাক আহমদ  

২০ এপ্রিল ২০১৪, ০০:০০:০০  | 

আধিপত্য বিস্তার, পদ-পদবির লড়াইয়ে সহযোদ্ধার রক্তে রঞ্জিত ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীর হাত। একই মিছিলে হাতে হাত রেখে যারা মিছিল করেন, সেই হাতই আবার বন্ধুর প্রাণ সংহার করছেন। না হয় আজীবনের মতো পঙ্গু করে দেয়া হচ্ছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর নিয়মিত বিরতিতে ঘটছে এ ধরনের অঘটন। এসব স্থানে ছাত্রলীগই ছাত্রলীগের প্রতিপক্ষ। ফলে পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। গত দু’সপ্তাহে হামলা ও সংঘর্ষের মতো অন্তত ১৫টি ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন দু’জন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সারা দেশে ছাত্রলীগের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেছে ছাত্রলীগই।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিভিন্ন স্থানে গত তিন মাসে নিজেদের মধ্যে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী যে ক’বার সংঘর্ষে জড়িয়েছে, তার অধিকাংশ ক্ষেত্রের নেপথ্য কারণ হচ্ছে আধিপত্য বিস্তার ও পদ-পদবির লড়াই। অথচ বিগত জাতীয় নির্বাচনের আগে ছাত্রলীগের অবস্থা এমনটি ছিল না। অনেক নেতাকর্মী কমিটিতেই আসতে চাইত না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭১ সদস্যের হল কমিটি করার টার্গেট ছিল। কিন্তু সূর্যসেন, জহুরুল হক, এসএমসহ কয়েকটি হলে কমিটিতে পদ দেয়ার মতো কাউকে না পাওয়ায় সেখানে কমিটি হয়নি। আবার স্যার এএফ রহমান, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান, জসীমউদদীন ও মুহসীন হলে কমিটি গঠন করা হলেও তা পূর্ণাঙ্গ করা যায়নি। নির্বাচনের আগে দলীয় মিছিলে গড়ে ১৫-২০ জনের মতো উপস্থিতি ছিল। অথচ এখন সেখানে গণজোয়ার!

বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় কমিটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও এর বিভিন্ন হল শাখাসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক জেলা ও উপজেলা শাখা কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরুর আগে সংগঠনে নিজের অবস্থান প্রভাব প্রমাণ করার জন্য খুন, গুরুতর জখমের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে। এতেও কাজ না হলে কাক্সিক্ষত পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে অপহরণ না হয় খুন করানো হচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাদ হত্যা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রুস্তম হত্যা আর ঢাকা কলেজে ফারুক হত্যার মতো ঘটনার পেছনে এসব কারণ রয়েছে বলে জানা গেছে। এর বাইরে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা, ছিনতাই ও অপহরণসহ সার্বিক অপরাধ জগতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্যও অঘটনের পেছনে মদদ জোগাচ্ছেন ‘ছাত্রলীগ নামধারী কিছু নেতা।’ গোয়েন্দা সূত্রটি বিষয়গুলো নিশ্চিত করেছে। এসব ঘটনা উল্লেখ করে তারা সরকারের উচ্চপর্যায়ে বিস্তারিত প্রতিবেদনও পাঠিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এর বাইরে কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের একশ্রেণীর নেতা ছাত্রলীগকে ব্যবহার করছেন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষকরা পর্যন্ত ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীদের। আর এ কারণে ছাত্রলীগের ভেতরেও সৃষ্টি হচ্ছে নানা গ্রুপ ও উপগ্রুপ। এরাই ঘটাচ্ছে নানা ঘটনা।

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও মতাদর্শী শিক্ষকদের দ্বারা ব্যবহৃত হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি এএইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ। তিনি বলেন, ঢাকার বাইরে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতারা ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। তাদের কারণেই অনেক জায়গায় সংগঠনে সমস্যা আর জটিলতা জিইয়ে রয়েছে। যে কারণে সারা দেশে ছাত্রলীগের ওপর সমানভাবে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগের নামে বিভিন্ন স্থানে যতসব ঘটনার কথা জানা যায়, তার কোনোটির দায়ই সংগঠনের নয়। তিনি দৃষ্টান্ত হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার আবুজর গিফারি কলেজসহ কয়েকটি জেলা ও উপজেলা শাখার নাম উল্লেখ করে বলেন, ওইসব স্থানে শিক্ষা ও স্থানীয় প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। বরং কেন্দ্র থেকে তারা ফোন করে পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছেন।

