jugantor
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়-
নবাগত কর্মীদের অপকর্মে ইমেজ সংকটে ছাত্রলীগ

  রাজশাহী ব্যুরো  

২০ আগস্ট ২০১৪, ০০:০০:০০  | 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবু খায়ের মোস্তফা ওরফে রিনেট। বর্তমানে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের প্রতাপশালী কর্মী হিসেবে জাহির করে সুবিধা আদায়ে তার জুড়ি নেই। এই নবাগত ছাত্রলীগ কর্মী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় এক বছর ধরে নানা কুকর্ম করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ রকম বেশ কয়েক নেতাকর্মীর কুকর্মে বর্তমান ছাত্রলীগের মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি চরম বেকায়দায় পড়েছে বলে জানা গেছে।

সূত্র মতে, গত বছর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুরে ছাত্রদলের নবাগত কর্মীদের নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতাদের হাত থেকে ফুল নিয়ে ছাত্রদলে যোগ দিয়েছিলেন রিনেট। ওই সময় তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব ও রাজশাহী মহানগর সভাপতি মিজানুর রহমান মিনুর হাত ধরে ছাত্রদলে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন। কিছুদিন না যেতে ডিগবাজি দিয়ে চলে যান ছাত্রলীগে। বর্তমানে ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে মরিয়া রিনেট ক্যাম্পাসে একের পর এক কুকর্ম করে নেতাদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টায় ব্যস্ত। সবশেষ ১৪ আগস্ট এই দুই কর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বরে দুই ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করেন। এতে ইফতি শাহরিয়ার নামের এক শিক্ষার্থী তাদের বাধা দিলে তাকে মারধর করা হয়। ওইদিন বিকালেই পুলিশ তাকে ও ছাত্রদল থেকে আসা আরেক কর্মী হীরককে আটক করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে চার রাউন্ড গুলিসহ একটি বিদেশী পিস্তল উদ্ধার করা হয়।

পরে কাজলা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নুরুল কবির বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে একটি অস্ত্র মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় শুক্রবার তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ রিনেট ও আজিজুল ইসলামকে বহিষ্কারের সুপারিশ করে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর আগে ১৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মখদুম হলে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানের কথা বলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করেন এই রিনেট। ২৮ এপ্রিল ছাত্রলীগের প্রভাব খাটিয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ইমরান হাওলাদার নামের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেন তিনিসহ ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী। পরে হুমকি-ধমকি দিয়ে তাকে হল থেকে বিতাড়িতও করা হয়।

এছাড়াও এবারের ঈদুল ফিতরে ক্যাম্পাস ছুটির আগে শাহ মখদুম হলের চারজন শিক্ষার্থীকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে নিয়ে গিয়ে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেন তিনি। পরে বিষয়টি ছাত্রলীগ সভাপতিকে জানানো হলে তিনি চাঁদা আদায় বন্ধ করেন। এর আগে ১৬ জুন শিবির নেতা রাসেল আলমের পা গোড়ালি থেকে বিচ্ছিন্ন করার ঘটনায় ২৫ জুলাই আদালতে করা মামলায় তিনি নথিভুক্ত আসামি।

এ ঘটনার পর ছাত্রদলের সাবেক ওই কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি মিজানুর রহমান রানা নিরাপত্তার কারণে শাহ মখদুম হল থেকে অবৈধভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে নিজের সঙ্গে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। যদিও তিনি বঙ্গবন্ধু হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নন।

ঠিক একইভাবে ছাত্রলীগে এসে সংগঠনের শৃঙ্খলা নষ্ট করছেন এমন আরেক কর্মী হীরক। অস্ত্রবাজি মামলায় বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছেন তিনি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগ পর্যন্ত তিনি সক্রিয়ভাবে ছাত্রদলের রাজনীতি করতেন বলে জানা গেছে। নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ আবার সরকার গঠন করলে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে এ সংগঠনে রাজনীতি শুরু করে। তাদের হাত ধরেই চলে আসেন শেরেবাংলা ফজলুল হক হলে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানা কর্মী হয়ে ছাত্রলীগে জায়গা করে নেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে হলে ও ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নাম করে বিভিন্ন অপকর্ম শুরু করেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাবি ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারী এ রকম প্রায় ১০-১২ জন ছাত্রদল কর্মী ছাত্রলীগে নিজেদের অবস্থান পাকা করতে ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর থেকে শুরু করে নানা কুকর্ম করে আসছেন। ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ প্রভাবশালী নেতাদের আশ্রয়ে থাকায় পুলিশ প্রশাসনও তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হওয়ায় এসব ছাত্রদল কর্মী ছাত্রলীগে যোগ দেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানা যুগান্তরকে বলেন, তাদের ছাত্রদলের পরিচয় আমরা প্রথমে জানতে পারিনি। পরে বিষয়টি খতিয়ে দেখে তাদের সংগঠন থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে।