শুরু ৫ জানুয়ারির পর : বিগত জাতীয় নির্বাচনের আগে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাত তেমন একটা ছিল না বললেই চলে। কিন্তু নির্বাচনের পর একশ্রেণীর নেতাকর্মী মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছেন। বিগত দু’সপ্তাহের রেকর্ড ঘেঁটে দেখা যায়, যে ক’টি ঘটনা ঘটেছে তার বেশির ভাগই নিজেদের মধ্যে। এর বাইরে শিক্ষকদের ওপর হামলা, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণসহ নানা অপকর্ম রয়েছে। সবচেয়ে বড় ন্যক্কারজনক ঘটনা ৩১ মার্চ রাতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। হল পর্যায়ের নেতা সাদ ইবনে মমতাজকে রড, হকিস্টিক, লাঠি, স্ট্যাম্প দিয়ে খুন করে তারই সহযোদ্ধা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। সংশ্লিষ্টরা জানান, পরীক্ষা পেছানোর উপলক্ষকে সামনে রেখে সাদকে শিক্ষা দিতে ওই ঘটনা ঘটানো হলেও এর পেছনে ছিল হলের কমিটির পদ দখলের লড়াই। ৪ এপ্রিল রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলে ছাত্রলীগেরই কয়েকজন নেতা খুন করে হল পর্যায়ের আরেক নেতা রুস্তমকে। এ খুনের নেপথ্য কারণ হচ্ছে হল পর্যায়ের কমিটিতে প্রতিদ্বন্দ্বী বা পথের কাঁটা দূর করা। আরেক আলোচিত ঘটনা হচ্ছে ২ ফেব্র“য়ারি নৈশকালীন কোর্স বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা। আন্দোলনটি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে হলেও তা দমাতে হামলা চালায় ছাত্রলীগ ও পুলিশ। এর আগে ৩০ নভেম্বর ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের দু’গ্র“পে সংঘর্ষকালে ছাত্রলীগের ফারুক নামে একজন নিহত হয়। ক্যাম্পাসের আশপাশে ছিনতাই-মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণকে সামনে রেখে সংঘর্ষকালে ঘটে ওই খুনের ঘটনা।

বিগত ১৫ দিনে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে বা প্রতিপক্ষের সঙ্গে আরও যেসব ঘটনা রয়েছে তার মধ্যে ঢাকা কলেজে দু’গ্র“পে ব্যাপক গোলাগুলি এবং শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম হলে ৮০টি ফাও দাবি ও দিতে অস্বীকৃতি করায় হল প্রভোস্ট ড. ইসমাইলকে অবরুদ্ধ ও লাঞ্ছিত অন্যতম। এছাড়া একই রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি ঘটনায় ছাত্রলীগ তিন ছাত্রকে পিটিয়ে জখম, ৩ এপ্রিল গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের ওপর ছাত্রলীগের একটি অংশের হামলা, ৬ এপ্রিল বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে নতুন কমিটির পদ দখলকে সামনে রেখে দু’গ্র“পের সংঘর্ষ হয়। ৭ এপ্রিল ঢাকার বারিধারার ডিওএইচএসে র‌্যাবের নির্যাতন কেন্দ্র আবিষ্কার ও সেখানে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার এক নেতাসহ ১২ জন আটক, ৮ এপ্রিল বরিশালে পলিটেকনিক শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করা, ১০ এপ্রিল সিলেটে রাগিব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজে ছাত্রদল নেতাকে কোপানো, ১১ এপ্রিল সূর্যসেন হলে ছাত্রলীগের দু’গ্র“পের তিন ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

ছাত্রলীগের বক্তব্য : সার্বিক ব্যাপারে জানতে চাইলে সংগঠনের সভাপতি এএইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, ছাত্রলীগ একটি বিশাল সংগঠন। বিভিন্ন ধর্ম, পরিবার ও সমাজ থেকে আসা শিক্ষার্থীরা সংগঠন করে থাকে। তাই বিভিন্ন সময়ে সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হতেই পারে। তবে কখনও সীমা লংঘনের পর্যায়ে যায় না। তিনি বলেন, সংগঠনের চেইন অব কমান্ড এবং সার্বিক শৃঙ্খলা অটুট রয়েছে। সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম বলেন, অন্যায়কারী ও সন্ত্রাসীদের ঠিকানা ছাত্রলীগ নয়। তাই কখনোই ছাত্রলীগের নামে কেউ অন্যায় করে পার পায়নি। বরং এমন অসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে, ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে অন্যায়-অনিয়ম করায় তাদের পুলিশে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ছাত্রলীগের নামে যে যেখানেই অপরাধ করুক না কেন, তার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেয়া হলে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে অন্যায়কারীর পক্ষে কোনো সুপারিশ করা হবে না।


 

সাবমিট

ছাত্রলীগের প্রতিপক্ষ ছাত্রলীগ

সংঘর্ষ, কোন্দলে নাকাল
 মুসতাক আহমদ 
২০ এপ্রিল ২০১৪, ১২:০০ এএম  | 

আধিপত্য বিস্তার, পদ-পদবির লড়াইয়ে সহযোদ্ধার রক্তে রঞ্জিত ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীর হাত। একই মিছিলে হাতে হাত রেখে যারা মিছিল করেন, সেই হাতই আবার বন্ধুর প্রাণ সংহার করছেন। না হয় আজীবনের মতো পঙ্গু করে দেয়া হচ্ছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর নিয়মিত বিরতিতে ঘটছে এ ধরনের অঘটন। এসব স্থানে ছাত্রলীগই ছাত্রলীগের প্রতিপক্ষ। ফলে পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। গত দু’সপ্তাহে হামলা ও সংঘর্ষের মতো অন্তত ১৫টি ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন দু’জন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সারা দেশে ছাত্রলীগের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেছে ছাত্রলীগই।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিভিন্ন স্থানে গত তিন মাসে নিজেদের মধ্যে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী যে ক’বার সংঘর্ষে জড়িয়েছে, তার অধিকাংশ ক্ষেত্রের নেপথ্য কারণ হচ্ছে আধিপত্য বিস্তার ও পদ-পদবির লড়াই। অথচ বিগত জাতীয় নির্বাচনের আগে ছাত্রলীগের অবস্থা এমনটি ছিল না। অনেক নেতাকর্মী কমিটিতেই আসতে চাইত না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭১ সদস্যের হল কমিটি করার টার্গেট ছিল। কিন্তু সূর্যসেন, জহুরুল হক, এসএমসহ কয়েকটি হলে কমিটিতে পদ দেয়ার মতো কাউকে না পাওয়ায় সেখানে কমিটি হয়নি। আবার স্যার এএফ রহমান, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান, জসীমউদদীন ও মুহসীন হলে কমিটি গঠন করা হলেও তা পূর্ণাঙ্গ করা যায়নি। নির্বাচনের আগে দলীয় মিছিলে গড়ে ১৫-২০ জনের মতো উপস্থিতি ছিল। অথচ এখন সেখানে গণজোয়ার!

বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় কমিটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও এর বিভিন্ন হল শাখাসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক জেলা ও উপজেলা শাখা কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরুর আগে সংগঠনে নিজের অবস্থান প্রভাব প্রমাণ করার জন্য খুন, গুরুতর জখমের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে। এতেও কাজ না হলে কাক্সিক্ষত পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে অপহরণ না হয় খুন করানো হচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাদ হত্যা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রুস্তম হত্যা আর ঢাকা কলেজে ফারুক হত্যার মতো ঘটনার পেছনে এসব কারণ রয়েছে বলে জানা গেছে। এর বাইরে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা, ছিনতাই ও অপহরণসহ সার্বিক অপরাধ জগতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্যও অঘটনের পেছনে মদদ জোগাচ্ছেন ‘ছাত্রলীগ নামধারী কিছু নেতা।’ গোয়েন্দা সূত্রটি বিষয়গুলো নিশ্চিত করেছে। এসব ঘটনা উল্লেখ করে তারা সরকারের উচ্চপর্যায়ে বিস্তারিত প্রতিবেদনও পাঠিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এর বাইরে কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের একশ্রেণীর নেতা ছাত্রলীগকে ব্যবহার করছেন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষকরা পর্যন্ত ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীদের। আর এ কারণে ছাত্রলীগের ভেতরেও সৃষ্টি হচ্ছে নানা গ্রুপ ও উপগ্রুপ। এরাই ঘটাচ্ছে নানা ঘটনা।

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও মতাদর্শী শিক্ষকদের দ্বারা ব্যবহৃত হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি এএইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ। তিনি বলেন, ঢাকার বাইরে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতারা ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। তাদের কারণেই অনেক জায়গায় সংগঠনে সমস্যা আর জটিলতা জিইয়ে রয়েছে। যে কারণে সারা দেশে ছাত্রলীগের ওপর সমানভাবে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগের নামে বিভিন্ন স্থানে যতসব ঘটনার কথা জানা যায়, তার কোনোটির দায়ই সংগঠনের নয়। তিনি দৃষ্টান্ত হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার আবুজর গিফারি কলেজসহ কয়েকটি জেলা ও উপজেলা শাখার নাম উল্লেখ করে বলেন, ওইসব স্থানে শিক্ষা ও স্থানীয় প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। বরং কেন্দ্র থেকে তারা ফোন করে পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছেন।