সাবমিট
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়-

নবাগত কর্মীদের অপকর্মে ইমেজ সংকটে ছাত্রলীগ

 রাজশাহী ব্যুরো 
২০ আগস্ট ২০১৪, ১২:০০ এএম  | 
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবু খায়ের মোস্তফা ওরফে রিনেট। বর্তমানে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের প্রতাপশালী কর্মী হিসেবে জাহির করে সুবিধা আদায়ে তার জুড়ি নেই। এই নবাগত ছাত্রলীগ কর্মী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় এক বছর ধরে নানা কুকর্ম করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ রকম বেশ কয়েক নেতাকর্মীর কুকর্মে বর্তমান ছাত্রলীগের মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি চরম বেকায়দায় পড়েছে বলে জানা গেছে।

সূত্র মতে, গত বছর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুরে ছাত্রদলের নবাগত কর্মীদের নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতাদের হাত থেকে ফুল নিয়ে ছাত্রদলে যোগ দিয়েছিলেন রিনেট। ওই সময় তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব ও রাজশাহী মহানগর সভাপতি মিজানুর রহমান মিনুর হাত ধরে ছাত্রদলে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন। কিছুদিন না যেতে ডিগবাজি দিয়ে চলে যান ছাত্রলীগে। বর্তমানে ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে মরিয়া রিনেট ক্যাম্পাসে একের পর এক কুকর্ম করে নেতাদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টায় ব্যস্ত। সবশেষ ১৪ আগস্ট এই দুই কর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বরে দুই ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করেন। এতে ইফতি শাহরিয়ার নামের এক শিক্ষার্থী তাদের বাধা দিলে তাকে মারধর করা হয়। ওইদিন বিকালেই পুলিশ তাকে ও ছাত্রদল থেকে আসা আরেক কর্মী হীরককে আটক করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে চার রাউন্ড গুলিসহ একটি বিদেশী পিস্তল উদ্ধার করা হয়।

পরে কাজলা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নুরুল কবির বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে একটি অস্ত্র মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় শুক্রবার তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ রিনেট ও আজিজুল ইসলামকে বহিষ্কারের সুপারিশ করে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর আগে ১৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মখদুম হলে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানের কথা বলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করেন এই রিনেট। ২৮ এপ্রিল ছাত্রলীগের প্রভাব খাটিয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ইমরান হাওলাদার নামের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেন তিনিসহ ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী। পরে হুমকি-ধমকি দিয়ে তাকে হল থেকে বিতাড়িতও করা হয়।

এছাড়াও এবারের ঈদুল ফিতরে ক্যাম্পাস ছুটির আগে শাহ মখদুম হলের চারজন শিক্ষার্থীকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে নিয়ে গিয়ে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেন তিনি। পরে বিষয়টি ছাত্রলীগ সভাপতিকে জানানো হলে তিনি চাঁদা আদায় বন্ধ করেন। এর আগে ১৬ জুন শিবির নেতা রাসেল আলমের পা গোড়ালি থেকে বিচ্ছিন্ন করার ঘটনায় ২৫ জুলাই আদালতে করা মামলায় তিনি নথিভুক্ত আসামি।

এ ঘটনার পর ছাত্রদলের সাবেক ওই কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি মিজানুর রহমান রানা নিরাপত্তার কারণে শাহ মখদুম হল থেকে অবৈধভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে নিজের সঙ্গে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। যদিও তিনি বঙ্গবন্ধু হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নন।

ঠিক একইভাবে ছাত্রলীগে এসে সংগঠনের শৃঙ্খলা নষ্ট করছেন এমন আরেক কর্মী হীরক। অস্ত্রবাজি মামলায় বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছেন তিনি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগ পর্যন্ত তিনি সক্রিয়ভাবে ছাত্রদলের রাজনীতি করতেন বলে জানা গেছে। নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ আবার সরকার গঠন করলে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে এ সংগঠনে রাজনীতি শুরু করে। তাদের হাত ধরেই চলে আসেন শেরেবাংলা ফজলুল হক হলে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানা কর্মী হয়ে ছাত্রলীগে জায়গা করে নেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে হলে ও ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নাম করে বিভিন্ন অপকর্ম শুরু করেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাবি ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারী এ রকম প্রায় ১০-১২ জন ছাত্রদল কর্মী ছাত্রলীগে নিজেদের অবস্থান পাকা করতে ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর থেকে শুরু করে নানা কুকর্ম করে আসছেন। ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ প্রভাবশালী নেতাদের আশ্রয়ে থাকায় পুলিশ প্রশাসনও তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হওয়ায় এসব ছাত্রদল কর্মী ছাত্রলীগে যোগ দেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানা যুগান্তরকে বলেন, তাদের ছাত্রদলের পরিচয় আমরা প্রথমে জানতে পারিনি। পরে বিষয়টি খতিয়ে দেখে তাদের সংগঠন থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে।



 
শনি
রোব
সোম
মঙ্গল
বুধ
বৃহ
শুক্র