শুরু ৫ জানুয়ারির পর : বিগত জাতীয় নির্বাচনের আগে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাত তেমন একটা ছিল না বললেই চলে। কিন্তু নির্বাচনের পর একশ্রেণীর নেতাকর্মী মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছেন। বিগত দু’সপ্তাহের রেকর্ড ঘেঁটে দেখা যায়, যে ক’টি ঘটনা ঘটেছে তার বেশির ভাগই নিজেদের মধ্যে। এর বাইরে শিক্ষকদের ওপর হামলা, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণসহ নানা অপকর্ম রয়েছে। সবচেয়ে বড় ন্যক্কারজনক ঘটনা ৩১ মার্চ রাতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। হল পর্যায়ের নেতা সাদ ইবনে মমতাজকে রড, হকিস্টিক, লাঠি, স্ট্যাম্প দিয়ে খুন করে তারই সহযোদ্ধা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। সংশ্লিষ্টরা জানান, পরীক্ষা পেছানোর উপলক্ষকে সামনে রেখে সাদকে শিক্ষা দিতে ওই ঘটনা ঘটানো হলেও এর পেছনে ছিল হলের কমিটির পদ দখলের লড়াই। ৪ এপ্রিল রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলে ছাত্রলীগেরই কয়েকজন নেতা খুন করে হল পর্যায়ের আরেক নেতা রুস্তমকে। এ খুনের নেপথ্য কারণ হচ্ছে হল পর্যায়ের কমিটিতে প্রতিদ্বন্দ্বী বা পথের কাঁটা দূর করা। আরেক আলোচিত ঘটনা হচ্ছে ২ ফেব্র“য়ারি নৈশকালীন কোর্স বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা। আন্দোলনটি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে হলেও তা দমাতে হামলা চালায় ছাত্রলীগ ও পুলিশ। এর আগে ৩০ নভেম্বর ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের দু’গ্র“পে সংঘর্ষকালে ছাত্রলীগের ফারুক নামে একজন নিহত হয়। ক্যাম্পাসের আশপাশে ছিনতাই-মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণকে সামনে রেখে সংঘর্ষকালে ঘটে ওই খুনের ঘটনা।

বিগত ১৫ দিনে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে বা প্রতিপক্ষের সঙ্গে আরও যেসব ঘটনা রয়েছে তার মধ্যে ঢাকা কলেজে দু’গ্র“পে ব্যাপক গোলাগুলি এবং শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম হলে ৮০টি ফাও দাবি ও দিতে অস্বীকৃতি করায় হল প্রভোস্ট ড. ইসমাইলকে অবরুদ্ধ ও লাঞ্ছিত অন্যতম। এছাড়া একই রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি ঘটনায় ছাত্রলীগ তিন ছাত্রকে পিটিয়ে জখম, ৩ এপ্রিল গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের ওপর ছাত্রলীগের একটি অংশের হামলা, ৬ এপ্রিল বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে নতুন কমিটির পদ দখলকে সামনে রেখে দু’গ্র“পের সংঘর্ষ হয়। ৭ এপ্রিল ঢাকার বারিধারার ডিওএইচএসে র‌্যাবের নির্যাতন কেন্দ্র আবিষ্কার ও সেখানে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার এক নেতাসহ ১২ জন আটক, ৮ এপ্রিল বরিশালে পলিটেকনিক শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করা, ১০ এপ্রিল সিলেটে রাগিব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজে ছাত্রদল নেতাকে কোপানো, ১১ এপ্রিল সূর্যসেন হলে ছাত্রলীগের দু’গ্র“পের তিন ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

ছাত্রলীগের বক্তব্য : সার্বিক ব্যাপারে জানতে চাইলে সংগঠনের সভাপতি এএইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, ছাত্রলীগ একটি বিশাল সংগঠন। বিভিন্ন ধর্ম, পরিবার ও সমাজ থেকে আসা শিক্ষার্থীরা সংগঠন করে থাকে। তাই বিভিন্ন সময়ে সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হতেই পারে। তবে কখনও সীমা লংঘনের পর্যায়ে যায় না। তিনি বলেন, সংগঠনের চেইন অব কমান্ড এবং সার্বিক শৃঙ্খলা অটুট রয়েছে। সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম বলেন, অন্যায়কারী ও সন্ত্রাসীদের ঠিকানা ছাত্রলীগ নয়। তাই কখনোই ছাত্রলীগের নামে কেউ অন্যায় করে পার পায়নি। বরং এমন অসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে, ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে অন্যায়-অনিয়ম করায় তাদের পুলিশে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ছাত্রলীগের নামে যে যেখানেই অপরাধ করুক না কেন, তার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেয়া হলে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে অন্যায়কারীর পক্ষে কোনো সুপারিশ করা হবে না।


 

 
শনি
রোব
সোম
মঙ্গল
বুধ
বৃহ
শুক্র